• লা লিগা
  • " />

     

    'নতুন' অ্যাটলেটিকো এবার আরও ভয়ংকর?

    'নতুন' অ্যাটলেটিকো এবার আরও ভয়ংকর?    

    রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার দুই ঘোড়ার রেসে পাঁচ বছর আগে প্রথম বাগড়া দিয়েছিল তারা। সবাইকে অবাক করে লা লিগা জিতে নেয় অ্যাটলেটিকো। এর মধ্যেই 'বড় শক্তি' হিসেবে নিজেদের চিনিয়েছে, দুইবার খেলেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল।  গত মৌসুমের শেষে ইউরোপা লিগ ঠিকই জিতে নেয় সিমিওনের দল। আর দিন দুয়েক আগে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে ইউয়েফা সুপারকাপের শিরোপাও জিতেছে অ্যাটলেটিকো। সবকিছুই বলছে, শিরোপা জেতার জন্য সব রকমের গোলা-বারুদ ভালোমতোই আছে অ্যাটলেটিকোর। 

     
    ওবলাকের নেই কোনো তুলনা

    ২০১৪ সালে বেনফিকা ছেড়ে অ্যাটলেটিকোতে পাড়ি জমানোর পর থেকেই মূল একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন স্লোভেনিয়ার গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক। একের পর এক ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বিশ্বসেরা গোলরক্ষকদের তালিকা করলে শুরুর দিকেই আসবে তার নাম। ২০১৮-১৯ মৌসুমেও অ্যাটলেটিকোর মূল গোলরক্ষক থাকবেন তিনিই। প্রাক-মৌসুমের প্রতিটি ম্যাচেই অ্যাটলেটিকোর গোলবার সামলেছেন তিনি।

     

     

    ওবলাকের বদলি হিসেবে রিয়াল বেটিস থেকে দলে আনা হয়েছে আন্টোনিও আদানকে।

     

    ইস্পাতদৃঢ় রক্ষণের সামনে অসহায় সবাই-ই

    ডিয়েগো গোডিন এবং হোসে মারিয়া হিমেনেজ। ক্লাবের সাথে আন্তর্জাতিক ফুটবলটাও খেলেন একসাথেই। ইউরোপের অন্যতম সেরা রক্ষণভাগ অ্যাটলেটিকোর হওয়ার পেছনে তাদের দুজনের কৃতিত্বটা সবচেয়ে বেশি। কী মেসি, কী রোনালদো- অ্যাটলেটিকোর রক্ষণভাগের সামনে বেশ অনেকবারই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাদের। হাওয়ায় ভাসা বল দখল করা, দুর্দান্ত ট্যাকলিং, লম্বা পাসে গ্রিযমানদের পাস যোগানো- সব দিক দিয়েই দারুণ দক্ষ তারা। বিকল্প হিসেবে থাকছেন স্টেফান সাভিচ। সপ্তাহ খানেক আগেও গোডিনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পাড়ি জমানোর নিয়ে কানাঘুষা চলছিল বেশ। মাত্র ১৮ মিলিয়নের 'রিলিজ ক্লজ' দিতেও এক পায়ে খাঁড়া ছিল ইউনাইটেড। কিন্তু প্রাণের ক্লাবকে ছাড়তে পারেননি গোডিন। এবারই চুক্তি নবায়ন করে অ্যাটলেটিকোতেই থেকে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। প্রাক-মৌসুমে অবশ্য তেমন মাঠে নামেননি অ্যাটলেটিকোর কোনো ডিফেন্ডারই। কেবল ইন্টার মিলানের বিপক্ষেই পূর্ণশক্তির দল নামিয়েছিলেন সিমিওনে।

     

     

    গোডিনদের সাথে ফুলব্যাক হিসেবে থাকবেন হুয়ানফ্রান, সান্তিয়াগো আরিয়াস এবং ফিলিপে লুইজ, লুকাস হার্নান্দেজ। অভিজ্ঞতার জন্য হয়ত এই মৌসুমেও মূল দুই ফুলব্যাক থাকবেন হুয়ানফ্রান-লুইজ। তবে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্ম করা লুকাসও পেয়ে যেতে পারেন মূল একাদশে নিয়মিত সুযোগ। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে চলে আসলেও এখনও ফুলব্যাক হিসেবে উপরে উঠে আক্রমণে আবার পরমুহূর্তে নিচে নেমে ডিফেন্স করা- দু’দিকেই সমান দক্ষ হুয়ানফ্রান, লুইজ। আর তারা ইনজুরিতে পড়লে বা বিশ্রামে থাকলে আরিয়াস, লুকাসরা কাজটা সারতে পারেন দারুণভাবেই।

