সোলারির 'প্রথম' ম্যাচেই জয়খরা কাটাল রিয়াল মাদ্রিদ
অনেকটা হঠাৎ করেই দায়িত্বটা পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কাস্তিয়া থেকে প্রায় বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই তাকে বানিয়ে দেওয়া হয় রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজার। দায়িত্বটা সপ্তাহ দুয়েকের জন্য হলেও কোচ হতে তিনি যে প্রস্তুত- সেটাই জানিয়ে রাখলেন সান্তিয়াগো সোলারি। সাবেক সতীর্থের রোনালদো লিমার মালিকানার দল রিয়াল ভায়াদোলিদকে ২-০ গোলে হারিয়ে লা লিগায় নিজের প্রথম ম্যাচটা জিতে নিলেন সোলারি। নতুন কোচের অধীনে লা লিগায় ৫ ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেল রিয়াল।
লা লিগায় নিজের প্রথম ম্যাচে লোপেতেগির একাদশটাই নামিয়েছিলেন সোলারি। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে আক্রমণভাগে নেমেছিলেন করিম বেনজেমা, গ্যারেথ বেল এবং মার্কো আসেন্সিও। ম্যাচের শুরুতেই লিডটা প্রায় নিয়েই নিয়েছিল রিয়াল। কিন্তু আসেন্সিওর দারুণ থ্রু পাস থেকে বেনজেমার শট চলে যায় ভায়াদোলিদ গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। লা লিগায় নিজেদের শেষ ৬ ম্যাচে অপরাজিত আছে ভায়াদোলিদ। ফর্মটা যে পুরোটাই ভাগ্যের জোরে নয়, তা আজ প্রমাণ করল তারা। প্রথমার্ধে গোলমুখে আর তেমন কোনও সুযোগই তৈরি করতে পারেনি তারা। রক্ষণাত্মক বা বাস পার্ক করে খেলেছে তারা- এমনটাও বলা যাবে না ঠিক। তবে রিয়ালের আক্রমণ সামলানোর কাজটা দারুণভাবেই করেছেন নাচো, মার্টিনেজরা। প্রতি-আক্রমণ নির্ভর ফুটবলে ইউরোপের সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়া ভায়াদোলিদকেই মনে হচ্ছিল ভয়ঙ্কর। ১৪ মিনিটে টনি ভিয়ার দূরপাল্লার শট থিবো কর্তোয়া ফিরিয়ে না দিলে হয়ত তখনই লিড নিত ভায়াদোলিদ। ২৮ মিনিটে ম্যাচের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুযোগটা পেয়েছিল ভায়াদোলিদই। থিবো কর্তোয়াকে একা পেয়েও বল বাইরে মারেন আলকারাজ আন্তোনিতো। নিজেদের মাঠে ভায়াদোলিদের বিপক্ষে দলের এমন গড়পড়তা পারফরম্যান্সের কারণে দুয়ো শুনতে হয়েছে রিয়ালকে। কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি রিয়ালের। ৩৩ মিনিটে আবারও সহজ এক সুযোগ হাতছাড়া করেন আন্তোনিতো, বেঁচে যায় রিয়ালও।
একেবারেই গড়পড়তা এক প্রথমার্ধের পারফরম্যান্সের পর সোলারি নিজেও জানতেন, আজ না জিতলে হয়ত সপ্তাহ দুয়েক পরই চাকরি ছাড়তে হতে পারে তাকে। 'হাফটাইম টিম টক'-এ তাই হয়ত বেশ জোরই দিয়েছিলেন রিয়ালের কিংবদন্তী। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ভায়াদোলিদকে চেপে ধরে রিয়াল। গোলের আশায় রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার কাসেমিরোকে উঠিয়ে ইস্কোকে নামিয়ে দেন সোলারি। স্প্যানিশ মিডফিল্ডারকে দলে পেয়েই জ্বলে উঠে রিয়াল। গোলের সুযোগও আসতে থাকে। কিন্তু রিয়ালের সামনে রীতিমত দুর্ভেদ্য এক দেয়াল হয়ে দাঁড়ান জর্ডি মাসিপ। লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা এই গোলরক্ষক বার্সেলোনায় থিতু হতে পারেননি কখনোই। ৬৩ মিনিটে বেনজেমার চমৎকার বাঁকানো শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। মিনিটখানেক পর কাসেমিরোকেও ফিরিয়েছেন খালি হাতে। ম্যাচের প্রায় ৭০ মিনিট পেরিয়ে গেলেও গোলের দেখা না পাওয়ায় বেশ হতাশই ছিলেন সোলারি।
ম্যাচে একেবারেই সুবিধা করতে না পারা বেলকেও পরে উঠিয়ে নিতে হয় রিয়াল ম্যানেজারকে। লুকাস ভাজকেজকে নামানোর পর ভায়াদোলিদকে আরও চেপে ধরে রিয়াল। কিন্তু মাসিপকে যেন আর পরাস্তই করা যাচ্ছিল না। দ্বিতীয়ার্ধে উলটো গোলের সুযোগ বেশি পেয়েছে ভায়াদোলিদ। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় তাদেরও ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। ৬২ এবং ৬৮ মিনিটে টনি ভিয়ার দুটি দুর্দান্ত শট কর্তোয়াকে পরাস্ত করলেও প্রতিহত হয় রিয়ালের বারপোস্টে। গত সপ্তাহে মেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ খেলা ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে মূল একাদশে অনেকদিন ধরেই দেখতে চাচ্ছিলেন রিয়ালের সমর্থকেরা। উপয়ান্তর না দেখে ৭৫ মিনিটে ঠিকই তাকে নামিয়ে দেন সোলারি। কাস্তিয়ার পর এখন মূল দলেও সোলারিকে কোচ হিসেবে পাওয়া ভিনিসিয়াস তার আস্থার প্রতিদান দিতে নিলেন মিনিট আটেক।
৮৩ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত থেকে ভিনিসিয়াসের ক্রস কিকোর গায়ে লেগে জড়ায় ভায়াদোলিদের জালে। অবশেষে পরাস্ত হন মাসিপ। গোলের পর নিজের 'টেক আ বাও' সেলিব্রেশনে মাদ্রিদ সমর্থকদের আরও মাতিয়ে তোলেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। কিন্তু এতকিছুর মাঝেও কোচকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি তিনি। গোলের পরই ডাগআউটে ছুটে এসে সোলারিকে জড়িয়ে ধরেন ভিনিসিয়াস। ম্যাচের মাত্র মিনিট আটেক আগে গোল খেয়ে হাল ছেড়ে দেয় ভায়াদোলিদ। এই সুযোগে ব্যবধানটাও দ্বিগুণ করে রিয়াল। ৮৮ মিনিটে বেনজেমাকে ডিবক্সে ফেলে দিয়ে রিয়ালকে পেনাল্টি উপহার দেন কায়েরো। ১২ গজ থেকে চমৎকার 'পানেনকা'য় জয় নিশ্চিত করতে ভুল করেননি অধিনায়ক সার্জিও রামোস। গোলের পর উদযাপনের চেয়ে সমর্থকদের ধৈর্য ধরে পাশে থাকার আকুতিই যেন জানিয়ে রাখলেন তিনি। এতদিন গোল করতেই ভুলে যাওয়া রিয়ালকে গত ২ ম্যাচে ৬ গোল করালেন সোলারি, কোনও গোলও হজম করেনি তার দল। দায়িত্ব আপাতত সপ্তাহ দুয়েকের জন্য হলেও পাকাপাকিভাবে দায়িত্ব পাওয়ার দাবিটাই যেন জানিয়ে রাখলেন তিনি।