পাথিরানা ও তুশারার মধ্যে যে ‘অমিল’ ধ্বংস করে দিল বাংলাদেশকে
মাথিশা পাথিরানা তো লাসিথ মালিঙ্গাকে মনে করিয়েই দেন। নুয়ান তুশারাও তো। তাহলে কে বেবি মালিঙ্গা? এই নামে তো আসলে বিশ্ব ক্রিকেটে এতটাই পরিচিতি পেয়ে গেছেন একজন, নামটা বললেই পাথিরানার কথা মনে পড়বে। তবে তুশারা যখন বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক নিলেন, ‘বড় মালিঙ্গা’ তার ফেসবুকে একটা পোষ্ট দিলেন, যেখানে লেখা ‘ওয়েল ডান পোডি’। পোডি মানে বোঝায় ছোট!
‘পোডি মালিঙ্গা’, ছোট মালিঙ্গা নামে নামডাক হয়েছে কিছুটা তুশারার। দুজনেই কিংবদন্তি লাসিথ মালিঙ্গার শিষ্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল অবশ্য তুশারারই আগে। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে একজনের, আরেকজনের আগষ্টে। আইপিএলে গিয়ে এরপর যে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করেছিলেন পাথিরানা, ‘বেবি মালিঙ্গা’ নামটা তারই হয়ে গেল। দুজনের মাঝে মিলের অভাব নেই যদিও!
টিভির পর্দায় তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে দুজনের অ্যাকশনের ছবি দেখিয়েছিল, স্লিঙ্গি অ্যাকশনে দুজনের রিলিজ পয়েন্ট হুবুহুই! ছবিটাকে প্রতীকী অর্থেও চাইলে ধরা যায়। একজনের ছায়ায় আরেকজন। তুশারা যেমন এই ম্যাচেই সুযোগ পেলেন পাথিরানা ইনজুরিতে পড়ায়। এরপর যেভাবে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস নামালেন, মনে হলো নাজমুল হোসেন শান্তরা যেন এমন বোলিং কখনোই খেলেননি! শান্তর পর তাওহিদ হৃদয়, এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার- সকলের চোখেমুখে অবিশ্বাস, হলো কী!
সুইং পাওয়া চারটি ডেলিভারিতে চারজনকেই বিদায় করে দিয়েছিলেন তুশারা। এখানেই তুশারার সঙ্গে পাথিরানার পার্থক্য। একে তো এত নিচু উচ্চতা থেকে বল ছুড়েন দুজনে, আম্পায়ারের সামনে থেকেই আবার, সে কারণে তো তারা এমনিতেই চ্যালেঞ্জিং। সেই সাথে যদি সুইং মিশিয়ে দেন, তাহলে? ‘বড় মালিঙ্গা’ যেমন ছিলেন, দুর্বোধ্য হয়ে তারা ধরা দেন তখন।
পাথিরানা পুরোনো বলে কার্যকর। নতুন বলের সুইং এখনও রপ্ত করে উঠতে পারেননি। চেন্নাই সুপার কিংসে মহেন্দ্র সিং ধোনি তাকে আলাদাভাবে ইনিংসের দ্বিতীয় অর্ধের জন্য রেখে দিতেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও যত ওভার বোলিং করেছেন, তার মধ্যে মাত্র দশ ভাগই তাকে করানো হয়েছে পাওয়ারপ্লেতে। দুই ওভার করে তাতেই রান দিয়েছেন ৩২।
সুইং বোলিং আয়ত্ত করতেই হবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সময় নতুন বলে বোলিং করা লাগবেই- এক সাক্ষাৎকারে পাথিরানাকে নিয়ে মালিঙ্গা বলেছিলেন। তা নিয়ে পাথিরানার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে বলেও পরে জানিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার কোচ ক্রিস সিলভারউড। তবে মালিঙ্গার আরেক শিষ্য তুশারা সেখানেই বাজিমাত করে বাংলাদেশের জন্য দুর্বোধ্যই ঠেকলেন তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাকে অর্ধেকের বেশি ওভারই করানো হয়েছে পাওয়ারপ্লেতেই।
শনিবার বাংলাদেশেরও কবর খুড়ে দিলেন পাওয়ারপ্লের দুই ওভারে দুই রানে চার উইকেট নিয়ে। চারটি উইকেটই একই উপায়ে। লেট সুইংয়ে বল গিয়েছে একই দিকে। বাঁহাতি হলে ভেতরে, ডানহাতি হলে বাইরে, এই যা! শান্ত, হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য- কেউ যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না!
