• লা লিগা
  • " />

     

    সেই কাজোরলাই জিততে দিলেন না রিয়াল মাদ্রিদকে

    সেই কাজোরলাই জিততে দিলেন না রিয়াল মাদ্রিদকে    

    ম্যাচের আর ৮ মিনিটের মত বাকি তখন। তার গোলেই লিড নিয়েছিল ভিয়ারিয়াল। কিন্তু করিম বেনজেমা এবং রাফায়েল ভারানের গোলে এগিয়েছিল রিয়ালই। কিন্তু ভিয়ারিয়াল যেন হাল ছাড়ার পাত্র নয়। পুরো দ্বিতীয়ার্ধ জোর চেষ্টার পর অবশেষে আসল সেই পরম আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। পাবলো ফোরনালসের ক্রসে নিজের মার্কার মার্সেলোকে ফাঁকি দিয়ে হেড করলেন ভিয়ারিয়াল মিডফিল্ডার সান্তি কাজোরলা। রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়ার দু'পায়ের ফাঁক গলে বল জড়াল রিয়ালের জালে। ৬৩৬ দিন খেলার বাইরে থাকা, পায়ে মোট ১১টি সার্জারি- কোনও কিছুই যেন দমাতে পারল না স্প্যানিশ মিডফিল্ডারকে। তার দু'হাত উঁচিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো উদযাপনের সাথে উল্লাসে ফেটে পড়ল ভিয়ারিয়ালের মাঠ এস্তাদিও লা সেরামিকা। কাজোরলা জোড়া গোলে লা লিগায় বছরের প্রথম ম্যাচেই পয়েন্ট হারাল রিয়াল। ভিয়ারিয়ালের সাথে ২-২ গোলের ড্রয়ে টেবিলের ৪ নম্বরেই থাকল তারা। শীর্ষস্থানে থাকা বার্সেলোনার সাথে পয়েন্টের ব্যবধান গিয়ে দাঁড়াল ৭-এ।

    এস্তাদিও লা সেরামিকায় ম্যাচের শুরু থেকেই রিয়ালকে থিতু হতে দেয়নি ভিয়ারিয়াল। ২ মিনিটেই রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে একা পেয়ে যান উইঙ্গার স্যামুয়েল চুকুয়েজে। কিন্তু নাইজেরিয়ান উইঙ্গারের শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। তবে এর মিনিট দুয়েক পরই রীতিমত 'জিরো' থেকে ভিয়ারিয়ালের 'হিরো'ই হয়ে যান চুকুয়েজে। ৪ মিনিটে দুর্দান্ত এক ড্রিবলে রিয়ালের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে পাস বাড়ান বাঁ-প্রান্তে থাকা সান্তি কাজোরলার দিকে। দর্শনীয় বাঁকানো শটে দলকে লিড এনে দেন সাবেক আর্সেনাল মিডফিল্ডার। ইনজুরির সাথে নিরন্তর পাঞ্জা লড়ে ফুটবলে ফিরতে চাচ্ছিলেন এমন মুহূর্তের জন্যই- কাজোরলার উদযাপন যেন বলে দিচ্ছিল তা-ই। 

     

     

    বছরের প্রথম ম্যাচের শুরুতেই এমন ধাক্কা খেয়ে নড়েচড়ে বসে রিয়াল। সমতায় ফিরতেও সময় নেয়নি তারা। ৭ মিনিটে লুকাস ভাজকেজের ক্রস থেকে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান করিম বেনজেমা। এরপর থেকেই রিয়ালের পাসিং ফুটবলে খেই হারিয়ে ফেলে ভিয়ারিয়াল। গোছানো ফুটবলে লিডটাও নিয়ে নেয় রিয়াল। ২০ মিনিটে ক্রুসের ফ্রিকিক থেকে স্বদেশী বেনজেমার মতই হেড করে জাল খুঁজে পান ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারান। পিছিয়ে পড়ার পর থেকে প্রথমার্ধে যেন আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি ভিয়ারিয়ালকে। ৩৩ মিনিটে ভিয়ারিয়ালের জালে আবারও বল পাঠিয়েছিল রিয়াল। কিন্তু অফসাইডে থাকায় বাতিল হয় মদ্রিচের গোল। এর মিনিট পাঁচেক পর আবারও গোলের সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। কিন্তু বেলের শট এবার দক্ষহাতে ফিরিয়ে দেন ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষক সার্জিও আসেনহো। এই শট নেওয়ার পরই ইনজুরিতে পড়েন বেল, মাঠ ছাড়তে হয় প্রথমার্ধ শেষে। ক্লাব বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়ে নতুন বছরের শুরুটা খুব সম্ভবত এর চেয়ে খারাপ হতে পারত না ওয়েলশ ফরোয়ার্ডের। তার জায়গায় ইস্কোকে নামাতে বাধ্য হন কোচ সান্তিয়াগো সোলারি।

     

     

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ম্যাচে ফিরতে মরিয়া ছিল ভিয়ারিয়াল। দারুণ প্রেসিংয়ে রিয়ালকে পজেশন ধরে রাখতেই দেয়নি তারা। বল দখলে রেখে গোছানো আক্রমণেই রিয়ালের রক্ষণদুর্গ মুহুর্মুহু কাঁপিয়ে দিতে থাকে 'ইয়েলো সাবমেরিন'রা। প্রথমার্ধের সেই চুকুয়েজে-কাজোরলা যুগলবন্দীতেই সমতায় ফিরতে পারত ভিয়ারিয়াল। ৫২ মিনিটে কাজোরলার আগুনে শটে দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। শুরুতেই রিয়ালকে চাপে ফেলে যেন আরও অনুপ্রাণিত হয়ে উঠে তারা।

    ৫৮ মিনিটে কর্তোয়াকে একা পেয়ে যান স্ট্রাইকার জেরার্ড মরেনো। কিন্তু এবারও গোল করতে ব্যর্থ হয় ভিয়ারিয়াল। দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটা সময়ই প্রতি-আক্রমণে খেলা রিয়ালও অবশ্য সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ৬৮ মিনিটে আসেনহোকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি ভাজকেজ। এর মিনিট দুয়েক পর গোলের একেবারে সামনে থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি বেনজেমা। ৭৬ মিনিটে ইস্কোর দূরপাল্লার শট ফিরিয়ে দেন আসেনহো। রিয়ালের এত সুযোগ পাওয়ার অর্ধেও হাল ছাড়েনি ভিয়ারিয়াল। অবশ্য যে দলে কাজোরলার মত হার না মানা যোদ্ধা আছে, তাদেরই তো এমন শেষ পর্যন্ত লেগে থাকাটা আসে। হলও তা-ই। শেষ পর্যন্ত ৮২ মিনিটে কাজোরলার দ্বিতীয় গোলে ঠিকই রিয়ালকে জয় বঞ্চিত করেই মাঠ ছেড়েছে তারা। নিজেদের প্রিয় যোদ্ধার দিগন্তজোড়া হাসিতে হেসেছে সবাই। ভিয়ারিয়ালের হাসির বিপরীতে রিয়ালের কপালে বাড়ল দুশ্চিন্তার ভাঁজ। আর ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে নতুন বছর শুরু করা রিয়াল যেন আরও পিছিয়ে পড়ল শিরোপাদৌড়ে।