• লা লিগা
  • " />

     

    শীর্ষে উঠেও স্বস্তি পেল না বার্সা

    শীর্ষে উঠেও স্বস্তি পেল না বার্সা    

    লিওনেল মেসি মাঠে ছিলেন ১৬ মিনিট। সেভিয়াকে হারানোর ভীতটা ওই সময়ের মধ্যেই গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর ধুঁকেছে বার্সা। আরও বেশি ধুঁকেছেন আসলে বার্সা অধিনায়ক। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে যাওয়ার সময় বেকায়দায় পড়েছে হাত, পড়ে গিয়ে ব্যাথায় কাতারাতে থাকা মেসি এরপর ছেড়েছেন মাঠ। শুধু মাঠই নয়, ন্যু ক্যাম্প থেকে মেসিকে সোজা যেতে হয়েছে হাসপাতালে। এরপর বাকি সময়ে বার্সা দিয়েছে আরও দুই গোল, হজম করেছে আরও দুইটি। গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান এরপর দুর্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন একাই। তাতেই সেভিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেছে এর্নেস্তো ভালভার্দের দল।
     


    আরও পড়ুনঃ ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়লেন মেসি



    আগামী সপ্তাহেই এল ক্লাসিকো। চ্যাম্পিয়নস লিগে ইন্টার মিলানের মুখোমুখিও হতে হবে বার্সাকে। মেসিকে ম্যাচের মাঝপথে হারিয়ে তাই শীর্ষে ওঠার আনন্দটা ম্লান হয়েছে বার্সার। ডান হাতের রেডিয়াল বোন ভেঙে তিন সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে মেসিকে। প্রায় দশ বছর পর তাই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো-মেসি বিহীন এক ক্লাসিকো অপেক্ষা করছে সবার জন্য।


    লা লিগায় চার ম্যাচ পর জয় পেয়েছে বার্সা, দিনের শুরুটাই জয়খরা কাটানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল। ম্যাচের দুই মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যায় বার্সা। মেসি-সুয়ারেজ-কৌতিনহোর সবাই অবদান রেখেছেন ওই গোলে। শুরুটা করেছিলেন সেমেদো, ডান দিক দিয়ে এগিয়ে গিয়ে সুয়ারেজকে পাস দিয়ে, সেখান থেকে মেসি। এরপর সেভিয়ার দুই ডিফেন্ডারের ভেতর দিয়ে ফিলিপ কৌতিনহোকে খুঁজে পেয়েছিল মেসির নিখুঁত পাস। এরপর ১৬ গজ দূর থেকে বাঁকানো শটে কপ কর্নারে বল জড়িয়ে স্বভাবসুলভ গোল করেন কৌতিনহো। আক্রমণে ভালো হলেও, রক্ষণের পুরনো সমস্যাটা ম্যাচের শুরুতেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বার্সার জন্য। ৬ মিনিটেই পাবলো সারাভিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বার্সার বারপোস্ট। মিনিট চারেক পর বক্সের ভেতর থেকে করা মেসির শট ঠেকিয়ে দিয়ে রক্ষণও গুছিয়ে নিচ্ছিল তারা। কিন্তু খুব বেশিক্ষণের জন্য ছিল না সেভিয়ার সুসময়, হেসুস নাভাসের ভুল থেকে বল পায় বার্সা। মিডফিল্ড থেকে সুয়ারেজের পাস আবার মেসিকে রিসিভ করেন ডিবক্সের কোণায়।  এরপর সেভিয়ার দুই ডিফেন্ডার কাটিয়ে কোণাকুণি শটে গোল করে মেসি ১২ মিনিটেই দুই গোলে এগিয়ে দেন বার্সাকে। এর কিছুক্ষণ পরই ইনজুরিতে পড়েন তিনি। ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতেই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।

    মেসির বদলি হয়ে নামা উসমান ডেম্বেলে ভালোই খেলছিলেন। ৩৮ মিনিটে ভালো একটা সুযোগ তৈরি করেছিলেন। এরপর প্রথমার্ধের শেষদিকে রাকিটিচকে একটা পাস দিয়েছিলেন, কিন্তু রাকিটিচের করা চিপ সহজেই লুফে নেন গোলরক্ষক। সেভিয়ার আক্রমণভাগও ছিল কিছুটা মলিন, প্রথম দিকে বারপোস্টে শট করার পর ৪৩ মিনিটে কর্নার থেকে একটা হেড করেছিলেন দানিয়েল কারিসো- এছাড়া আর বলার মতো আক্রমণ করতে পারেনি সেভিয়া।


