রিয়ালকে হতাশ করে বার্নাব্যুতে সোসিয়েদাদের উৎসব
ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে তিনদিন আগে পয়েন্ট হারিয়েছিল তারা। আজ সেভিয়া বনাম অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ম্যাচ ড্র হওয়ায় জিতলে সেভিয়ার সমান ৩৩ পয়েন্ট হত রিয়াল মাদ্রিদের। সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারল না রিয়াল, এবার হেরেই বসলো সান্তিয়াগো সোলারির দল। শেষ ২২ দেখায় মাত্র একবার হারা রিয়াল সোসিয়াদাদের বিপক্ষে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেই হেরে গেছে রিয়াল। ২-০ গোলের হারে পয়েন্ট তালিকায়ও অবনমন ঘটেছে, টেবিলের পাঁচ নম্বরে এখন তারা। গেটাফেকে বার্সেলোনা হারিয়ে দিলে স্পেনের দুই পাওয়ারহাউজের মধ্যে পয়েন্টের ব্যবধান দাঁড়াবে ১০-এ। আর সোসিয়েদাদ বার্নাব্যুতে ম্যাচ জিতল ১৪ বছর পর।
রিয়ালের একাদশে আজ বেশ বড়সড় এক চমকই রেখেছিলেন কোচ সান্তিয়াগো সোলারি। ইনজুরিতে পড়া গ্যারেথ বেলের বদলে ইস্কো নয়, বরং ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত রিয়ালের মূল একাদশে নেমেছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। কিন্তু ম্যাচের শুরুতেই সব হিসাবনিকাশ পালটে যায় রিয়ালের। ২ মিনিটেই সোসিয়াদাদ মিডফিল্ডার মিকেল মেরিনোকে ডিবক্সে ফেলে দিয়ে প্রতিপক্ষকে পেনাল্টি উপহার দেন কাসেমিরো। ১২ গজ থেকে সাবেক দলের বিপক্ষে গোল করতে ভুল করেননি উইলিয়ান হোসে। বছরের প্রথম ম্যাচের শুরুটা আশানুরূপ না হওয়ায় দুয়োধ্বনি শুনতে হয় রামোস-মার্সেলোদের। প্রথমার্ধে লিড নেওয়া সোসিয়াদাদের জমাট রক্ষণভাগ ভেদই করতে পারেননি বেনজেমারা। ডিবক্সে ঢুকতে না পেরে বাইরে থেকে শট নিতেই ব্যস্ত ছিলেন ক্রুস-মদ্রিচরা। ১৭ মিনিটে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিলেন ভিনিসিয়াসই। কিন্তু ডিবক্সের বাইরে থেকে তার শট ফিরিয়ে দেন সোসিয়াদাদ গোলরক্ষক জেরোনিমো রুলি। ৩০ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে মদ্রিচকেও খালি হাতে ফিরিয়েছেন তিনি।
প্রথমার্ধের একেবারে শেষদিকে আরেকটু সমতায় ফিরতে পারত রিয়াল। কিন্তু লুকাস ভাজকেজের শট প্রতিহত সোসিয়াদাদ গোলের বারপোস্টে। জোর দুয়োর মাঝে প্রথমার্ধ শেষ করা রিয়াল দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই চেপে ধরে সোসিয়াদাদকে। দুই উইঙ্গার ভাজকেজ এবং ভিনিসিয়াসকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল ইনিগো মার্টিনেজদের। ৪৮ মিনিটে ভাজকেজের পাস থেকে রাফায়েল ভারানের শট লাইন থেকে ফিরিয়ে দেন মিকেল ওয়ারজাবাল। গোল বাঁচিয়েছিলেন দ্বিতোয়ার্ধের শুরুতেই। ৫০ মিনিটে দুর্দান্ত এক প্রতি-আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতেন ওয়ারজাবাল নিজেই। কিন্তু মিকেল জুরুতুজার থ্রু পাস থেকে তার শট চলে যায় থিবো কর্তোয়ার গোলের সামান্য উপর দিয়ে। ওয়ারজাবালের মতই ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারতেন সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড উইঙ্গার আদনান ইয়ানুজাই, কিন্তু ৫৩ মিনিটে তার বাঁকানো শট ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। তবে এর মিনিট দশেক পর নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারে রিয়াল।
দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় ভাজকেজকে। কিন্তু একজন কম নিয়েও অবশ্য থেমে যায়নি সোলারির দল। ৬৩ মিনিটে মার্টিনেজ, ভিনিসিয়াসকে ডিবক্সে ফেলে দিলেও পেনাল্টি দেননি রেফারি। ৬৫ মিনিটে রামোসের হেড অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন রুলি। গোলের আশায় ইস্কো, দানি সেবায়োসদেরও নামিয়ে দেন সোলারি। কিন্তু লিড বাঁচাতে দ্বিতীয়ার্ধে সোসিয়াদাদের ৫-৪-১ ফর্মেশন আর ভাঙতেই পারেনি রিয়াল। বেনজেমাকে রীতিমত পকেটবন্দি করে রেখেছিলেন মার্টিনেজ। ভিনিসিয়াস চেষ্টা করে গেছেন শেষ পর্যন্ত, কিন্তু কাজের কাজটা আর করতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা সময়ই প্রতি-আক্রমণে খেলা সোসিয়াদাদ রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দেয় ৮৩ মিনিটে। দলকে লিড এনে দেওয়া উইলিয়ান হোসের ক্রসে হেড করে জয় নিশ্চিত করেন বদলি খেলোয়াড় রুবেন পার্ডো। শেষ বাঁশির পর প্রথমার্ধের পর সমর্থকদের জোর দুয়োর মাঝেই মাঠ ছাড়েন রামোসরা। আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা নিয়েই জোর আশঙ্কাটা যেন আজকের হারে আরও বেড়ে গেল রিয়ালের।