দিনটা বাংলাদেশের হতে দিলেন না উইলিয়ামস
প্রথম টেস্ট, সিলেট
১ম দিনশেষে
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস* ২৩৬/৫ (উইলিয়ামস ৮৮, মাসাকাদজা ৫২, মুর ৩৭*, তাইজুল ২/৮৬, মাহমুদউল্লাহ ১/২)
লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই আবু জায়েদের ভেতরের দিকে তীক্ষ্ণভাবে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। প্রথম সেশনে জিম্বাবুয়েকে চেপে ধরার ইঙ্গিতটা দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই জোরালো হলো আরও। শন উইলিয়ামস বাধা হয়ে দাঁড়ালেন, সিকান্দার রাজার পর সঙ্গী হিসেবে তিনি পেলেন পিটার মুরকে। চা-বিরতির পরপরই আবার জায়েদের তীক্ষ্ণ মুভমেন্ট, আম্পায়ার আউটও দিলেন মুরকে। তবে রিভিউয়ে বদলালো সে সিদ্ধান্ত। মাহমুদউল্লাহ এসে ফেরালেন উইলিয়ামসকে, তবে তার আগেই ৮৮ রানের ইনিংসে তিনি নিশ্চিত করেছেন, প্রথম দিনটা শুধুই বাংলাদেশের হচ্ছে না। রেজিস চাকাভাকে নিয়ে শেষবেলাটা নিরাপদেই কাটিয়ে দিলেন ১২২ বলে ৩৭ রান করা মুর। বাংলাদেশের তিন স্পিনার বা আবু জায়েদ বের করতে পারলেন না সেই মোক্ষম অস্ত্রটাই, যা ছিঁড়েফুঁড়ে দিতে পারে জিম্বাবুয়েকে।
সিলেটে প্রথম দিনটা তাই প্রায় সমানই। নীচু বাউন্স আর ধীরগতির উইকেটে জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানরা বাংলাদেশী বোলারদের সামলেছেন ভালভাবেই, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন উইলিয়ামস। রান উঠেছে ২.৫৯ হারে, তবে ধসের শঙ্কা দূরে ঠেলে ৫টির বেশি উইকেট হারায়নি তারা। শুরুটা ভালোই করছিলেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ব্রায়ান চারি শুরুর কয়েকটা ওভার দেখে খেলার পর হাত খুলে খেলতে শুরু করেছেন। তারপরও প্রথম উইকেটটা উপহারই পেয়েছে বাংলাদেশ। তাইজুলের সোজা বলটা যেভাবে ইচ্ছা খেলতে পারতেন চারি, কিন্তু লাইন মিস করে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে হয়ে গেলেন বোল্ড। উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে এলেন আনলাকি থার্টিনেই, প্রথম উইকেট পেলেন তাইজুল। মাসাকাদজা অবশ্য স্বচ্ছন্দই ছিলেন, তাইজুলের এক ওভারে মেরেছেন চার-ছয়ও।
মধ্যমণি তাইজুল, সঙ্গে শান্ত/বিসিবি
তবে দিনের সেরা মুহূর্তটি এসেছে টেলর-মাসাকাদজা জুটির ১২ রানের মাথায়। তাইজুলের ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা ডিফেন্ড করতে গিয়েছিলেন টেলর, ব্যাটের কানায় লেগে শর্ট লেগে চলে যায়। মাঠে তখন উড়ছিল অনেক চিল, সেই চিলের মতোই ছো মেরে এক হাতে বলটা মুঠোয় নিয়ে নিলেন অনেক দিন পর টেস্ট দলে ফেরা নাজমুল হোসেন শান্ত। ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে।
মাসাকাদজাকে হারানোর চাপটা এরপর ধীরে ধীরে সামাল দিয়ে গেছেন উইলিয়ামস। প্রথম সেশনের মতো দ্বিতীয় সেশনেও তাদের রানের গতি ছিল মন্থর। লাঞ্চের পর প্রথম ওভারে আবু জায়েদ পাচ্ছিলেন সিম মুভমেন্ট, মাসাকাদজা ফিরলেন তাতেই। তবে জিম্বাবুয়েকে এরপরও চেপে ধরা হলো না ঠিক বাংলাদেশের। সিকান্দার রাজা সঙ্গ দিলেন উইলিয়ামসকে, তিন স্পিনার এলেন ঘুরেফিরে।
সফল হলেন অভিষিক্ত নাজমুল। তার অ্যাঙ্গেল করা বলে রাজার ডিফেন্সের অবস্থা থাকলো যাচ্ছেতাই, ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে প্যাড ঘুরে বল গেল স্টাম্পে। টেস্টে প্রথমবার নাগিন-ড্যান্স দেখাতে পারলেন নাজমুল। রাজার উইকেটের পর বেশ আঁটসাঁট বোলিং করলেন স্পিনাররা, মিরাজ ও অপু মিলে করলেন টানা চার মেইডেন। পিটার মুর থাকলেন ততক্ষণে চালু করেছেন তার রক্ষণাত্মক মোড।
৮৮ রানের ইনিংসে দৃঢ় ছিলেন উইলিয়ামস
উইলিয়ামস ছিলেন পুরোনো মেথডেই, বাজে ডেলিভারি করলে সেগুলোকে রেহাই দেননি তিনি। শর্ট বা ওয়াইড- সেগুলোর স্কোরিং সুযোগ মিস করেননি সেভাবে। চা-বিরতির এক ওভার আগে পূর্ণ করেছেন ফিফটি। ঝুঁকি নেননি সেভাবে, আগলে রেখেছেন উইকেট। শেষ সেশনে ফিরেছেন অন্য ভঙিমায়। তাইজুলকে কাট করে চারের পর ফুলটসে মারলেন ছয়, খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এলেন মুরও। তবে খুব বেশি সময়ের জন্য নয়।
সেঞ্চুরিটা নাগালের মধ্যে চলে আসার পরই “পার্ট-টাইমার” মাহমুদউল্লাহর বাড়তি বাউন্সে ভড়কে গেলেন উইলিয়ামস। ১৭২ বল ব্যাটিংয়ের পরও শট খেলে ফেললেন আগেভাগে, তার আউটসাইড-এজটা স্লিপে বাঁদিয়ে ঝাঁপিয়ে দারুণভাবে নিলেন মিরাজ।
আরেকবার জিম্বাবুয়েকে চেপে ধরার সুযোগ পেল বাংলাদেশ। তবে আবু জায়েদও এলোমেলো হয়ে গেলেন খানিকটা, চাকাভার আউটসাইড-এজটা তার বলে মিস হলো এর মাঝেই। বাংলাদেশের তিন স্বীকৃত স্পিনার মিলে করলেন ৬৭ ওভার। আরিফুল হকের অভিষেক হলো, তবে তিনি করলেন মোটে ৪ ওভার। বাড়তি ১ ওভারও হলো, শুধু দিনে জিম্বাবুয়ের ওপর একহাত দিয়ে রাখা হলো না বাংলাদেশের।
দ্বিতীয় দিন বদলাবে সে চিত্রটা?