হারের 'হ্যাটট্রিক' করল রিয়াল মাদ্রিদ
শেষ চার ম্যাচে জয় বা গোল- দেখা নেই কোনোটিরই। সেই আশির দশক থেকে এতটা ফর্মহীনতায় ভুগতে হয়নি রিয়াল মাদ্রিদকে। ১৯৮৫ সালের পর মৌসুমে সবচেয়ে বাজে শুরুটা এবারই হয়েছিল হুলেন লোপেতেগির দলের। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আজ রিয়ালের প্রতিপক্ষ ছিল লেভান্তে, টেবিলে যাদের অবস্থান ১২তম। খর্বশক্তির প্রতিপক্ষ, সাথে ইস্কো-বেল-বেনজেমাদের স্কোয়াডে ফেরা- সব মিলিয়ে এই ম্যাচ দিয়েই জয় এবং গোলখরা কাটানোর স্বপ্ন দেখছিল রিয়ালের সমর্থকেরা। গোলখরা কেটেছে ঠিকই, কিন্তু আবারও ফিরতে হয়েছে খালি হাতেই। নিজেদের মাঠেই লেভান্তের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছে রিয়াল। ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম টানা ৩ ম্যাচ হারল 'লস ব্লাঙ্কোস'রা।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আজ মূল একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন লোপেতেগি। মাঝমাঠে চোট কাটিয়ে ফিরেছিলেন ইস্কো। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছিলেন গ্যারেথ বেল, করিম বেনজেমাও; কিন্তু তারা ছিলেন বেঞ্চে। মূল একাদশে মার্কো আসেন্সিওর সাথে নেমেছিলেন লুকাস ভাজকেজ এবং মারিয়ানো দিয়াজ। একসাথে তেমন একটা না খেলার কারণে রিয়ালের আক্রমণভাগে বোঝাপড়ার অভাবটা ছিল সুস্পষ্ট। সেটার সুযোগ নিয়েছে লেভান্তে।
৬ মিনিটে বার্দির লম্বা পাস রাফায়েল ভারানের ভুলে গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে একা পেয়ে যান হোসে লুইস মোরালেস। বেলজিয়ান গোলরক্ষককে কাটিয়ে ফাঁকা পোস্টে বল পাঠাতে ভুল করেননি তিনি। ৪ ম্যাচ ধরে গোল বা জয়হীন রিয়াল আবারও পিছিয়ে পড়ায় দুয়োধ্বনিতে ফেটে পড়ে সমগ্র বার্নাব্যু। কিন্তু তাতে তো রিয়ালের সম্বিৎ ফেরেই নি, উলটো ১২ মিনিটে আবারও গোল করে বসে লেভান্তে। প্রথম গোলের মত এবারও খলনায়ক ছিলেন ভারানই। ডিবক্সের মধ্যে মোরালেসের ক্রস তার হাতে লাগায় ভিডিও রেফারির সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। ১২ গজ থেকে কর্তয়াকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি মার্তি।
একদিকে লেভান্তের উল্লাস, অন্যদিকে লোপেতেগি-রামোসদের মুখ লুকোনোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা- দু’দলের মনস্তাত্বিক অবস্থা বোঝানোর জন্য যেন এই খণ্ডচিত্র গুলোই যথেষ্ট। মৌসুম আর সম্মান, দুই-ই বাঁচাতে ব্যগ্র রিয়াল অবশ্য ১৭ মিনিটে জাল খুঁজে পেয়েছিল ঠিকই । কিন্তু অফসাইডে থাকায় ভিডিও রেফারির সাহায্যে বাতিল হয় আসেন্সিওর হেডে করা গোল। হতাশার দীর্ঘশ্বাস তখন সমগ্র বার্নাব্যু জুড়ে। ডাগআউটে মাথা নিচু করে দলের অসহায়ত্বে শামিল হচ্ছেন বেল-ক্রুসরা। আসেন্সিওর গোল বাতিল হওয়ার পর থেকেই মূলত লেভান্তেকে চেপে ধরে রিয়াল। ২২ মিনিটেই ম্যাচে ফিরতে পারত তারা। কিন্তু ভাজকেজ, রামোসকে দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন লেভান্তে গোলরক্ষক সার্জিও ওইয়ের। ‘লা মাসিয়া’ থেকে উঠে আসা এই গোলরক্ষক বার্সায় থিতু হতে পারেননি, লেভান্তেতেই গড়েছেন ভিটেমাটি। রিয়ালের বিপক্ষে এই ম্যাচ তো তার জন্য ‘এল ক্লাসিকো’র-ই সমান। সে ম্যাচেই নিজের জাত চেনালেন ওইয়ের। তবে প্রথমার্ধে গোল না খাওয়ার পেছনে ভিডিও রেফারির সাথে রিয়ালের দুর্ভাগ্যকেও ধন্যবাদ জানাতে পারে লেভান্তে। কিন্তু ৩৪ মিনিটে কাসেমিরোর হেড ওইয়েরকে পরাস্ত করলেও ফিরে আসে ক্রসবারে প্রতিহত হয়ে।
গোলের আশায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বেলকে নামিয়ে দেন লোপেতেগি। কিন্তু লাভ হয়নি তাতেও। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৬ মিনিটে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ‘রেকর্ড’- হয়ে যায় রিয়ালের। ২০১৮-১৯ মৌসুমে গত ৪৬৫ মিনিটে জাল খুজে পায়নি রিয়াল, যা ক্লাবটির ১১৬ বছরের ইতিহাসেই দীর্ঘতম গোলখরা। বেলের পর বেনজেমাকেও নামিয়ে দেন লোপেতেগি। কিন্তু কাজের কাজটা আর হয়নি। ৭০ ভাগ পজেশন, গোলে ৮বার শট- কোনোভাবেই যেন লেভান্তের রক্ষণভাগকে পরাস্ত করতে পারছিলেন না বেলরা। ৬৬ মিনিটে বেলের দুর্দান্ত ফ্রিকিক রীতিমত অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন ওইয়ের।
তবে ৭২ মিনিটে আর দমিয়ে রাখা যায়নি রিয়ালকে। বেনজেমার পাস থেকে জোরাল শটে ব্যবধান কমান মার্সেলো। সেই সাথে ইতি টেনে দেন রিয়ালের ৪৮১ মিনিটব্যাপী গোলখরার। গোলের পর সমর্থকদেরও পাশে পেয়ে যায় রিয়াল। নতুন উদ্যমে জাগ্রত রিয়াল সমতায় ফিরতে পারত এর মিনিট পাঁচেক পরই। কিন্তু বেনজেমার চমৎকার বাঁকানো শট প্রতিহত হয় বারপোস্টে। শেষ পর্যন্ত হার নিয়েই ফিরতে হয় রিয়ালকে।
মাত্র কয়েক ম্যাচেই জয়ের দেখা না পেলেই কোচ ছাটাইয়ের ‘সুনাম’ আছে রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের। লোপেতেগির কপালে কী জোটে- তা সময়ই বলে দেবে সামনেই।