বার্সার মাঠে বেটিসের উৎসব
ন্যু ক্যাম্পে সবশেষ বার্সেলনা খেলেছিল রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে উৎসবে মেতেছিল কাতালুনিয়া। দুই সপ্তাহ পর রিয়াল বেটিস যখন প্রতিপক্ষ তখন বার্সেলোনাকেই মনে হল অ্যাওয়ে দল। ন্যু ক্যাম্পে বাইরের দলের উদযাপনের কথা তো কালে ভদ্রেও শোনা যায় না। এই মৌসুমে লা লিগায় ধুঁকতে থাকা দল রিয়াল বেটিসই করে দেখাল সেটা। বার্সাকে হতাশায় ডুবিয়ে ৪-৩ ব্যবধানে জিতেছে বেটিস। মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের ভুল, ইভান রাকিটিচের লাল কার্ড, অসহায় রক্ষণ- সব মিলিয়ে দুঃস্বপ্নের এক ম্যাচ পার করেছে বার্সা।
বার্সার হার নতুন করে জমিয়ে তুলেছে লা লিগার শিরোপা দৌড়। ১২ ম্যাচ শেষে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে বার্সা, তবে দুই ও তিনে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ আর দেপোর্তিভো আলাভেসের সঙ্গে তাদের পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র এক।
ইনজুরির কারণে ৫ ম্যাচ মিস করেছিলেন লিওনেল মেসি। সেই ৫ ম্যাচের ৪ টিই জিতেছে বার্সা, হারেনি একটিও। বেটিসের বিপক্ষে ফিরেছিলেন মেসি, গোলও করেছেন দুইটি, কিন্তু এমন ফেরা চাননি তিনি। পুরো ম্যাচে বেটিসের তুলনায় অসহায়ই ছিল ঘরের দল। ৯০ মিনিটের প্রায় পুরোটাই পিছিয়ে ছিল এর্নেস্তো ভালভার্দের দল, আর বেটিসকে পেছনে পড়তে হয়নি একবারও।
ফিলিপ কৌতিনহো, উসমান ডেম্বেলেরা ছিলেনই না দলে। মেসি আর সুয়ারেজের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন ম্যালকম। কিন্তু বার্সার পুরনো সমস্যাটাই আরও একবার পরিস্কার হয়ে গেল ম্যাচের শুরু থেকেই। পিকে, লংলেদের রক্ষণের বেহাল দশার সুবিধা নিয়ে শুরু থেকেই আক্রমণ সাজাচ্ছিল বেটিস। হোয়াকিন আর জিওভান্নি লো সেলসো জুটি গড়ে দুইজনই দুই দফায় গোল করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন প্রথম ১৫ মিনিটের ভেতরই। বেটিসকে অবশ্য এরপর অপেক্ষাও করতে হয়নি খুব বেশি সময়, ২০ মিনিটে জুনিয়র ফিরপো কাট করে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে নিজের জন্য জায়গা করে নেন। এরপর ডান পায়ের শটে গোল করে এগিয়ে নেন বেটিসকে। প্রথমার্ধে চমক বাকি আরও, ৩৪ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণও করে ফেলল বেটিস। আরও একবার রক্ষণের দুর্দশা ফুটে উঠল বার্সার। সাবেক বার্সা খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ান টেয়োই বানিয়ে দিলেন গোলটা, তার ক্রসে হোয়াকিন এবার আর মিস করলেন না। পেনাল্টি নেওয়ার কাছাকাছি জায়গা থেকে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। ভাগ্য আরেকটু ভালো থাকলেই প্রথমার্ধেই ব্যবধান বাড়িয়ে ফেলতে পারত বেটিস। দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরও মরন একটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন গোলের সামনে।
