• লা লিগা
  • " />

     

    আবারও শীর্ষে উঠার সুযোগ হাতছাড়া করল রিয়াল মাদ্রিদ

    আবারও শীর্ষে উঠার সুযোগ হাতছাড়া করল রিয়াল মাদ্রিদ    

    সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে লা লিগায় পাঁচ বছর আগে শেষবার অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে আজ বার্সেলোনা পয়েন্ট হারানোয় টেবিলের শীর্ষস্থানটা নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। কিন্তু টানা তিন সপ্তাহে বার্সার পয়েন্ট হারানোর সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারল না রিয়াল। লা লিগায় নিজেদের মাঠে আবারও নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাতে ব্যর্থ হল রিয়াল। অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ে টেবিলের দুই নম্বরেই থাকল 'লস ব্লাঙ্কোস'রা। ৭ ম্যাচে বার্সার সমান  ১৪ পয়েন্ট থাকলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় শীর্ষস্থানটা আর নিজেদের করে নেওয়া হল না রিয়ালের।

    অথচ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে ছাড়া লা লিগার প্রথম 'মাদ্রিদ ডার্বি'তে অ্যাটলেটিকোকে প্রায় পুরোটা ম্যাচই চেপে ধরেছিল রিয়াল। কিন্তু বরাবরের মত আবারও রিয়ালের সামনে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অ্যাটলেটিকোর স্লোভেনিয়ান গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক। পুরো ম্যাচে অবিশ্বাস্য কিছু সেভে দলের জন্য পয়েন্ট ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। চমৎকার বোঝাপড়ার পরও বারবার প্রতিপক্ষের গোলের সামনে থেকে খালি হাতে ফিরেছে রিয়াল। আক্ষেপটা সবচেয়ে বেশি খুব সম্ভবত মার্কো আসেন্সিওর। ওবলাককে দুবার একা পেয়েও গোল করতে পারেননি তিনি। ৬৪ মিনিটে টনি ক্রুসের দুর্দান্ত এক ডিফেন্সচেরা পাসে ডিবক্সে ওবলাককে একা পেয়ে যান স্প্যানিশ উইঙ্গার। কিন্তু বাঁ-পায়ের প্লেসিং শট না নিয়ে চিপ করেন আসেন্সিও। বাঁ-হাতের থাবায় বল বাইরে পাঠান ওবলাক। আসেন্সিওর মতই রাইটব্যাক দানি কারভাহালকেও খালি হাতে ফিরিয়েছেন তিনি।

    দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময় রিয়ালের আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিল ডিয়েগো সিমিওনের দল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গ্যারেথ বেল ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়লেও রিয়ালের খেলার তার অনুপস্থিতি টের পাওয়া যায়নি একেবারেই। মাঝমাঠে ক্রুস-মদ্রিচ-কাসেমিরো ত্রয়ীর সাথে যুক্ত হন দানি সেবায়োস। ইস্কোর 'ফ্রি রোল'-এ সেবায়োস ছিলেন দুর্দান্ত। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে শুরু করলেও রিয়াল মূলত খেলেছে কিছুটা ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে। আসেন্সিও-বেনজেমার সাথে দারুণ বোঝাপড়ায় সেবায়োস, গোডিনদের বিপাকে ফেলেছিলেন বেশ। আক্রমণাত্মক রিয়ালকে অ্যাটলেটিকোর প্রতি-আক্রমণেও তেমন ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়নি। সার্জিও রামোস, রাফায়েল ভারানরা প্রথমার্ধে কিছুটা হিমশিম খেলেও দ্বিতীয়ার্ধে ছিলেন ইস্পাতদৃঢ়। আঁতোয়া গ্রিযমান, ডিয়েগো কস্তা, সল নিগুয়েজ, আনহেল কোরেয়াদের কেউই সুবিধা করতে পারেননি একেবারেই। এত চেষ্টার পরও গোলের দেখা না পাওয়ায় ম্যাচের মিনিট দশেক বাকি থাকতে বার্নাব্যু সমর্থকদের মুখে 'রোনালদো! রোনালদো!!' চিৎকারে যেন কেঁপে উঠল পুরো মাদ্রিদ! গোলখরার এমন দিনে তো তাকে মিস করা খুব একটা আশ্চর্যজনক নয়।

     

     

    দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল যেমন ছিল চালকের আসনে, প্রথমার্ধে ম্যাচে ছড়ি ঘুরিয়েছে অ্যাটলেটিকো। ম্যাচের শুরুতে বিশ্বসেরা গোলরক্ষকের অ্যাওয়ার্ডটা আজ মাদ্রিদ সমর্থকদের সামনে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। একইভাবে মাদ্রিদ সমর্থকদের সামনে প্রথমবারের মত নিজের ব্যালন ডি'অর তুলে ধরেন লুকা মদ্রিচ। ফিফার বর্ষসেরা একাদশে সুযোগ পাওয়া রামোস, ভারান, মার্সেলোও ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন নিজ সমর্থকদের সামনে। তবে ম্যাচের ৩ মিনিটেই লিড নিতে পারত তারা। কিন্তু গোলের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে সলের শট দলখহাতে ফিরিয়ে দেন থিবো কর্তোয়া। সাবেক দলের বিপক্ষে নিজের প্রথম 'ডার্বি'তে রীতিমত 'লেটার মার্কস' নিয়েই উন্নীত হয়েছেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক।

    কিন্তু ১৮ মিনিটে গ্রিযমানকে যেভাবে গোলবঞ্চিত করেছেন, তাতে সমগ্র বার্নাব্যু জোর করতালি এবং 'থিবো! থিবো!' চিৎকারে অভিবাদন জানায় নিজেদের নতুন গোলরক্ষককে। এর মিনিট তিনেক পর প্রথমার্ধে নিজেদের সেরা সুযোগটা পেয়েছিল রিয়াল। কিন্তু ক্রুসের ফ্রিকিকে বেলের ভলি চলে যায় গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। দুই অর্ধ মিলিয়ে এগিয়ে ছিল রিয়ালই। কিন্তু ওবলাককে আর ফাঁকি দেওয়া হয়ে উঠেনি। শেষদিকে 'এলিমেন্ট অফ সারপ্রাইজ' হিসেবে ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে নামিয়ে দেন লোপেতেগি। কিন্তু এই শতাব্দীতে জন্ম নিয়ে রিয়ালের হয়ে খেলা একমাত্র ফুটবলার তেমন কিছুই উপহার দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত আবারও পয়েন্ট ভাগাভাগিতেই শেষ হয় আরেকটি মাদ্রিদ ডার্বি।