রোনালদো : পেরেজের জন্য রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছি
গত জুলাই মাসে হঠাত করেই রিয়াল মাদ্রিদ থেকে জুভেন্টাসে পাড়ি জমান ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। রিয়ালের সঙ্গে ৯ বছরের সম্পর্ক শেষ করেছেন রোনালদো। ৩৩ বছর বয়সীর ক্লাব ছাড়ার কারণ হিসেবে তখন রিয়ালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রোনালদো নিজেই থাকতে চাননি। ফ্রান্স ফুটবলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে রোনালদো বলছেন অন্য কথা। আর কিছু নয়, ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের জন্যই নাকি রিয়াল ছাড়তে হয়েছে তাকে, আর মিডিয়াতে বলা কথাগুলোও পুরোপুরি মিথ্যা বলে মন্তব্য করেছেন রোনালদো।
"বাণিজ্যিক কারণ বাদে সে আমার সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক রাখতে চায়নি। এটা আমি জানি। সে আমাকে কখনও মন থেকে কিছু বলত না।"- পেরেজকে নিয়ে রোনালদোর অভিযোগ। রিয়ালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, "রোনালদো নিজেই ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিল"- কিন্তু পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড বলছেন, পেরেজের আচরণই বদলে গিয়েছিল শেষদিকে।
"ক্লাবের পক্ষ থেকেই অবহেলাটা বুঝতে পারছিলাম। বিশেষ করে পেরেজের কাছ থেকে। আমি বুঝতে পারছিলাম তারা আর আমাকে চাচ্ছে না এখানে। প্রথম চার বছরে আমার কাছে আসলেই মনে হয়েছিল যে হ্যাঁ আমিই, 'ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো'। এরপর থেকে আস্তে আস্তে অনুভূতিটা কমেছে আমার। প্রেসিডেন্টের কাছ থেকেও আর আগের মতো আচরণ পাইনি আমি। ভাবটা এমন ছিল যে আমাকে না হলেও হবে তাদের। আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি, আশা করি বুঝতেই পারছেন!"
"এটাই আমাকে ক্লাব ছাড়ার ব্যাপারে ভাবিয়ে তুলেছিল। আমি খবর দেখতাম, সেখানেও দেখতাম তারা বলে বেড়াচ্ছে আমি নাকি ক্লাব ছাড়তে চাই। আমার সবসময় মনে হত প্রেসিডেন্ট আমাকে ধরে রাখবেন না। আমি টাকার জন্য ক্লাব ছাড়িনি। টাকা কামাতে চাইলে তো চীনেই যেতে পারতাম। তাহলে এখনের চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বেশি টাকা পেতাম। জুভেন্টাসেও আমি রিয়ালের মতোই টাকা পাচ্ছি। ব্যাপারটা কখনোই বেতন সংক্রান্ত ছিল না। পার্থক্যটা হচ্ছে জুভেন্টাস আমাকে আসলেই চেয়েছে। আমাকে তারা সেটা দেখাতেও পেরেছে যে তারা আমাকে চায়।"
জিনেদিন জিদান ম্যানেজারের পদ ছাড়ায় রোনালদোর সিদ্ধান্ততে প্রভাব পড়েছে কী না সেই প্রশ্নের জবাবে রোনালদো বলেছেন, "জিদানের ক্লাব ছাড়ার সঙ্গে আমার সিদ্ধান্তের কোনো সম্পর্ক নেই।"
রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদকে জিতিয়েছেন ১৫ টি শিরোপা, এর মধ্যে ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ আর দুইটি লা লিগা। ব্যালন ডির জিতেছেন সব মিলিয়ে পাঁচবার। এবারের ব্যালন ডি অরও জিততে চান তিনি। রোনালদোর মতে তিনিই যোগ্য এই শিরোপার, "আমার মনে আমারই পাওয়া উচিত এবারের ব্যালন ডি'অর। হ্যাঁ আমি ছয়বারের মতো ব্যালন ডির জিততে চাই, আর লিওনেল মেসিকে ছাড়িয়ে যেতে চাই।"
মাঠের সঙ্গে মাঠের বাইরের ঘটনা নিয়েও রোনালদো শিরোনাম হয়েছেন বেশ কিছুদিন ধরে। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন রোনালদো। তবে এর প্রভাব পড়েছে তার পরিবারের ওপর, সেটা নিয়েও কিছুটা অসস্তুষ্ট রোনালদো, "অবশ্যই এই ব্যাপারটা আমার পারিবারিক জীবনে প্রভাব ফেলেছে। আমার একজন সঙ্গী আছে, চারটি বাচ্চাও আছে, বয়স্ক মা আছেন, ভাই-বোন মিলিয়ে বিরাট পরিবার আমার। সবকিছু পর আমার একটা সুনাম আছে সমাজে, এবং সেটা অনুকরণীয়। এমন অবস্থায় চিন্তা করুন একজন আপনার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনল। আপনার কিছু থাকুক বা না থাকুক, আমি জানি কী করেছি। সত্যিটা একদিন তো বের হবেই। এবং আমার জীবনকে সার্কাস মনে করে এটাকে উপভোগ করতে চায় তারাও জানবে।"
"আমি আমার সঙ্গীর কাছে ব্যাপারটা খুলে বলেছি। আমার ছেলে ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়রকেও বলেছি, তার যদিও এখনও বোঝার মতো বয়স হয়নি। আমার মা আর বোনদের জন্য এটা অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা, তারা হতভম্ব হয়েছে এবং খুবই রেগেছে। জীবনে আমি প্রথমবার তাদের এমন অবস্থায় দেখেছি।"