প্রথমার্ধে বার্সার বলার মতো আক্রমণ একটাই। ২৫ মিনিটে মেসির ফ্রি কিক থেকে লংলে ভলি করেছিলেন, গোলরক্ষক পাউ লোপেজের দারুণ সেভ সমতায় ফিরতে দেয়নি বার্সাকে। ম্যাচে এক চিলতে আশার আলো দেখতে বার্সাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৬৮ মিনিট পর্যন্ত। টেয়োই নিজের ডিবক্সের ভেতর ফাউল করে বসেছিলেন জর্দি আলবাকে। পেনাল্টি থেকে এক গোল শোধ দিয়ে বার্সার ফিরে আসার লড়াই শুরুও করেছিলেন মেসি।
কিন্তু বার্সার আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে আড়াল করে বেটিসকে আবারও দুই গোলের লিডে ফিরিয়ে দেন আরেক আর্জেন্টাইন। জিওভানি লো সেলসো পুরো ম্যাচেই খেলেছেন দারুণ, একটা গোল হয়ত তার প্রাপ্যও ছিল। কিন্তু এতো সহজে যে সেটা পেয়ে যাবেন সেটা হয়ত নিজেও ভাবেননি তিনি। ডিবক্সের ভেতর থেকে দুর্বল ডান পায়ে শট করেছিলেন তিনি। টের স্টেগান এই মৌসুমেও বেশ কয়েকবার অতিমানবীয় সেভ করে বার্সাকে বাঁচিয়েছেন বিপদের হাত থেকে। কিন্তু আজ তিনিও যেন যোগ দিলেন নিজের ডিফেন্ডারদের দলে। লো সেলসোর শট সোজাসুজি হাতেই আসত স্টেগানের, কিন্তু তিনি ভুল করে বসলেন। তার হাত ফোঁসকে ৭১ মিনিটে বার্সেলোনা হজম করল তৃতীয় গোল।
২০ মিনিটেরও কম সময় বাকি থাকতে আবারও দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও বার্সাকে আশা দেখিয়েছিলেন আর্তুরো ভিদাল। বদলি হয়ে নেমে ৭৯ মিনিটে এক গোল শোধ দেন তিনি। সেই গোলের উৎসও মিডফিল্ড থেকে বাড়ানো মেসির ডিফেন্সচেরা পাস। কিন্তু ভায়োকানোর মতো আরও একবার যে বার্সার ফিরে আসার হবে সেটা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেল দুই মিনিট পরই। লো সেলসোকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ইভান রাকিটিচ। ১০ জনের দলে পরিণত হয়ে বার্সার সামনে তখন পাহাড় অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জ।
বার্সার মাঠে বেটিসের খেলা দেখে অবশ্য ধন্ধেই পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল, কখনও কখনও কাউন্টার অ্যাটাকেও খেলতে বাধ্য হয়েছে বার্সা। ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পর আরও অসহায় বার্সা, চতুর্থ গোলটাও হজম করে ফেলে।
ফিরপোর পাস থেকে সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড় সার্জিও ক্যানালেস গোল করে উৎসবে মাতেন ন্যু ক্যাম্পে। ১৫বছর পর ঘরের মাঠে ৪ গোল হজমের অস্বস্তিটাও সঙ্গী তখন মেসিদের। অথচ এর কয়েক সেকেন্ড আগেও ফিরপোকে ফিরিয়ে দিয়ে স্টেগান বার্সাকে টিকিয়ে রেখেছিলেন ম্যাচে, তাতেও হুশ ফেরেনি বার্সার এলোমেলো রক্ষণের। ১০ জনের দল নিয়ে অল আউট অ্যাটাকে খেলার ফল পেতেই হয় ভালভার্দের দলকে। ইনজুরির সময়েরও শেষদিকে মেসির গোলটা কেবল সান্ত্বনাই যুগিয়েছে বার্সাকে। এর ভেতর একবার ভিএআরের সাহায্যও নিতে হয়েছে রেফারিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই করে, ২০ বছর পর ন্যু ক্যাম্পে উদযাপন করা থেকে বেটিসকে আটকাতে পারেনি কেউ।