• লা লিগা
  • " />

     

    ন্যু ক্যাম্পে দুর্দান্ত বার্সার কাছে নুয়ে পড়ল রিয়াল

    ন্যু ক্যাম্পে দুর্দান্ত বার্সার কাছে নুয়ে পড়ল রিয়াল    

    লিওনেল মেসি নেই, নতুন কারও উত্থানের দরকার ছিল ন্যু ক্যাম্পে। পুরনো নায়কই যেন নতুন করে আবির্ভুত হলেন পুরনো রূপে। লুইস সুয়ারেজের ফর্ম পড়তির দিকেই ছিল, এল ক্লাসিকোতে নিজের জাত চেনালেন নতুন করে। হ্যাটট্রিক করে রিয়াল মাদ্রিদের দুর্দশা আরও বাড়িয়েছেন তিনি। আর ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় বার্সার ছায়ায় পড়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ হারল ৫-১ গোলে।
     

    পুরো ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ আসলে দর্শকই হয়েছিল প্রায় পুরোটা সময়। দ্বিতীয়ার্ধের ২০ মিনিট অবশ্য ভালোভাবেই ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল তারা। কিন্তু সুয়ারেজই শেষ পর্যন্ত রিয়ালকে আর ফিরতে দেননি, বরং ঠেলে দিয়েছেন আরও অনিশ্চয়তার দিকে। ন্যু ক্যাম্পে অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যেই আসলে ম্যাচ শুরু করেছিল দুই দল। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে হারিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ গোল করা প্রায় ভুলেই গেছে। আর মেসি না থাকায় বার্সার হাল কে ধরবেন তা নিয়েও ছিল সংশয়। উসমান ডেম্বেলে একাদশে জায়গা পাননি, রাফিনহাই নেমেছিলেন বার্সার হয়ে। তার সঙ্গে জুটি বেধেছিলেন সুয়ারেজ আর কৌতিনহো। ১১ মিনিটে  বাঁ দিক দিয়ে জর্দি আলবার ক্রস হয়ত মেসিকে খুঁজে পেত, আজ তিনি ছিলেন না, কিন্তু তাতে অসুবিধাও হল না। ডিবক্সের ভেতর জায়গা মতো থাকলেন কৌতিনহো। বাম পায়ে শট করে সহজ ফিনিশে শুরুতেই বার্সাকে এগিয়ে দিলেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। ওই গোলের বিল্ড আপে বার্সা দিয়েছিল ৩০ টি পাস, ফল কৌতিনহোর গোল। শুরুর আধিপত্যই ন্যু ক্যাম্পে একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি করে রেখেছিল, এই ম্যাচ বার্সা হারবে না!



    গোলের পর প্রথমার্ধে বার্সার ছন্দ কাটেনি একবারও। এর আগে ৮ মিনিটে একবার গ্যারেথ বেলের ক্রস থেকে করিম বেনজেমা ডিবক্সের ভেতর বল পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাড়াহুড়ায় আর লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি বেনজেমা। প্রথমার্ধে রিয়ালের আক্রমণ বলে এই একটিই। আর অন্যপ্রান্তে বার্সেলোনা রীতিমত ছড়ি ঘুরিয়েছে রিয়ালের ওপর। ১৯ মিনিটে সার্জিও রামোসের ভুল থেকে আর্তুর মেলো বল পেয়ে গিয়েছিলেন ডিবক্সের বাইরে। সেখান থেকেই দারুণ শট নিয়েছিলেন, কিন্তু নিজের প্রথম ক্লাসিকতে আর তার গোল পাওয়া হয়নি থিবো কোর্তোয়ার কারণে। সেটা নিয়ে আফসোস করার সুযোগ অবশ্য কমই পেল বার্সা। ২৮ মিনিটে রাফায়েল ভারানের গায়ে লেগে ডিবক্সের ভেতর পড়ে গেলেন সুয়ারেজ। উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের আবেদনে অবশ্য প্রথমে সাড়া দেননি রেফারি। প্রথমবারের মতো এল ক্লাসিকো তাই পেল ভিএর এর উত্তেজনাও। সেখান থেকেই রেফারি সিদ্ধান্ত বদলালেন, পেনাল্টি পেল বার্সা। সুয়ারেজই নিলেন স্পট কিক, ম্যাচের আধ ঘণ্টা পেরুতেই ২-০ তে এগিয়ে বার্সা। প্রথমার্ধ শেষের কিছুক্ষণ আগে  জেরার্ড পিকে হেডটা মিস না করলে ব্যবধান ৩-০ হতেও পারত।

