বেল-বেনজেমায় হাসল রিয়াল মাদ্রিদ
২০১৩-১৪ থেকে ২০১৭-১৮ মৌসুম। শেষ চারটি বছর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ‘বিবিসি’ নামে ইউরোপে ত্রাস ছড়িয়েছেন গ্যারেথ বেল-করিম বেনজেমা-ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ‘বিবিসি’-র ‘সি’ পাড়ি জমিয়েছেন জুভেন্টাসে, তার বদলে দলে আনা হয়নি নতুন কোনো ফরোয়ার্ডকে। স্বভাবতই বেল, বেনজেমার ওপর প্রত্যাশার পারদটা আরও বেড়ে শৃঙ্গসম এখন। তবে আজ জিরোনার বিপক্ষে স্তাদিও মন্টোলিভিতে তারা প্রমাণ করলেন, রিয়াল সমর্থকদের মনে রোনালদোর অভাবটা ভুলে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তারা। বেল, বেনজেমায় সওয়ার হয়েই পিছিয়ে পড়েও জিরোনার বিপক্ষে ৪-১ গোলে জিতেছে ‘লস ব্লাঙ্কোস’রা। গোল ব্যবধানে বার্সেলোনাকে টপকে এখন লা লিগা টেবিলের শীর্ষস্থানে আছে হুলেন লোপেতেগির দল।
স্তাদিও মন্টোলিভিতে গত মৌসুমে রিয়ালের হারের অন্যতম কারণ ছিল প্রতি-আক্রমণে জিরোনার দুর্দান্ত গতি। আজও একই সমস্যায় পড়তে হয়েছে রিয়ালের রক্ষণভাগকে। রাফায়েল ভারানের বদলি হিসেবে নামা নাচো ফার্নান্দেজকে রীতিমত নাচিয়ে ছেড়েছে জিরোনার আক্রমণভাগ। ম্যাচের শুরু থেকেই হাইপ্রেসিং ফুটবলে রিয়ালের রক্ষণভাগকে তটস্থ রেখেছিলেন তারা। কিন্তু ম্যাচে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল রিয়ালই। ১৫ মিনিটে মার্কো আসেন্সিওর ক্রসে গোলের সামনে থেকেও বল জালে পাঠাতে ব্যর্থ হন ইস্কো। এর মিনিটখানেক পর গ্যারেথ বেলের থ্রু পাস থেকে বল জালে পাঠান বেনজেমা। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয় গোলটি। বার দুয়েক বেঁচে যাওয়ার পর আক্রমণে উঠে জিরোনা। গোলের দেখা পেতেও দেরি হয়নি তাদের। ১৭ মিনিটে প্রতি-আক্রমণে পর্তুর ক্রস নাচোর পিঠে লেগে আসে বোর্হা গার্সিয়ার পায়ে। প্রথম টাচে দুর্দান্ত এক ‘ডামি’ করে কাসেমিরোকে বোকা বানিয়ে ডানপায়ের জোরাল শটে দলকে লিড এনে দেন তিনি। ক্যারিয়ারটা শুরু হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ কাস্তিয়াতে। জিরোনায় পাড়ি জমালেও ভুলে যাননি শৈশবের ক্লাবের কথা। স্তাদিও মন্টোলিভি বুনো উল্লাসে মাতলেও উদযাপন করেননি গার্সিয়া।
গোল খেয়ে কিছুটা গুছিয়ে নেয় রিয়াল। কিন্তু মাঝমাঠের সাথে আক্রমণভাগের বোঝাপড়ার অভাবটা ছিল সুস্পষ্ট। হুলেন লোপেতেগির পজেশন ভিত্তিক ফুটবলে জিরোনাকে চেপে ধরে রিয়াল। বাঁ-প্রান্ত থেকে মার্সেলোর ক্রসে রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোসের হেড চলে যায় জিরোনা গোলের বাইরে। তবে রিয়ালকে সমতায় ফিরিয়েছেন তিনিই। ৩৮ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত থেকে বেলের ক্রসে কাসেমিরোর শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন জিরোনা গোলরক্ষক বোনো। ফিরতি বলে বেনজেমার শটও ফিরে আসে বোনোর হাতে লেগে। আসেন্সিওর বল নিয়ন্ত্রণে আনপতে গেলে তাকে ডিবক্সে ফেলে দেন মার্কো মুনিয়েসা। পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। ১২ গজ থেকে চতুর এক ‘পানেনকা’য় গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন রামোস। ক্যারিয়ারে এটি ছিল তার ৫৬তম গোল, যা একবিংশ শতাব্দীর যেকোনো ডিফেন্ডারের চেয়ে অন্তত ২৫ গোল বেশি।
প্রথমার্ধের শেষদিকে পেনাল্টি আদায় করে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আবারও ডিবক্সে ফাউলের শিকার হন আসেন্সিও। আবারও পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। এবার অবশ্য রামোস নন, এগিয়ে আসেন বেনজেমা। রিয়ালের কাটানো নয় মৌসুমের প্রতিটিতেই পেনাল্টির সময় পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে রোনালদো থাকাকালীন সময়। এবার নিজেই আসলেন মূলমঞ্চে, দলকে লিডও এনে দিলেন ৫২ মিনিটে। লা লিগায় খেলায় ৩৩ দলের মধ্যে ৩২টির বিপক্ষে লক্ষ্যভেদ করলেন তিনি। এই গোলের পরই মূলত আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে জিরোনা। আক্রমণ করছিল ঠিকই, কিন্তু প্রথমার্ধের সেই ধারটা হারিয়ে গিয়েছে ততক্ষণে। গোলের পর কিছুটা প্রতি-আক্রমণে খেলা রিয়াল ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেয় ৫৯ মিনিটে। ইস্কোর থ্রু পাস থেকে দুর্দান্ত এক দৌড়ে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান বেল। বাঁ-পায়ের বাঁকানো শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে ভুল করেননি ওয়েলশ ফরোয়ার্ড। ক্লাব ক্যারিয়ারে আজ নিজের ১৫০তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করলেন বেল।
ম্যাচে ফিরতে না পারলেও চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি জিরোনা। তবে তাদের সামনে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কেইলর নাভাস। দ্বিতীয়ার্ধে অন্তত তিনটি দারুণ প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছেন দক্ষ হাতে। থিবো কর্তোয়াকে বসিয়ে তাকে নামিয়েছিলেন লোপেতেগি। কোচের আস্থার প্রতিদানটাও দারুণভাবে দিলেন এই কোস্টারিকান। বিশেষ করে ৭৮ মিনিটে লোজানোর শট ফিরিয়ে দেওয়ার পর নাভাসের জন্য জোর করতালিও দিয়েছেন মাঠে উপস্থিত রিয়াল সমর্থকেরা। নাভাস হাত নেড়ে জবাবও দিয়েছেন তার। জিরোনার গোলের দেখা না পাওয়ার মাঝে ৮০ মিনিটে তাদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন বেনজেমাই। বেলের মাইনাস নিয়ন্ত্রণে এনে ডানপায়ের জোরাল শটে ব্যবধান ৪-১ করেন এই ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার। রোনালদো চলে যাওয়ায় এবং নতুন কোনো ফরোয়ার্ড দলে না ভেড়ানোয় বেনজেমার ওপর দায়িত্বটা বেড়ে গিয়েছে বেশ। দলের অন্যতম অভিজ্ঞ সেনানীর থেকে তো এমন পারফরম্যান্সই আশা করবেন লোপেতেগি এবং রিয়ালের সমর্থকেরা।