• ইউয়েফা নেশনস লিগ
  • " />

     

    দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে জিতল না কেউই

    দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে জিতল না কেউই    

    ২০১৫ সালে তার অভিষেকের পর থেকেই তাকে ফ্রান্সের গোলরক্ষকদের পরবর্তী প্রজন্মের মশালধারী ধরা হত তাকে। কিন্তু ফ্রান্সের ‘নাম্বার ওয়ান’ এবং অধিনায়ক হুগো লরিসের জন্য কখনোই মূল একাদশে থিতু হতে পারেননি আলফোন্স আরিওলা। বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ডাক পেলেও খেলা হয়নি কোনো ম্যাচ। কিন্তু বিশ্বকাপ পরবর্তী প্রথম ম্যাচেই নামলেন আরিওলা, আর জানান দিলেন কেন তার সামর্থ্য প্রশ্নাতীত। আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে ইউয়েফা নেশনস কাপে গ্রুপ ‘এ’-তে জার্মানি বনাম ফ্রান্সের ম্যাচ জোয়াকিম লো’র দল এবং জয়ের মাঝে ব্যবধান হয়েছিলেন আরিওলা। গোলশূন্য ড্রতে শেষ হয়েছে শেষ দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের লড়াই। রাতের অন্যান্য ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোবিহীন পর্তুগাল। আর গ্যারেথ বেলের জাদুতে আয়ারল্যান্ডকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে ওয়েলস। আর ‘ডাচ রোনালদো’ খ্যাত মেম্ফিস ডিপাইয়ের জোড়া গোলে পেরুকে ২-১ গোলে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডস।

    আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে ম্যাচের শুরু থেকেই গোলের চেয়ে মাঝমাঠের লড়াইয়েই মেতেছিল দুই দল। কিন্তু পগবা-কান্তে-মাতুইদি নিয়ে গড়া মিডফিল্ডের বিপক্ষে পেরে উঠতে বেশ কষ্টই হয়েছে টনি ক্রুসদের। গোল করার চেয়ে গোল না খাওয়ার দিকেই বেশি ঝুঁকেছিল দুই দল। এজন্যই হয়ত গোলের প্রথম সুযোগ আসতে সময় লেগেছিল মিনিট বিশেক। তবে জেরোম বোয়াটেংয়ের পাস থেকে টিমো ভার্নারের শট ফিরিয়ে দেন আরিওলা। ফাউল আর ভুল পাসের ছড়াছড়িতে তেমন একটা সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কোনো দল। প্রথমার্ধের একেবারে শেষদিকে জার্মান গোলের সামনে থেকে আঁতোয়া গ্রিযমানের শট ম্যানুয়েল নয়্যারকে পরাস্ত করলেও চলে যায় গোল লাইন ঘেঁষে। বাড়ে ফ্রান্সের হতাশার দীর্ঘশ্বাস।

     

     

    প্রথমার্ধের গ্রিযমান-এম্বাপ্পেদের দমিয়ে রাখা জার্মানরা দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ছিল আক্রমণাত্মক। এবার পরীক্ষাটা ছিল ভারান-উমতিতিদের। ভারানরা বেশ বেগ পেলেও আরিওলা দুর্গের কাছে বারবার খালি হাতে ফিরতে হয়েছে জার্মানদের। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গ্রিযমানের শট নয়্যার ফেরানোর পর আর গোলের তেমন সুযোগই তৈরি করতে পারেনি দেশমের দল। ৬১ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে থমাস মুলারের দুর্দান্ত বাঁকান শট অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন আরিওলা। মুলারের শট ফিরিয়ে দেওয়াড় পর লো’র অভিব্যক্তিই বলে দেয়, ঠিক কতটা অবিশ্বাস্য ছিল সেভটা। এর মিনিট তিনেক পর মার্কো রয়েসের জোরাল শটটাও ফিরিয়ে দেন তিনি। জার্মানদের আক্রমণ ঠেকিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটা সময়ই প্রতি-আক্রমণে খেলেছে ফ্রান্স। এম্বাপ্পের গতির সামনে বেশ কয়েকবার হিমশিম খেলেও ফ্রান্সকে ঠিকই আটকে দিয়েছিল জার্মান রক্ষণভাগ। আন্তোনিও রুডিগার ছিলেন এক কথায় দুর্দান্ত। আর জার্মানরাও বাড়িয়ে দিচ্ছিল আক্রমণের ধার। ৭২ মিনিটে সেন্টারব্যাক ম্যাটস হামেলসের হাফভলি দক্ষহাতে রুখে দিয়েছিলেন আরিওলা। একের পর এক আক্রমণে ফ্রান্সকে কাঁপিয়ে দেওয়া জার্মানরা লেগেছিল শেষ পর্যন্ত। কিন্তু আরিওলা যেন মাটি কামড়ানো প্রতিজ্ঞা নিয়েই নেমেছিলেন মাঠে। শেষ দশ মিনিটে হামেলস এবং মাথিয়াস গিন্টারের দুটি হেড দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন আরিওলা। তবে পুরোটা দ্বিতীয়ার্ধই দমে থাকা ফ্রান্সই জিতে যেত একেবারে শেষদিকে। যোগ করা সময়ে উসমান ডেম্বেলের শট রুডিগারের পায়ে লেগে আরেকটু হলেই জড়াত জার্মান জালে।

    ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এস্তাদিও আলগার্ভে শুরু থেকেই চাপে পড়েছিল পর্তুগাল। রোনালদো ছাড়া পর্তুগালের আক্রমণভাগে বোঝাপড়ার অভাবটা ছিল সুস্পষ্ট। তবে বের্নার্দো সিলভা, ব্রুমারা চেষ্টা করে গেছেন সর্বোচ্চটা দিয়ে। শুরুতে বেশ কয়েকবার দূরপাল্লার শটে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক কালিনিচকে। কিন্তু লিডটা নিয়েছিল ক্রোয়েশিয়াই। ১৮ মিনিটে রুবেন নেভেসের থেকে মাঝমাঠ থেকে বল কেড়ে নেন মাতেও কোভাসিচ। চেলসি মিডফিল্ডারের পাস পেপের গায়ে লেগে আসে ইভান পেরিসিচের দিকে। ডানপায়ের জোরাল ভলিতে রুই প্যাট্রিসিওকে পরাস্ত করেন তিনি। রোনালদো নেই, আবার দল পিছিয়ে- সব মিলিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে ছিল না পর্তুগিজরা। কিন্তু ৩২ মিনিটে ঠিকই সমতায় ফেরে তারা। পিৎজির ক্রসে হেড করে পর্তুগালকে সমতায় ফেরান পেপে। ম্যাচের বাকিটা সময় আক্রমণে ছিল পর্তুগালই। কিন্তু ক্রোয়াট রক্ষণের দক্ষতায় আর জেতা হয়নি তাদের। তবে ম্যাচের মিনিট পাঁচেক বাকি থাকতে হোয়াও কান্সেলোর ক্রসে গোলের একেবারে সামনে থেকে বল জালে পাঠাতে পারেননি আন্দ্রে সিলভা। রোনালদোকে ছাড়াও দলে প্রাণের সঞ্চার আছে- আজ যেন এমনটাই প্রমাণ করলেন ফার্নান্দো সান্তোসের দল।