বেল-বেনজেমায় আবারও হাসি রিয়ালের
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাসে পাড়ি জমানো, রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণে নেই কোনো ‘গ্যালাকটিকো’ সাইনিং- সব মিলিয়ে ২০১৮-১৯ মৌসুমের আগে রিয়ালের গোলের দায়িত্বটা ছিল করিম বেনজেমা এবং গ্যারেথ বেলের ওপর। জিরোনার বিপক্ষে গত সপ্তাহে তাদের গোলেই হেসেছিল রিয়াল। আজ লেগানেসের বিপক্ষে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আবারও জ্বলে উঠল বেনজেমা-বেল জুটি। আর তাতেই পুড়ল লেগানেস, আবারও হাসল রিয়াল। ৪-১ গোলের জয়ে ৩ ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে লা লিগা টেবিলের শীর্ষস্থানটা আরও সুসংহত করল ‘লস ব্লাঙ্কোস’রা।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে মূল একাদশে বেশকিছু পরিবর্তন এনেছিলেন হুলেন লোপেতেগি। ইস্কোর বদলে মূল একাদশে নেমেছিলেন ইউয়েফার বর্ষসেরা লুকা মদ্রিচ। ম্যাচের আগে মদ্রিচের সাথে মাদ্রিদ সমর্থকদের সামনে আবারও ট্রফি তুলে দেওয়া হয় কেইলর নাভাস (ইউরোপের সেরা গোলরক্ষক), সার্জিও রামোসদের হাতে (ইউরোপের সেরা ডিফেন্ডার)। উৎসবমুখর এক পরিবেশে আক্রমণাত্মক সূচনা করেছিল রিয়ালই। মদ্রিচ-ক্রুসদের সাথে বেল-বেনজেমার দারুণ বোঝাপড়া ঠেকাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছিল লেগানেসকে। কিন্তু অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক লেগানেসের বিপক্ষে গোলের দেখা পেতে কিছুটা ভুগতে হয়েছে রিয়ালকে। কিন্তু ১৭ মিনিটে আর শেষরক্ষা হয়নি লেগানেসের। রামোসের লম্বা পাসে দানি কারভাহালের হেডে ডিবক্সে বল পান বেল। শরীর ডানপায়ের শটে দলকে লিড এনে দেন ওয়েলশ ফরোয়ার্ড। লা লিগায় টানা ৭ ম্যাচে গোল পেলেন বেল।
গোলের পর রিয়ালের খেলায় ফিরে আসে সেই পুরনো ছন্দ। রক্ষণের সামনে ‘ডেস্ট্রয়ার’ রোলে কাসেমিরোর দক্ষতায় আক্রমণেই যেতে পারছিল না লেগানেস। কিন্তু প্রথমার্ধে দুর্দান্ত খেলা সেই কাসেমিরোর ভুলেই সমতায় ফেরে লেগানেস। ডিবক্সে এরাসোকে ফেলে দিয়ে লেগানেসকে পেনাল্টি উপহার দেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। রিয়ালের হয়ে নিজের অভিষেকেই পেনাল্টি ঠেকিয়ে ‘হিরো’ বনে যাওয়াড় সুযোগ ছিল থিবো কর্তোয়ার। কিন্তু ১২ গজ থেকে কর্তোয়াকে পরাস্ত করে দলকে সমতায় ফেরান কারিও। সমতায় ফেরার পর আবারও অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক কৌশলের শরণাপন্ন হন লেগানেস কোচ মরিসিও পেলেগ্রিনো। প্রথমার্ধের বাকিটা সময় আক্রমণ করে গেলেও সমতায় ফেরা হয়নি রিয়ালের।
প্রথমার্ধে বল পজেশন, একাধিক আক্রমণের পরও লিড নিতে পারেনি রিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই লেগানেসকে আবারও চেপে ধরে রিয়াল। দুর্দান্ত বোঝাপড়া এবং ‘কুইক পাসিং’-এ লিড নিতেও দেরী হয়নি রিয়ালের। ৫০ মিনিটে আসেন্সিওর ক্রস থেকে হেডে গোল করে রিয়ালকে লিড এনে দেন বেনজেমা। কিন্তু রিয়ালের উদযাপনের মাঝে ফাউলের কারণে গোল বাতিল করেন রেফারি। কিন্তু ভিডিও রেফারির সাহায্যে গোল রিভিউ করতে বাধ্য হন রেফারি। রিভিউতে গোলের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। এই গোল দিয়েই লা লিগায় খেলা ৩৩ দলের প্রত্যেকের বিপক্ষেই গোল করলেন বেনজেমা। এই গোলের পর আর ফিরে আসতে পারেনি লেগানেস। মদ্রিচ-ক্রুসদের দুর্দান্ত সব বোঝাপড়ায় ‘ওলে! ওলে!!!’ হর্ষধ্বনিতে মেতে উঠে সমগ্র বার্নাব্যু।
গত ম্যাচে দুই গোল পেয়েছিলেন। আজ প্রথম গোলের মিনিট দশেক পর নিজের দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান বেনজেমা। ৬২ মিনিটে মার্সেলোর পাস থেকে দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে জোরাল শটে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন বেনজেমা। গোলের পর মাদ্রিদ সমর্থকদের দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানানোই প্রমাণ করে, রোনালদোর অনুপস্থিতিতে গোলের গুরুদায়িত্ব নিজ কাঁধে নেওয়ায় বেনজেমার ওপর ঠিক কতটা সন্তুষ্ট রিয়াল সমর্থকেরা। ততক্ষণে ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে লেগানেস। ৬৬ মিনিটে আসেন্সিওকে ডিবক্সে ফাউল করায় পেনাল্টি পেয়ে যায় রিয়াল। বেনজেমা হ্যাটট্রিকে থাকলেও পেনাল্টি নিতে এগিয়ে আসেন রামোস। জিরোনার বিপক্ষে গত ম্যাচের মত এবারও ভুল করেননি রিয়ালের অধিনায়ক। এই গোলের পর মূলত রিয়ালও আক্রমণের ধার কমিয়ে কিছু গা বাঁচানো গোছের খেলায় নিজেদের গুছিয়ে নেয় রিয়াল। লেগানেসও পারেনি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে। শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোলের জয়েই লা লিগার শীর্ষস্থানটা আরও সুসংহত করল রিয়াল।