    বিরতির পর অবশ্য ভয় জেঁকে বসল বার্সার। এর আগে ন্যু ক্যাম্পের শেষ ৪ ক্লাসিকোতে প্রথমে এগিয়ে গিয়েও জেতা হয়নি কাতালান দলটির। ৫০ মিনিটে গোল হজম করে পুরনো ভূত তাড়িয়ে বেড়িয়েছে বার্সাকে। দুর্দান্ত এক ফিরে আসার গল্প রচনা করার পথেই এগুচ্ছিল রিয়াল। বিরতির পর রাফায়েল ভারানকে বসিয়ে লুকাস ভাসকেজকে নামিয়ে দিয়েছিলেন হুলেন লোপেতেগি। ৩-৪-৩ এ আক্রমণে ধার বাড়ে রিয়ালের, আর প্রথম গোলটাও পেতে সময় লাগেনি তাদের। ভাসকেজই ক্রস করলেন ডিবক্সের ভেতর থেকে, টের স্টেগানের  আঙ্গুলে লেগে, লংলের গায়েও লাগল সেই ক্রস। তারপর পেলেন মার্সেলো। পিকেকে বোকা বানিয়ে রিয়ালকে ম্যাচে ফেরানোর প্রাথমিক কাজটা করে রাখলেন তিনি গোল করে। স্ট্রাইকারদের গোলখরায় কাটানোর দিনগুলো যেন মার্সেলোই ভরসা, এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচেই গোল করলেন তিনি। লাইফলাইন পেয়ে উজ্জীবিত রিয়াল তারপর আরও চড়াও হয় বার্সার ভঙ্গুর রক্ষণের ওপর। ৫৬ মিনিটে লুকা মদ্রিচ গোল পেতে পেতেও পেলেন না, তার শট বারপোস্টে লেগেও ফেরত আসল গোললাইন থেকে। ভাগ্য ফিরে না তাকালে বুঝি এমনই হয়! কিন্তু  কিছুক্ষণ পর বেনজেমা যে মিসটা করলেন সেটাকে আর ভাগ্যের দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাবেন না। ভাসকেজই ডান দিক থেকে ক্রস করলেন, ফাঁকায় থেকেও হেডটা লক্ষ্যেই করতে পারলেন না বেনজেমা। ৬৮ মিনিটের ওই মিসটা বড় আক্ষেপ হয়ে থাকল রিয়ালের জন্য।




    ম্যাচের ঘণ্টাখানেক পার হওয়ার পর বার্সা অবশ্য বুঝতে পারল আক্রমণই সেরা রক্ষণ। ভালভার্দেও ডেম্বেলেকে বসিয়ে নতুন কিছু চেষ্টা করলেন। তাতেই ঘুরল ম্যাচের মোড়। ৭৫ মিনিটে আক্রমণের শুরু ডেম্বেলের কাছ থেকেই, তিনি বল বাড়ালেন ডান দিকে। সার্জি রবার্তো ৬০ মিনিটে একটা ক্রস করেছিলেন, কিন্তু সেবার সুয়ারেজ মেরেছিলেন বারপোস্টে। এবার আর কোনো সুযোগই দিলেন না সুয়ারেজ, দুর্দান্ত এক হেড করে ন্যু ক্যাম্পে স্বস্তি ফেরালেন তিনিই। সুয়ারেজ অবশ্য সেখানেও থামলেন না। টালমাটাল রিয়ালের রক্ষণ ধ্বসে পড়ল ৮৩ মিনিটে আরেকবার, রামোসের ভুলে বল পেলেন রবার্তো। এবারও সুয়ারেজকে বাড়ালেন তিনি, কোর্তোয়ার সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানে চিপ করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন বার্সার নাম্বার নাইন। রোমারিও, মেসির পর বার্সার তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এল ক্লাসিকতে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন সুয়ারেজ।   

    বার্সার চতুর্থ গোলের পর মাঠে নামেন আর্তুরো ভিদাল। বাকি সময়ে তিনিও করলেন আরেকটি গোল। তাই ৫ গোল হজমের গ্লানি নিয়ে ফিরল রিয়াল। শেষদিকে ব্যবধানটা একটু কমাতেও পারতেন বেনজেমা, কিন্তু তিনি আরও হতাশা বাড়িয়েছেন মিস করে। অবশ্য সেভাবে হিসাব করলে নেলসন সেমেদোও গোল করতে পারলে ব্যবধান একই থাকে ম্যাচের!  

    আগের সপ্তাহে মেসিকে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ওঠার আনন্দটা পুরোপুরিভাবে উপভোগ করতে পারেনি বার্সা। এদিন দর্শক সারিতে বসে খেলা দেখেছেন মেসি, সবগুলো গোলের পর ক্যামেরা খুঁজে নিয়েছে তাকে। ম্যাচের শুরু থেকে চলা ন্যু ক্যাম্পের উৎসব নতুন মাত্রা পেয়েছে ম্যাচ শেষে, সেটা চলবে সারা রাত আর রিয়ালের চিত্রটা ঠিক তার উলটো, দুর্দশার শেষ কোথায়? লা লিগার পয়েন্ট তালিকায় রিয়াল এখন ৯ এ। চাকরিটা কি হারাবেন লোপেতেগি? নাকি এখান থেকে উদ্ধার করতে পারবেন রিয়ালকে?       
     


    বার্সেলোনা একাদশ 
    মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান, সার্জি রবার্তো, জেরার্ড পিকে, লংলে, জর্দি আলবা, ইভান রাকিটিচ, সার্জিও বুস্কেটস, আর্তুর, রাফিনহা, লুইস সুয়ারেজ, ফিলিপ কৌতিনহো 

    রিয়াল মাদ্রিদ একাদশ 
    থিবো কর্তোয়া, নাচো ফার্নান্দেজ, রাফায়েল ভারা, সার্জিও রামোস, মার্সেলো, কাসেমিরো, লুকা মদ্রিচ, টনি ক্রুস, গ্যারেথ বেল, করিম বেনজেমা, ইস্কো