• লা লিগা
  • " />

     

    নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ম্যাচে বার্সাকে জেতালেন মেসি

    নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ম্যাচে বার্সাকে জেতালেন মেসি    

    রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়াকে যেন নিত্যদিনের সঙ্গীই বানিয়ে নিয়েছেন তিনি। লিওনেল মেসি খেলতে নেমেছেন আর কোনও রেকর্ড নিজের করেন নেননি- এমনটাই বরং হয়েছে কম। আজ এইবারের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আরও এক রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছিল 'লিও'কে। মেসি নামলেন, রেকর্ড গড়লেন এবং জেতালেন বার্সাকেও। লা লিগার একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ৪০০ গোল করলেন মেসি। ন্যু ক্যাম্পে আরও এক মেসিওময় রাতে এইবারকে ৩-০ গোলে হারিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থানটা আরও সুসংহত করেছে এর্নেস্তো ভালভার্দের দল। জোড়া গোল করেছেন লুইস সুয়ারেজ। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে ৪০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করলেন 'লা পুলগা'।

    ৩৯৯ গোল নিয়ে খেলতে নামা মেসি যে আজ রেকর্ড করেই ছাড়বেন- আভাসটা পাওয়া যাচ্ছিল ম্যাচের শুরু থেকেই। ৩ মিনিটেই দলকে লিড এনে দিতে পারতেন মেসি। মাঝমাঠে বল দখলে এনে এইবারের তিনজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নিলেন তিনি। মেসির শট এইবার গোলরক্ষক আসিয়ের রিয়েসগোকে পরাস্ত করলেও চলে যায় গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। ম্যাচের শুরুতেই মেসির এমন ঝলকে ন্যু ক্যাম্পও যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মুহুর্মুহু 'ডিওস! ডিওস!!' (স্রষ্টা) চিৎকারে মুখরিত ছিল বার্সার স্টেডিয়াম। মেসি স্বরূপে থাকলেও অন্তত প্রথমার্ধে ভাগ্য তার সহায় ছিল না। শুরুতেই গোলের সামান্য বাইরে শট নেওয়ার এর মিনিট পাঁচেক পর মেসির চমৎকার বাঁকানো ফ্রি-কিক এবার প্রতিহত হয় বারপোস্টে। পুরো মৌসুমে মোট ১১বার নিজের শট বারপোস্টে প্রতিহত হতে দেখলেন বার্সার অধিনায়ক। বার্সার এমন দুর্দান্ত আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে একেবারেই দাঁড়াতে পারেনি এইবার। মেসির সাথে জ্বলে উঠেন আক্রমণে তার দুই সতীর্থ সুয়ারেজ এবং ফিলিপ কুতিনিয়োও। দুই সপ্তাহ পর লা লিগায় প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েই জাত চেনালেন কুতিনিয়ো। ১৯ মিনিটে সুয়ারেজের সাথে দারুণ এক 'ওয়ান-টু' করে পাস বাড়ান 'এল পিস্তোলেরো'র দিকে। ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলেও রিয়েসগোকে ঠিকই পরাস্ত করেন সুয়ারেজ। 

     

     

    ২১ মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেছিল বার্সা। এইবারের চার ডিফেন্ডারের ফাঁক গোলে মেসির দুর্দান্ত থ্রু পাস জালেও পাঠিয়েছিলেন সুয়ারেজ, কিন্তু অফসাইডে বাতিল হয় গোলটি। পুরো ম্যাচে এইবারকে নাকানিচুবানি খাওয়ানো মেসিকে আটকাতেই ব্যস্ত ছিল এইবারের রক্ষণভাগ। এই সুযোগে আক্রমণে পাওয়া স্পেসটা বেস ভালমতোই কাজে লাগিয়েছেন কুতিনিয়ো, সুয়ারেজরা। ৩৩ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ পেয়েছিল বার্সা। আবারও সেই মেসির থ্রু পাস থেকে এবার শট নিয়েছিলেন কুতিনিয়ো, কিন্তু আগুনে শটটি দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন রিয়েসগো। ভাগ্যের সাথে রেফারির সিদ্ধান্তও নিজেদের পক্ষে যায়নি বার্সার। ৪৩ মিনিটে প্রতি-আক্রমণে সুয়ারেজের থ্রু থেকে শট নেওয়ার আগে কুতিনিয়োকে ডিবক্সে ফেলে দেন সার্জি এনরিক। কিন্তু তারপ্রও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। আক্রোশে ফুঁসে ওঠা ন্যু ক্যাম্প প্রথমার্ধ শেষ হতেই প্রকম্পিত হয় সমর্থকদের জোর দুয়োধ্বনিতে।

     

     

    ৭৩ ভাগ পজেশন, গোলে ১১ শট। এতকিছুর পরও প্রথমার্ধটা মাত্র এক গোলের ব্যবধানেই শেষ করেছিল বার্সা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আসে মেসির পরম আকাঙ্ক্ষিত সেই মুহূর্ত। ৫৩ মিনিটে আবারও সেই কুতিনিয়ো-সুয়ারেজের 'ওয়ান টু'-এর পর ডিবক্সে বাঁপ্রান্তে থাকা মেসিকে পাস বাড়ান সুয়ারেজ। প্রথম টাচেই দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মেসি। গোলের পরই ন্যু ক্যাম্পের দর্শকসারিতে শোভা পায় 'মেসি ৪০০' লেখা একাধিক ব্যানার। হাতের চার আঙ্গুল দেখিয়ে সমর্থকদের সেই উদযাপনের জবাবও দিয়েছেন 'লা পুলগা'। জয় নিশ্চিত, রেকর্ড গড়া হয়ে গেছে ততক্ষণে। কিন্তু তারপরও থামেননি মেসি। থামেনি বার্সা। ৫৮ মিনিটে অবিশ্বাস্য এক সেভে ম্যাচে মেসির চমৎকার চিপ ফিরিয়ে দেন রিয়েসগো। হেরে গেলেও পুরো ম্যাচে মেসিদের বেশ কয়েকবারই খালি হাতে ফিরিয়েছেন তিনি।

    তবে মিনিটখানেক পর রিয়েসগো নিজেও ফেরাতে পারেননি সুয়ারেজকে। ৫৯ মিনিটে সার্জি রবার্তোর পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন সুয়ারেজ। ব্যবধান ৩-০ হওয়ার পর প্রতি-আক্রমণেই খেলতে থাকে বার্সা। কিন্তু তারপরও সুযোগের অভাব হয়নি কাতালানদের। কিন্তু প্রথমার্ধের মত গোলের সামনে ক্ষুরধার পারফরম্যান্সটা আর দিতে পারেননি মেসিরা। বেশ কিছু দারুণ প্রতি-আক্রমণে বোঝাপড়ার অভাবে গোলের দেখা পায়নি বার্সা। কিন্তু মেসিকে আটকাতে তারপরও হিমশিম খাচ্ছিল এইবারের রক্ষনভাগ। একের পর এক ড্রিবল, সুযোগসন্ধানী পাসে এইবারের ডিফেন্ডারদের রীতিমত তটস্থ রেখেছিলেন তিনি। রেফারির শেষ বাঁশির পর হয়ত এইবারের ডিফেন্ডাররাই ফেলেছেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। আরও এক রেকর্ড ঝুলিতে, আরও এক ম্যাচে ম্যাচসেরা। মেসি যেন আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, কেন এ বছরের ব্যালন ডি'অরের রেসে তাকে পাঁচ নম্বরে রাখাটা বিতর্কের ঝড় তোলে এখনও।