    দ্বিতীয়ার্ধে খেলার চেহারা পাল্টেছে বহুবার। তবে পরের অর্ধের নায়ক বার্সা গোলরক্ষক স্টেগানই। ৬০ মিনিটে দুর্দান্ট ডাবল সেভ করে সেভিয়াকে ম্যাচে ফিরতে দেননি তিনি। ডান দিক থেকে আসা ক্রসে প্রথমে হেড করেছিলেন আন্দ্রে সিলভা। সেই হেড ঠেকিয়ে রিবাউন্ডে আবারও তিনি ফেরান ভাজকেজের গোলমুখী শট। হঠাত মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা সেভিয়ার আক্রমণ সামলাতে তখন হিমশিমই খেতে হচ্ছিল পিকে-লংলেদের। ৬৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে সুয়ারেজ অবশ্য স্বস্তি যুগিয়েছিলেন দলকে। গোলরক্ষক থমাস ভাসলিকের সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানে ছিলেন, ভাসলিকই এগিয়ে এসে ফাউল করেছিলেন। পুরো ম্যাচে বেশ কয়েকবার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করলেও পেনাল্টি থেকে আর ভুল করেননি সুয়ারেজ। সতীর্থদের সঙ্গে লিংক আপ প্লেতে দুর্দান্ত হলেও সুয়ারেজের ফিনিশ আরেকটু ভালো হলে ম্যাচটা হয়ত আরও সহজেই জিততে পারত বার্সা।  আর পেনাল্টি ঠেকাতে না পারলেও ভাসলিকও ৭৩ মিনিটে দুর্দান্ত এক সেভ করে সুয়ারেজকে পেতে দেননি জোড়া গোল।



    ওই পুঁজিতেই শেষ দশ দিকেও লড়াই চালিয়ে যায় সেভিয়া। ৭৯ মিনিটে পাওয়া গোলটায় অবশ্য ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছে তারা। সারাবিয়ার শট সাবেক বার্সা সেভিয়া সতীর্থ লংলের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে ঢুকে যায় স্টেগানের জালে। ৩-১ স্কোরলাইনে শেষ দশ মিনিটে বার্সার ভোগার কারণ তাদের রক্ষণ। আর্তুর মেলো বদলি হয়ে মাঠ ছাড়ার পরই সেভিয়া আক্রমণে ধার বাড়ায়। কিন্তু বার্সার বারপোস্টের নিচে দাঁড়ানো স্টেগানকে আর টলাতে পারেনি তারা। ৮৫ মিনিটে আবারও অভাবনীয় ডাবল সেভ করেন স্টেগান। প্রথম বারে ঠেকান সারাবিয়ার শট, পরে বেন ইয়েদ্দারে। অতিমানব হয়ে ওঠা স্টেগানকে পরের মিনিটে সঙ্গ দেন লংলেও। ডানদিক থেকে আসা বলে গোল করতে পারতেন মুরিয়েল, বেন ইয়েদ্দের- দুইজনই। লংলে সময় মতো বল ক্লিয়ার করেন সেই দফায়।

    ৮৮ মিনিটে সেভিয়ার আরেক সাবেক খেলোয়াড় অস্বস্তি কাটান ন্যু ক্যাম্পে। হাভ ভলিতে দেখার মতো আরেকটি গোল করেন ইভান রাকিটিচি।  গোলের পর উদযাপন করেননি তিনি, অন্যপাশে ৯০ মিনিটে গোল দিয়ে উযাপন করেননি লুইস মুরিয়েলও। রাকিটিচ সম্মান দেখিয়েছেন সাবেক ক্লাবের প্রতি, আর মুরিয়েল জানতেন- একটু বেশি দেরি করে ফেলেছেন তিনি।  

    ম্যাচশেষে লা লিগার শীর্ষে উঠেছে বার্সা, কিন্তু মেসিকে হারানোর শঙ্কা ভর করেছে ন্যু ক্যাম্পে। তাতেই মলিন সেভিয়াকে হারানোর আনন্দ।