হুয়েস্কার স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করল বার্সা
৪৫ বছর পর লা লিগায় ফেরত এসেছে তারা। প্রথম ম্যাচে জয়, দ্বিতীয় ম্যাচে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মাঠে ড্র। আজ স্পেনের অন্যতম বড় দল বার্সেলোনার মাঠেও শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতই। ৩ মিনিটে লিড নিয়ে অসম্ভব কিছু সাধনের স্বপ্নে বিভোর তখন হুয়েস্কা। কিন্তু ক্যাম্প ন্যুতে মেসি-সুয়ারেজদ-কুতিনিয়োদের বিপক্ষে ৯০ মিনিটে ঠিক কতটা দুর্বিষহ হতে পারে- তা আজ হারে হারে টের পেল লা লিগার নবাগত দলটি। লিড নিয়েও ৮-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে তারা। জোড়া গোল করেছেন লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ।
লা লিগায় নবাগত দল, নিজেদের মাঠে খেলা- সব মিলিয়ে ক্যাম্প ন্যুতে হয়ত সহজ এক জয়ই আশা করছিলেন বার্সেলোনার সমর্থকেরা। কিন্তু ম্যাচের ৩ মিনিটেই সব হিসাবনিকাশ পালটে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয় হুয়েস্কা। লোঙ্গোর হেডে বার্সা ডিবক্সে বল পান হার্নান্দেজ। জোরাল শটে দলকে লিড এনে দেন তিনি। এই গোলের পর হয়ত দুই মৌসুম আগে আলাভেসের বিপক্ষে ক্যাম্প ন্যুতে হারের দুঃস্মৃতির কথাই মনের ঈষাণকোণে উঁকি দিচ্ছিল কাতালান সমর্থকদের। কিন্তু এর্নেস্তো ভালভার্দের দল এত শজে হার মানার পাত্র নয়। আকস্মিক গোল হজমের পর নিজেদের গুছিয়ে নেন মেসি, সুয়ারেজরা। সমতায় ফিরতেও সময় নেননি খুব একটা। ১৬ মিনিটে ইভান রাকিটিচের পাস থেকে চমৎকার এক বাঁকানো শটে গোল করেন মেসি। এই গোলের পরই মূলত চিরচেনা বিধ্বংসী রূপে ফেরে কাতালানরা। ৪-৪-২ ফর্মেশনে ‘বাস পার্ক’ ট্যাকটিক্স খাটানো হুয়েস্কার ফুটবলাররা দাঁড়াতেই পারেননি মেসি-কুতিনিয়োদের সামনে। রক্ষণভাগের ফুটবলাররা হিমশিম খেলেও গোলরক্ষক ওয়ার্নার ছিলেন রীতিমত অদম্য। প্রথমার্ধে দুর্দান্ত সব সেভে রাকিটিচ, সুয়ারেজের অন্তত নিশ্চিত দুটি গোল ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি।
বার্সার ফরোয়ার্ডদের খালি হাতে ফেরালেও ওয়ার্নারের কপাল পোড়ে নিজ দলের খেলোয়াড়ের আত্মঘাতী গোলে। ২৪ মিনিটে জর্দি আলবার ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল নিজ জালে ঠেলে দেন পুলিদো। ওয়ার্নারের সাথে ক্রসবারও যেন বার্সাকে ফিরিয়ে দিতে ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নাহলে ৩০ মিনিটে উসমান ডেম্বেলের শটটা গোল হতে পারত অন্য যেকোনো দিনে। এর মিনিট দুয়েক পর মেসির দুর্দান্ত এক ফ্রিকিকও চলে যায় হুয়েস্কার বার ঘেঁষে। কিন্তু প্রথমার্ধে ঠিকই তৃতীয় গোলের দেখা পেয়ে যায় বার্সা। এবারও হুয়েস্কার রক্ষণভাগকে পরাস্ত করেন আলবা। কুতিনিয়োর সাথে দারুণ এক ‘ওয়ান-টু’ করে ডিবক্সে ঢুকেই নিচু এক ক্রস করেন সুয়ারেজের উদ্দেশ্যে। ডানপায়ের বুদ্দিদীপ্ত ফিনিশে এই মৌসুমে অবশেষে গোলের দেখা পেলেন সুয়ারেজ। লিড নিয়ে পিছিয়ে পড়েও মনোবল হারায়নি হুয়েস্কা। ৪২ মিনিটে গায়ারের গোলে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছিল তারা। প্রথমার্ধে তিন গোল খেয়েও ম্যাচে তখনও টিকেছিল লা লিগার নবাগত দলটি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই রীতিমত হুয়েস্কাকে আক্রমণের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয় বার্সা। ৪৫ থেকে ৬০- এই ১৫ মিনিটের ঝড়ে হুয়েস্কাকে রীতিমত লন্ডভণ্ড করে দেয় বার্সা। শুরুটা করেছিলেন ডেম্বেলে। ৪৭ মিনিটে মেসির শট বারপোস্টে প্রতিহত হওয়ার পরের মিনিটেই ডেম্বেলের গোলে ব্যবধান ৪-২ করে বার্সা। এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই মিনিট চারেক পর আবারও গোল করে বসে বার্সা। তিনজন ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে মেসির দুর্দান্ত থ্রু পাস চমৎকার এক হাফভলিতে জালে জড়ান রাকিটিচ। এরপর আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি হুয়েস্কাকে। গোল করার চেয়ে তখন আর গোল না খাওয়ার দিকেই মনোযোগী হতে থাকে হুয়েস্কা।
কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। ৬১ মিনিটে দুর্দান্ত এক প্রতি-আক্রমণে কুতিনিয়োর থ্রু পাস থেকে ওয়ার্নারকে পরাস্ত করেন মেসি। ৬ গোলের পরও আক্রমণের ধার এতটুকু কমেনি বার্সার। ওয়ার্নার না থাকলে গোলের সংখ্যা দুই অঙ্কতেও পৌঁছাতে পারত বার্সার। ৮১ মিনিটে মেসির এক ডিফেন্সচেরা পাস থেকে মাটি কামড়ানো শটে গোল করেন আলবা। ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে খেলছেন এমন ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট এখন মেসিরই (১৫০)। কিন্তু তখনও শেষ হয়নি বার্সার ধ্বংসযজ্ঞ। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে পেনাল্টি পায় বার্সা। হ্যাটট্রিকের সুযোগ থাকলেও সুয়ারেজকে পেনাল্টি নিতে দেন মেসি। ৯২ মিনিটে দলের ৮ম এবং নিজের দ্বিতীয় গোল করে ৮-২ ব্যবধানে শেষ হয়ে হুয়েস্কার স্বপ্ন থেকে দু”স্বপ্নে পরিণত হওয়া লা লিগায় তাদের প্রথম ক্যাম্প ন্যু যাত্রা।