২২ গজের সেলুলয়েড : বৃষ্টিস্নাত খাটুনির দিন

ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে!
শুভাগত এখন স্পিনার
৬ ম্যাচে ২২.৬৬ গড়ে ২০৪ রান। ৫২.৬২ গড়ে ৮ উইকেট। সেই শুভাগত হোমকে নির্বাচক আর টিম ম্যানেজমেন্ট কখনো ব্যাটসম্যান বানিয়ে দেন, কখনো অল-রাউন্ডার, কখনোবা ‘নিখাদ’ অফস্পিনার! শুভাগত হোম আসলে কী? কোন ‘রোল’-এই বা তিনি খেলেন!
উত্তর অজানা। যেমন নাকি কোচের কাছে অজানা ছিল ফতুল্লার এই ‘নিখাদ ব্যাটিং’ উইকেট!
বিষন্ন অভিষেক!
নিশ্চয়ই এই দিনটার স্বপ্ন কতবার দেখে এসেছেন লিটন দাস। মাথায় সবুজরঙ্গা ওই ক্যাপটা পড়ার। তবে অভিষেকের দিনটা খুব একটা সুখকর হলো না বাংলাদেশের ৭৭তম টেস্ট ক্রিকেটারের। দল ফিল্ডিংয়ে, দুই একটা ক্যাচ বা স্ট্যাম্পিং এর কথা তো ভাবাই যায়। কীসের কী!
লিটন ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলেন যেন, বাংলাদেশের বোলাররা যে নিতে পারলেন না একটিও উইকেট!
ধাওয়ানের দেওয়ানী
এর আগে ১৩ ম্যাচে স্ট্রাইক রেট প্রায় ৬৭। শিখর ধাওয়ানের এই ইনিংসে অপরাজিত ইনিংসে এখন পর্যন্ত স্ট্রাইক রেট প্রায় ৯৫। মোহাম্মদ শহীদের বলে ১ রানেই ক্যাচ দিয়েছিলেন প্রায়, পড়লো তৃতীয় স্লিপের একটু আগে। আর ৭৩ রানে তাইজুলের বলে মিডউইকেটে শুভাগত হোমকে ক্যাচ দিয়েছিলেন। ‘ফিল্ডার’ হোম মিস করলেন তা, তবে ধাওয়ান তৃতীয় সেঞ্চুরি মিস করেননি। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটাও কি পেয়ে যাবেন?
এমন শুরুর পর
দিনের প্রথম ওভারটাই মেডেন করলেন মোহাম্মদ শহীদ। রুবেল হোসেনের বদলে একমাত্র পেসার হিসেবে তাঁকে খেলানোর সিদ্ধান্তই যে ‘সঠিক’, তা প্রমাণের পূর্বাভাসই কি মিলল খানিকটা। পরের ওভার আবার মেডেন, পূর্বাভাস জোরালো হলো আরেকটু। তারপর?
দিনে আরও ১০ ওভার করলেন, থাকলেন ওই উইকেটশূন্যই। প্রথম দুই ওভারের পরই যেন ‘করে নাকো ফোঁসফাঁস’ টাইপের ‘নির্বিষ’ বোলারে পরিণত হলেন ফতুল্লা টেস্টে পেস-লাইনে বাংলাদেশের সবেধন নীলমণি!
বোলার ইমরুল
এমনিতে ওপেনার। পাকিস্তানের সঙ্গে মুশফিক চোট পেয়ে বাইরে চলে যাওয়ার পর লম্বা সময় উইকেটকিপিং করেছিলেন ইমরুল। এবার নামলেন বোলারের ভূমিকায়। এবারই প্রথম নয় অবশ্য। এর আগে তিন ইনিংসে তিনবার বল হাতে নিয়েছিলেন। হরভজন সিং স্টাইলের অফস্পিন, কাজ হলো না তাতেও! ১ ওভারে তিন রান দিয়েই আটকে গেলেন, মুশফিক আর বল দিলেন না। কাল কি আবার শরণাপন্ন হতে হবে ইমরুলের?
খুঁজে ফিরি কম্বিনেশন
ফতুল্লা টেস্টে বাংলাদেশ দলের কম্বিনেশন আসলে কী? বলা দায়! চারজন ব্যাটসম্যান (তামিম, ইমরুল, মুমিনুল, মুশফিক), একজন অলরাউন্ডার (সাকিব), একজন ‘অলরাউন্ডার, ব্যাটসম্যান অথবা স্পিনার’ (শুভাগত), একজন ‘ওয়ানডে ওপেনিং ব্যাটসম্যান কিন্তু টেস্টে অলরাউন্ডার’ (সৌম্য), একজন উইকেটকিপার (লিটন), দুজন স্পিনার (তাইজুল, জুবায়ের), একজন পেসার (শহীদ)। সব মিলিয়ে প্রায় ‘চারজন’ স্পিনার, কিন্তু মুশফিক হেরে বসলেন টস! প্রথম দিন উইকেট থেকে স্পিনাররা পেলেন না কিছুই, মুশফিকও পারলেন না স্বভাববিরুদ্ধ আক্রমণাত্মক হতে।
বাংলাদেশও পারলো না কোনো উইকেট নিতে।
টেস্টে কি বলার মতো কিছু করে দেখাতে পারবে বাংলাদেশ? নাকি বাকি চারদিনেও অনেক কিছু দেখাবে ‘বৃষ্টি’!