     

    সিমিওনের শৈল্পিক মাঝমাঠ

    একটা সময় ছিল যখন অ্যাটলেটিকোর মাঝমাঠে কোকে বাদে কেউই তেমন গোলের সুযোগ তৈরি করার মত মিডফিল্ডার ছিলেন না। সেই অ্যাটলেটিকোর খোলনলচে এখন অনেকটুকুই বদলে গেছে। গাবি, তিয়াগোদের জায়গায় এসেছেন থমাস লেমার, সল নিগুয়েজের মত সৃজনশীল মিডফিল্ডাররা। গোডিনদের মতই প্রাক-মৌসুমটা বেঞ্চেই কাটিয়েছেন অ্যাটলেটিকোর মূল মিডফিল্ডাররা। তবে এতে যে নতুন মৌসুমের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটেনি এতটুকু- তা বোঝা গেছে রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই।

     

     

    মাঝমাঠে দুই উইংয়ে খেলবেন লেমার এবং কোকে। আর মাঝে খেলবেন সল এবং রড্রি। গতিশীল হওয়ায় কোকের সাথে জায়গা বদল করে উইংয়ে খেলতে পারেন সল নিজেও। তখন ‘ডেস্ট্রয়ার’ হিসেবে খেলবেন রড্রি। তার বদলি হিসেবে আছেন থমাস পার্টি। আর সামনে গ্রিযমান-কস্তাকে পাস যোগানোর মূল দায়িত্বটা পড়বে কোকের ওপর। ‘ফ্রি রোল’-এ কোকে ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর, তার প্রমাণ মিলেছে একাধিকবার। দুই উইংয়ে লেমার-সল জুটি আছে দারুণ ফর্মে।

     

    প্রাচুর্যের নাম আক্রমণভাগ

    ডিয়েগো কস্তা, আঁতোয়া গ্রিযমান, ভিতোলো, জেলসন মার্টিন্স। সিমিওনের আক্রমণ যে কোনো রক্ষণকে কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো। পেছনে লেমার-সল-কোকেদের মত মিডফিল্ডার থাকায় এই যুগেও ৪-৪-২ ফর্মেশন ব্যবহার করে দারুণ সাফল্য পান সিমিওনে।

     

     

    অবশ্য ঠিক ৪-৪-২ নয়, অ্যাটলেটিকোর ফর্মেশনটি মূলত ৪-৪-১-১। কস্তার একটু পেছনে ‘সেকেন্ড স্ট্রাইকার’ হিসেবে খেলেন গ্রিযমান। মূলত মাঝমাঠের সাথে যোগসাজশ রেখে কস্তাকে পাস যোগানো বা নিজে গোল করা- সব দিক দিয়েই সমান পারদর্শী এই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আর বিকল্প হিসেবে স্পোর্টিং লিসবন থেকে এসেছেন মার্টিন্স, ক্ষীপ্র গতি এবং ড্রিবলিংয়ের কারণে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সাথে যার তুলনা শুরু হয়ে গেছে এরই মাঝে। মূলত ডানপ্রান্তেই খেলবেন মার্টিন্স। আর বাঁ-প্রান্তে খেলবেন ভিতোলো।

     

    একঘেয়ে ফুটবলে পটু অ্যাটলেটিকো আজ ইউরোপের অন্যতম আক্রমণাত্মক দল। মাঝমাঠে লেমার, সলদের মত ‘ক্রিয়েটর’, আর সামনে কস্তার মত একজন প্রমাণিত ‘হিটম্যান’। রক্ষণে গোডিন-হিমেনেজ-ওবলাকরা তো আছেনই। সব মিলিয়ে এবার দারুণ কিছুরই স্বপ্ন দেখতে পারে অ্যাটলেটিকো।