২২ গজের সেলুলয়েড : বাংলাওয়াশ

ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে!
মিরপুর দেখলো আরেকটি বাংলাওয়াশ। তারই কিছু ছবি-
হ-য-ব-র-ল
সাঈদ আজমল, মোহাম্মদ হাফিজ, উমর গুল, জুনাইদ খান। পাকিস্তান দলের একসময়ের নিয়মিত এ সদস্যদের কেউই বিশ্বকাপে খেলেননি। বাংলাদেশের সঙ্গে সিরিজে ডাক পেলেন আজমল ও হাফিজ। গুল শুধু টি-টোয়েন্টিতে, জুনাইদ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে। তবে বাংলাদেশে আসার আগেই চোটের ভূত চেপে বসলো পাকিস্তানের কাঁধে, শোহাইব মাকসুদের চোটে টি-টোয়েন্টির সঙ্গে ওয়ানডেতেও ডাক পেলেন সাদ নাসিম। সোহেল খানের বদলি হিসেবে নেওয়া হলো জুনাইদকে। উমর গুল শেষ ওয়ানডেতে খেললেন এহসান আদিলের জায়গায়, আদিল আবার আগের দুই ওয়ানডের একটিতেও খেলেননি। আর ইয়াসির শাহের চোটে টেস্ট দল থেকে জুলফিকার বাবরকে ভেড়ানো হলো ওয়ানডেতে।
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাই খেললেন। এক সিরিজে অভিষেক হলো নাসিম, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সামি আসলামের। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না পাকিস্তানের! ‘স্টকে’ থাকা সেরা বোলাররাই খেললেন। কিন্তু তিন ম্যাচে নিতে পারলেন সাকল্যে ১১ উইকেট! পাকিস্তানও পেলো প্রথম ‘বাংলাওয়াশ’ এর স্বাদ!
আজ দুজনার
আজহার আলী এই ম্যাচের আগে ওয়ানডে খেলেছিলেন ১৬টি। ফিফটি ছিল ৫টি। সৌম্য সরকারের ৯ ম্যাচে ফিফটি ছিল একটিই। তবে সেঞ্চুরি ছিলনা দুজনের কারোরই। একই ম্যাচে অভিষেক সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন দুজন। তবে আজহারের সেঞ্চুরি নিশ্চয়ই বিস্বাদ করে দিয়েছে সৌম্যের সেঞ্চুরিটি!
হরিষে বিষাদ
২০১০ সাল। এই পাঁচ বছরে কতকিছু ঘটেছে। তবে একটি জিনিস অপরিবর্তিত ছিল। পাকিস্তানের নিয়মিত কোনো অধিনায়কের ওয়ানডে সেঞ্চুরি না থাকা। থাকবে কী করে! মিসবাহ উল হক যে সে আক্ষেপকে সঙ্গী করেই বিদায় জানিয়েছেন ওয়ানডেকে! আজহার আলী অবশেষে গেরো খুললেন। পাকিস্তানের ‘ওয়ানডে অধিনায়ক হইয়াও সেঞ্চুরি করিলেন’! তবে প্রথম সিরিজেই ‘হোয়াইটওয়াশ’ হওয়ার স্বাদও পেলেন।
তাসকিন বেচারা!
গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের পেস আক্রমণের গুরুত্বপূর্ন সদস্য তিনি। মাশরাফির অনেক বড় এক ভরসার নামও। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোলিং করতে এলেন। প্রথম বলটাই করলেন অফ-স্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে। ওয়াইড। শুরুটা ভাল হলো না। প্রথম ওভারে দিলেন ৯ রান। চতুর্থ ওভারে আবার এলেন। তিনটি চার ও এক ওয়াইডে দিলেন ১৩ রান। তাসকিনের বোলিং অধ্যায় তৃতীয় ওয়ানডের জন্য সেখানেই শেষ। মাশরাফি যে আর বোলিংয়েই আনলেন না তাঁকে।
খারাপ দিন যেতেই পারে ক্রিকেটে। তবে বাংলাওয়াশের আনন্দে নিশ্চয়ই এই দিনটাও মধুর ঠেকবে তাসকিনের কাছে!
আর্মার-ভয়ঙ্কর!