এর আগের দুই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সামনে অবশ্য পাথিরানাকে দুর্বোধ্য মনে হয়নি।। ২৮ গড় ও প্রায় ১১ ইকোনমিতে ৩ উইকেটের বেশি নিতে পারেননি। ওয়ানডেতে যদিও পাথিরানার বলে দুই ম্যাচেই ৭ উইকেট খুইয়েছিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই ম্যাচে নামার আগে তুশারার গড় ছিল ৩২ এর বেশি, ইকোনমিও ছিল দশের কাছাকাছি। এদিন পাথিরানার মতোই একই অ্যাকশনের তুশারার সামনে তাহলে জবাবহীন হয়ে গেলেন কীভাবে শান্তরা?
ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে শান্ত জানিয়েছেন সেই সুইংয়ের কথাই, ‘ওর অ্যাকশনটা একটু ভিন্ন অবশ্যই, আমরা এরকম অ্যাকশন খুব বেশি যে খেলি তা না। আগের দুই ম্যাচে পাথিরানাকে খেলেছিলাম, ভালোই সামলেছিলাম। আমার মনে হয় শুরুর দিকে ওই অ্যাকশনের সাথে বল সুইংও করছিল, তো একটু কঠিন ছিল।’
যেভাবে তারা দিশেহারা হয়ে আউট হচ্ছিলেন, কারো মনে প্রশ্ন এসেই যেতে পারে, তুশারা যে এভাবে স্লিঙ্গি অ্যাকশনে বোলিং করেন, জানাই কি ছিল না বাংলাদেশের? শান্ত অবশ্য জানিয়েছেন প্রস্তুতি ছিল তাদের, ‘সবাই জানতাম যে ওর খেলার সম্ভাবনা আছে। আমরা তার বোলিং, ভিডিও বলেন, সবকিছু সম্পর্কেই অবগত ছিলাম।’
সিলেটে শিষ্যর সাফল্য দেখে মালিঙ্গাও আনন্দে ভাসিয়েছেন নিজেকে। এমন আনন্দে আরও ভাসাবেন তার শিষ্য নিকট ভবিষ্যতে, সে আশা করবেন তিনি। তার ‘পোডি’র যে সুযোগ মিলেছে আইপিএলে! মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাকে কিনেছে ৪.৮ কোটি রুপিতে। ২০২৪ আইপিএল থেকেই মুম্বাইয়ে বোলিং কোচ হিসেবে যুক্ত হয়েছেন মালিঙ্গা, এই ক্রয়ে তার ভূমিকার কথা ধারণা করাই যায় তাই। মুম্বাইয়ের ফ্র্যাঞ্চাইজি দুনিয়ায় অবশ্য ডানহাতি তুশারা ঢুকে পড়েছেন ইতোমধ্যেই। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার লিগ এসএ টোয়েন্টিতে এমআই ক্যাপটাউনের হয়ে খেলেছেন তুশারা।
আইপিএলের আগামী আসরে পাথিরানার সঙ্গে যখন যোগ দিবেন তিনি, কার নামটা বেশি উচ্চারিত হবে তখন? বেবি মালিঙ্গা নাকি পোডি মালিঙ্গা! যা-ই হোক না কেন, হাসি থাকবে ‘বড় মালিঙ্গা’র মুখেই। এত মিল, নিজের ছায়া তো তিনি দেখতে পান তাদের দুজনের মাঝেই। তবে পাথিরানা ও তুশারা- দক্ষতার হিসেবে দুজনের মধ্যে এ পর্যন্ত যে ‘অমিল’, সেটিতেই ধ্বংস হয়ে গেল বাংলাদেশ।