রিয়ালের চার গোলে সোলারির 'চারে চার'
তিনি কোচ হয়ে আসার আগে নিজেদের শেষ ৫ 'অ্যাওয়ে' ম্যাচে জয়ের দেখা পায়নি রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু সান্তিয়াগো সোলারির অধীনে নিজেদের প্রথম তিন ম্যাচই জিতেছিল রিয়াল, গোলও হজম করেনি একবারও। আজ সেল্টার বিপক্ষে সোলারি অধ্যায়ের প্রথম গোল হজম করলেও জয় নিয়ে ঠিকই ফিরেছে 'লস ব্লাঙ্কোস'রা। সোলারির অধীনে রিয়ালে নিজেকে যেন নতুন করেই খুঁজে পেয়েছেন করিম বেনজেমা। আজ তার নৈপুণ্যেই সেল্টা ভিগোকে ৪-২ গোলে হারাল রিয়াল। ২০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ছয় নম্বরেই থাকল সোলারির দল। শীর্ষে থাকা বার্সেলোনা থেকে তাদের ব্যবধান নেমে দাঁড়াল ৪।
নিজেদের শেষ ৩ ম্যাচের প্রতিটিতেই শুরুটা আক্রমণাত্মক ছিল রিয়ালের। বালাইদোস স্টেডিয়ামেও ব্যতিক্রম হয়নি। ম্যাচের ৩ মিনিটেই বেনজেমাকে দুইবার ফিরিয়ে দেন সেল্টা গোলরক্ষক সার্জিও আলভারেজ। তবে ম্যাচের শুরুতেই রিয়ালের এমন চাপেও দমে যায়নি সেল্টা। উলটো ম্যাচের ত৫ মিনিটে সোফিয়ান বুফালের ক্রস রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস লাইন থেকে না ফেরালে তখনই হয়ত লিড নিতে পারত তারা। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে ঠাসা প্রথমার্ধে সুযোগ বেশি পেয়েছে রিয়ালই। ১১ মিনিটে লুকাস ভাজকেজের ক্রস থেকে বেলের হেড চলে যায় সেল্টা গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। ১৩ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ পায় রিয়াল। কিন্তু এবার গোল করতে ব্যর্থ হন টনি ক্রুস।
লিড নিতে না পারা রিয়ালের জন্য আরও দুঃসংবাদ হয়ে ইনজুরিতে পড়ে কাসেমিরোর মাঠ ছাড়া। কাসেমিরো মাঠ ছাড়ার কিছুক্ষণ পর আরেকটু হলেই লিডটা নিয়ে নিত সেল্টা। কিন্তু ১৯ মিনিটে মিডফিল্ডার ওকাইয়ের হেড প্রতিহত হয় রিয়ালের বারপোস্টে। কিন্তু ২৩ মিনিটে আর আটকে রাখা যায়নি রিয়ালকে। লুকা মদ্রিচের দুর্দান্ত পাস নিয়ন্ত্রণে এনে আলভারেজকে পরাস্ত করেন বেনজেমা।
আক্রমণের মতো সোলারির অধীনে রিয়ালের রক্ষণটাও বেশ মজবুত হয়েছে রিয়ালের। সেই প্রমাণও যেন মিলল আজ। আসপাস, গোমেজদের দারুণভাবে দমিয়ে রেখেছিলেন রামোসরা। গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াও ছিলেন দারুণ ফর্মে। ৩৩ মিনিটে আসপাসের জোরাল শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়েছেন তিনি।
প্রথমার্ধে হারাতে হয়েছে ইনজুরিতে পড়া কাসেমিরোকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবারও ইনজুরির কারণে লেফটব্যাক সার্জিও রেগুইলনকেও হারায় রিয়াল। কিন্তু আক্রমণে রিয়ালের ছন্দ বজায় ছিল এতকিছুর পরও। প্রথমার্ধের মতই সেল্টার রক্ষণভাগে ত্রাস ছড়াচ্ছিলেন বেনজেমাই। ৫১ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত থেকে তার চমৎকার বাঁকানো শট ক্রসবারে প্রতিহত না হলে ব্যবধান ঠিকই দ্বিগুণ করতেন তিনি। এজন্য অবশ্য খুব একটা ভুগতে হয়নি রিয়ালকে। কারণ ৫৬ মিনিটে বেনজেমার একক নৈপুণ্যতায়ই ব্যবধান ঠিকই দ্বিগুণ করে রিয়াল। বেনজেমার শট আলভারেজ ফেরালেও উইলি কাব্রালের গায়ে লেগে বল জড়ায় সেল্টার জালে। বেনজেমার সাথে উল্লাসে মাতেন সোলারি, ভিআইপি গ্যালারি থেকে হাততালি দিয়ে দলকে সমর্থন জানান রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজও।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি সেল্টা। বরং ৬১ মিনিটে অধিনায়ক হুগো মায়োর গোলে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় তারা। মাত্র এক গোলের ব্যবধান, রিয়ালকে চেপে ধরেছে সেল্টা- সমগ্র বালাইডোস স্টেডিয়াম যেন পরিণত হয় সেল্টার দ্বাদশ খেলোয়াড়ে। কিন্তু রিয়ালের রক্ষণ বরাবরের মতই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তরুণ হাভি সানচেজকে নিয়ে দারুণভাবে আসপাসদের আটকে দেন রামোস। আর কর্তোয়াও ছিলেন স্বরূপে। সব মিলিয়ে ম্যাচে আর ফেরার তেমন সুযোগই পায়নি সেল্টা।
উল্টো ৮৩ মিনিটে রাইটব্যাক আলভারো ওদ্রিওজোলাকে ফাউল করে রিয়ালকে পেনাল্টি উপহার দেন কাব্রাল। চাপের মাঝেও গত সপ্তাহের মতই 'পানেনকা' পেনাল্টিতে রিয়ালের জয় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক রামোস। এরপরই মূলত হাল ছেড়ে দেয় সেল্টা। কিন্তু রিয়াল হাল ছাড়েনি। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে দানি সেবায়োসের দুর্দান্ত গোলে ব্যবধান ৪-১ করে রিয়াল। কিন্তু সেল্টাও যেন লড়ে গেল শেষ পর্যন্ত। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে সান্ত্বনাসূচক গোলে ব্যবধান ৪-২ করেন ব্রাইস। সোলারির অন্তর্বর্তিকালীন কোচ থাকার শেষ ম্যাচে তাই বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রিয়াল। এখন চাকরিটা স্থায়ীভাবে পাওয়ার দাবি করতেই পারেন তিনি!