আরাফাত সানির আর্ম-বল আগামী কদিন ঘুমের মধ্যেও তাড়া করে ফিরতে পারে মোহাম্মদ হাফিজকে। চোট কাটিয়ে ফিরে এলেন, প্রথম ম্যাচে হলেন রান-আউট। পরের দুই ম্যাচেই সানির শিকার। পাকিস্তানের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সানির আর্মারের কোনো উত্তর খুঁজে পাননি। পাকিস্তানও শুধু হারিয়ে খুঁজেছে নিজেদের!
তামিম ইকবাল ‘রান’
এই তামিম ইকবালকে নিয়েই কত কথা! জবাব দিতে চাইলে ব্যাট-বলেই দিতে হয়। তামিম দিলেন। যাকে বলে ‘মোক্ষম জবাব’! সিরিজে রান ১৩২, ১১৬, ৬৪। গড় ১৫৬। গড় স্ট্রাইক রেট প্রায় ৯৪। ৪০টি চার, ৫টি ছয়। তিনি এখন দেশের সবচেয়ে বেশী রান, সেঞ্চুরি, ফিফটি, চার, ছয়, সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক।
তামিম ইকবাল খানের রান করার রহস্য কী!
ধ্বস...
৯১ রানের উদ্বোধনী জুটি। তারপর ১৪ রানে ২ উইকেট হারানোর ধাক্কাটা পাকিস্তান সামাল দিল আজহার আলী ও হারিস সোহেলের ৯৮ রানের জুটিতে। তারপর? রীতিমত ধ্বস নামলো। একসময় তিনশ যেখানে ‘অনায়াস’ মনে হচ্ছিল, সেই পাকিস্তানই গুটিয়ে গেল ২৫০ রানে! শেষ ৮ উইকেট হারালো ৪৭ রানে। ধাক্কাটা সামাল দিতে পারেনি পাকিস্তান। তাই রুখতে পারেনি বাংলাওয়াশও।
সৌম্য-স্যামুয়েলসের ইঁদুর-দৌড়
মিরপুরে সৌম্য সরকার যখন সেঞ্চুরির অপেক্ষায়, হাজার মেইল দূরে সেন্ট জর্জেস-এ মারলন স্যামুয়েলসও তাই! পাকিস্তানের বিপক্ষে সৌম্য খেলছিলেন ওয়ানডেতে, আর সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্যামুয়েলস। একসময় তো দুজনই দাঁড়িয়েছিলেন ৯৫ রানে। সৌম্য সেখান থেকে মিড-উইকেট দিয়ে ছয় মেরে পূর্ন করেছেন নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। আর বৃষ্টি বাগড়া দিয়ে প্রলম্বিত করেছে স্যামুয়েলসেরটি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য চার মেরেই সেঞ্চুরি করেছেন স্যামুয়েলস।
এবং মুশফিক...
প্রথম ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন। পরের ম্যাচে করলেন ফিফটি। এ ম্যাচে মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ৪৯ রানে। চার নম্বরে নিজের ব্যাটিংটা উপভোগ করছেন নিশ্চয়ই। তবে নিজের পছন্দের শট স্লগ সুইপটা খেললেন না কাল, একবারের জন্যও না!
তাতে কী, দর্শকেরা স্লগ ছাড়াও মুশফিকের ইনিংস কি কম উপভোগ করেছেন!
দুই ছবি
পাকিস্তান ইনিংসের ৪৪তম ওভারে প্রথম বল। মাশরাফির লেংথ বলটিকে সুইপ করতে চাইলেন ফাওয়াদ আলম। ডিপ মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন নাসির হোসেন। সেখানে থেকে বাঁদিকে অনেকখানি দৌড়ে ক্যাচটি নিলেন।
বাংলাদেশ ইনিংসের ৩৬ তম ওভারের শেষ বল। উমর গুলের শর্ট বলে পুল করলেন সৌম্য সরকার। বল গেল ডিপ মিডউইকেটে জুনাইদ খানের হাতে। ধরলেন, আবার ফেলে দিলেন।
গোটা ম্যাচেই দুই বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। মিডউইকেটে নাসির ও জুনাইদের মতো করেই!