'সুপার' শান্ততে জয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের
১ম ওয়ানডে, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা (টস-বাংলাদেশ/বোলিং)
শ্রীলঙ্কা - ২৫৫, ৪৮.৫ ওভার (লিয়ানাগে ৬৭, মেন্ডিস ৫৯, নিসাঙ্কা ৩৬, সাকিব ৩/৪৪, শরিফুল ৩/৫১, তাসকিন ৩/৬০)
বাংলাদেশ - ২৫৭/৪, ৪৪.৪ ওভার (শান্ত ১২২*, মুশফিক ৭৩*, মাহমুদউল্লাহ ৩৭, মাদুশাঙ্কা ২/৪৪, কুমারা ১/৩৫)
ফলাফল - বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
নাজমুল হাসান শান্ত সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দেখালেন, অধিনায়ক হিসেবে তিনি যোগ্য। লক্ষ্য সীমার মধ্যে হলেও শুরুতেই বাংলাদেশ খেই হারিয়ে বসলেও দলের হাল ধরে দারুণ এক সেঞ্চুরিতে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়লেন শান্ত। তবে কৃতিত্বটা হয়ত তিনি বিলিয়ে দিবেন পুরো দলের মাঝেই। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত প্রচেষ্টার জন্য যেই আহবান জানিয়েছিলেন, সেটার পর দল আজ তাকে সেই দিকটাই হতাশ করেনি একেবারেই।
২৫৬ রানের লক্ষ্য একদম প্রথম বলেই দিলশান মাদুশাঙ্কার বল স্টাম্পে ডেকে ফিরেছিলেন লিটন দাস। দেখতে না দেখতে প্রথম পাওয়ারপ্লেতেই ঘোর বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা। ২৩ রানের মধ্যেই মাদুশান-মাদুশাঙ্কা জুটি ফেরান সৌম্য, হৃদয়কে। সেই বিপদের মাঝে মাহমুদউল্লাহ এসেই প্রতি-আক্রমণ শুরু করেন। বলা যায়, তিনিই এসে পরিস্থিতি অনুকূলে নিয়ে এসে শ্রীলঙ্কার পেসারদের চেপে বসতে দেননি। শান্তর কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে আসে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের স্ট্রোকপ্লেতে। দুজনের ৬২ বলে ৬৯ রানের জুটি ভাঙে লাহিড়ু কুমারার আঘাতে। তবে বল প্রতি ৩৭ রানের ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ রাস্তাটা দেখালে সেই রাস্তায় হাঁটতে ভুল করেননি শান্ত। সেই সাথে তার সাথে যোগ দিয়ে দারুণ সঙ্গ দেন মুশফিক।
প্রায় শত স্ট্রাইক রেটে শান্ত ফিফটি পেয়ে গেলে শ্রীলঙ্কা ধীরে ধীরে খেই হারাতে শুরু করে। শিশিরের কারণে তাদের বল গ্রিপ করতে অসুবিধা হওয়ায় সেটা পূর্ণ সুযোগ নেন এই দুজন। মাঝে একবার শান্তর বিপক্ষে এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদন হলেও লেগ স্টাম্পের বাইরে হওয়ায় সেবার সাড়া দেননি আম্পায়ার। অন্য দিকে মুশফিক নিজের ৪৯তম ওয়ানডে ফিফটি পেয়ে গেল শান্তও সেঞ্চুরি পেতে ভুল করেননি। কুমারাকে দারুণ এক কাট শুটে চার মেরে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর শান্তর শুধু বাকি ছিল জয়টা বের করে আনা। রান তাড়ায় ১৬৫* রানের এক দারুণ জুটি গড়ে সেটাই করেছেন তিনি ও মুশফিক। সেই সাথে ১২২ রানে অপরাজিত থেকে শান্ত গড়েছেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশ অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড।
এর আগে বল হাতেও বাংলাদেশ কাটিয়েছে সফল এক দিন। পেসারদের দাপটে শ্রীলঙ্কান ব্যাটারদের ম্যাচের কোনও অবস্থাতেই লাগাম ছাড়া হতে দেননি তারা। শুরুতেই দায়িত্বটা বুঝে নিয়েছিলেন তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব। তাসকিন-শরিফুলদের ওপর চড়াও হয়ে নিসাঙ্কা-ফার্নান্দো জুটি দারুণ শুরু করলেও প্রথম পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে এসে ৭১ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব। লেংথ বলে উইকেটের পেছনের ফাঁদে পড়ে ফার্নান্দো ৩৩ রানে ফিরলে এক ওভার পরেই টেনে মারতে গিয়ে অদ্ভুত কায়দায় শর্ট থার্ড ম্যানে থাকা সৌম্যকে ক্যাচ দিয়ে থামেন ২৮ বলে ৩৬ রানে ছুটতে থাকা নিসাঙ্কা। সাকিবের দুর্দান্ত প্রথম স্পেলের তৃতীয় শিকার হয়ে সামারাভিক্রমা এরপর ফিরলেও আরেক অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস ঠিকই সেই বিপদ সামাল দেন।
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে দারুণ এক ইনিংসে ম্যাচ জেতানোর পর আজও বাংলাদেশের মুঠো থেকে ম্যাচ বের করে নেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তবে ৫৯ রানে তাসকিনের শিকার হয়ে তিনি থামলে শ্রীলঙ্কার ইনিংস আর গতি খুঁজে পায়নি। এক প্রান্ত আগলে জানিথ লিয়ানাগে একাই বলতে গেলে শ্রীলঙ্কার ইনিংস টেনে নিয়ে গিয়েছেন দারুণ এক ফিফটিতে। তবে মাঝে অসামান্য এক স্পেলে মেহেদী হাসান মিরাজ যে বাঁধা সৃষ্টি করেছিলেন, সেটা আর দলগতভাবে কাটিয়ে উঠতে পারেনি লঙ্কানরা। এরপর তাই তাসকিন, শরিফুলরা নিজেদের খুঁজে পেলে ৬৯ বলে লিয়ানাগের ৬৭ রানের ইনিংস সত্ত্বেও ৪১তম ওভারে ২২১ রান তুলে ফেলা সত্ত্বেও ২৫৫ রানে থামতে হয়েছিল লঙ্কানদের। দিন শেষে ওই কয়েক ওভারের চাপটাও দুই দলের মাঝে ব্যবধান গড়ে দিতে সাহায্য করেছে স্বাগতিকদের।