নিজেদের মাঠেই পয়েন্ট হারাল বার্সেলোনা
গত মৌসুমেই নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত লা লিগায় খেলতে এসেছিল জিরোনা। ২০১৭-১৮ মৌসুমে নিজেদের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে দিয়ে রীতিমত এক বিস্ময়েরই জন্ম দিয়েছিল তারা। আজ ন্যু ক্যাম্পে বার্সেলোনার বিপক্ষে জিরোনার পক্ষে বাজি ধরার লোকের সংখ্যা হয়ত শেষ করা যেত হাতে গুণেই। কিন্তু ক্যাম্প ন্যুতে আজ জিরোনা যা করল, তা আসলেই কোনো বিস্ময়ের চেয়ে কম নয়। লিওনেল মেসির গোলে লিড নিয়েও ২-২ গোলের ড্রয়ে শেষ হয়েছে বার্সেলোনা এবং জিরোনার ম্যাচটি। ৫ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে টেবিলের শীর্ষেই থাকল বার্সা।
ক্যাম্প ন্যুতে শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচের প্রথমার্ধটা ছিল একেবারেই অনুমিত। ম্যাচের শুরু থেকেই পাসিং ফুটবলের পসরা সাজিয়ে জিরোনাকে চেপে ধরে বার্সা। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে আজ মাঝমাঠে সার্জিও বুস্কেটসের সাথে নেমেছিলেন আর্তুরো ভিদাল। চিলির ‘বক্স টু বক্স’ মিডফিল্ডারের উপস্থিতিতে আক্রমণে উঠে যাচ্ছিলেন ফিলিপ কুতিনিয়ো, আর্থাররা। সুয়ারেজ-মেসি-ডেম্বেলে ত্রয়ীকে সামলাতেই রীতিমত হিমশিম খাচ্ছিল জিরোনার রক্ষণভাগ। গোলরক্ষক বোনোকে প্রথম পরীক্ষায় ফেলেছিলেন মেসিই। তবে ম্যাচের ১৫ মিনিটে অসামান্য দক্ষতায় জিরোনার চারজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে মেসির নেওয়া শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন বোনো। সেবার বেঁচে গেলেও এর মিনিট চারেক পরই লিড নেয় বার্সা। ১৯ মিনিটে ভিদালের পাস থেকে চমৎকার এক বাঁকানো শটে গোল করেন মেসি। ২০১৮-তে ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে সর্বোচ্চ গোল এখন মেসিরই (৩৪)। লা লিগার ইতিহাসে বিদেশি ফুটবলারদের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা নিজের করে নেওয়ার ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখলেন ‘লিও’।
ম্যাচের শুরুতেই পিছিয়ে পড়েও খেই হারায়নি জিরোণা। উলটো ম্যাচের ২৬ মিনিতে ক্রিশ্চিয়ান পর্তুর শট জেরার্ড পিকে গোল লাইন থেকে না ফেরালে হয়ত তখনই সমতায় ফিরত জিরোনা। প্রতিপক্ষের হঠাৎ খুঁজে পাওয়া প্রেসিং ফুটবলে কিছুটা অগোছালো হয়ে পড়ে বার্সা। এতক্ষণ পজেশন, গোলের সুযোগ তৈরি- সব দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল বার্সা। কিন্তু প্রথমার্ধের ৩৪ মিনিটে পালটে যায় সব হিসাবনিকাশ। বল দখলের সময় জিরোনার ফুটবলার পেরে পন্সকে ফাউল করেন বার্সার ক্লেমেন্ত লংলে। কিন্তু দর্শকদের দুয়ো, জিরোনা ফুটবলারদের প্রতিবাদে ভিডিও রেফারির শরণাপন্ন হন রেফারি। রিপ্লেতে দেখা যায়, ইচ্ছাকৃতভাবেই পন্সকে মেরেছিলেন লংলে।’ভিএআর’-এর সাহায্যে লংলেকে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে দেন রেফারি। প্রথমার্ধেই ১০ জনের দলে পরিণত হয়। একজন বেশি নিয়ে খেলার সুযোগটা দারুণভাবেই কাজে লাগিয়েছে জিরোনা। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বার্সার তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে জিরোনাকে সমতায় ফেরান ক্রিশ্চিয়ান স্তুয়ানি। সমর্থকদের দুয়োধ্বনির মাঝেই শেষ হয় বার্সার প্রথমার্ধ।
প্রথমার্ধেই দশজনের দলে পরিণত হওয়া বার্সা দ্বিতীয়ার্ধে একেবারেই পেরে উঠেনি জিরোনার সাথে। উলটো ৫২ মিনিটে আবারও সেই স্তুয়ানির গোলে পিছিয়ে পড়ে বার্সা। ডাগআউটে এর্নেস্তো ভালভার্দের শূন্যদৃষ্টি, মাঠে মেসি-সুয়ারেজদের হতবাক দৃষ্টি- সবই যেন পুরো ম্যাচের প্রতিচ্ছবি। এই গোলের পরই ‘বাস পার্কিং ট্যাক্টিক্স’-এ খেলা জিরোনাকে ভেদ করতে বেশ ঝামেলা হচ্ছিল বার্সার। কিন্তু গোলের আশাটা আর ছাড়েনি বার্সার। ৬০ মিনিটেই অবশ্য সমতায় ফিরতে পারত। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে মেসির দূরপাল্লার ফ্রিকিক প্রতিহত হয় ক্রবসারে। এরপর থেকেই মূলত ম্যাচে ফিরতে থাকে কাতালানরা। মেসি-সুয়ারেজ-দেম্বেলের মধ্যকার বোঝাপড়াটাও ফিরছিল স্বরূপে। মেসির শট ক্রসবারে প্রতিহত হওয়ার মিনিট তিনেক পরই সমতায় ফেরে বার্সা। কুতিনিয়োর পাস থেকে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান পিকে। ম্যাচের তখনও প্রায় আধ ঘণ্টা বাকি থাকলে দাঁতে দাঁত চাপা ডিফেন্সে বার্সাকে জয় বঞ্চিত করে জিরোনা।