'মায়েদের জন্য খেলা ম্যাচে' ঢাকাকে আটকে দিল রাজশাহী
রাজশাহী কিংস ১৩৬/৬, ২০ ওভার (মার্শাল ৪৫, নাফীস ২৫, নারাইন ৩/১৯, রাসেল ১/১৭)
ঢাকা ডায়নামাইটস ১১৬/৯, ২০ ওভার (নুরুল ২১, নাঈম ১৭, সানি ৩/৮, মিরাজ ২/১৮)
রাজশাহী ২০ রানে জয়ী
হজরতউল্লাহ জাজাইকে বোল্ড করে দুই হাত দিয়ে জার্সির পেছনে নামের দিকে ইঙ্গিত করে ‘ভালবাসা’ আঁকলেন ইসুরু উদানা, উপলক্ষ্যটা পেল বাড়তি মাত্রা। উপলক্ষ্যটা বিশেষ ছিল রাজশাহী কিংসের। জার্সির পেছনে এদিন তারা নেমেছিলেন মায়েদের নাম নিয়ে, ম্যাচটা উৎসর্গ করা হয়েছিল মায়েদের। সেই ‘বিশেষ’ ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্সটাও হলো বিশেষ কিছুই। সিলেটে আগেরদিনের চেয়ে একটু দ্রুত উইকেটে মার্শাল আইয়ুবের ৪৫ রানের ইনিংসের পরও ১৩৬ রান তুলে ঢাকা ডায়নামাইটসকে তারা আটকে দিয়েছেন ১১৬ রানেই। ঢাকার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপ পাত্তা পায়নি আরাফাত সানিদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে। ৪ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। দিনটা বিশেষ কিছু, সানির পারফরম্যান্সও হলো সেরকমই। পঞ্চম ম্যাচে এসে প্রথমবার হারলো ঢাকা, ৬ষ্ঠ ম্যাচে এটি রাজশাহীর তৃতীয় জয়।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা অবশ্য অস্বস্তির ছিল রাজশাহীর। প্রথম ওভার মেইডেন, দ্বিতীয় ওভারে ২ রান, তৃতীয় ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজের ১১ বলে ১ রানের অস্বস্তির সমাপ্তি। রাজশাহী ধুঁকছিল তখন, মার্শাল আইয়ুব ও শাহরিয়ার নাফীসের ‘ক্ল্যাসিক’ ব্যাটিংয়ে কাটা পড়লো সেটা। রাসেলের বলে প্রথমে ইনসাইড-এজে চার মেরে শুরুটা অবশ্য নড়বড়েই ছিল মার্শালের। এরপরই নিলেন নিয়ন্ত্রণ। থ্রু দ্য লাইনে খেললেন, রাসেলের শর্ট বলে হুক করে ছয়ের পর আরেকটি মারলেন আসিফ আহমেদকে, যেটা বোধহয় ইনিংসের সেরা শট। ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে বোলারস ব্যাকড্রাইভে মারলেন সেটি। শাহরিয়ার নাফীসের সঙ্গে তার জুটি ফিফটি ছুঁয়েছে ৩৫ বলে, শেষে পর্যন্ত সেটা গেছে ৭৫ রানে।
নাফীস সঙ্গটা ভালই দিচ্ছিলেন মার্শালকে, স্ট্রাইক বদল করে। সাকিবকে সুইপ করে মারা চার যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল পুরোনো নাফীসকেও। তবে সুনীল নারাইনের এক ওভারে ফিরলেন নাফীস-মার্শাল দুজনই। ফ্লাইটে প্রলুব্ধ নাফীস ধরা পড়েছেন লং-অনে, ২৭ বল ২৫ রান করে। এক বল পর অফস্টাম্পের বাইরের বলে ড্যাব করতে গিয়ে কট-বিহাইন্ড আউট মার্শাল আইয়ুব, ৩১ বলে ৪৫ রান করে।
তবে ১৬ ওভারে ৩ উইকেটে ১১৩ রানের স্কোর নিয়ে যে উড়ানের ভিতটা পেয়েছিল রাজশাহী, সেই উড়ানটা পায়নি তারা তিন স্পিনার- নারাইন, আলিস ও সাকিবের বোলিংয়ে। আলিসের বলে সামনে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়েছেন জাকির, পরের ওভারে নারাইনের বলে এলবিডব্লিউ টেন ডেসকাটে, সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নিলেও ব্যাটের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটেনি বলের। উইকেটের পেছনে ভাল সময় কাটিয়েছেন নুরুল, স্টাম্পড হয়েছেন প্রসন্নও, সাকিবের বলে খেলতে গিয়ে পা ওপরে ছিল তার। শেষ ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রান তুলতে পেরেছে রাজশাহী।
ঢাকার শুরুটা হয়েছিল রাজশাহীর বিপরীত। মিরাজের বলে নারাইন ‘প্লাম্ব ইন ফ্রন্ট’ হলেও ২ ওভারে উঠেছিল ২১ রান। তবে এরপর থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে তারা, ইনিংস বা জুটি বড় হয়নি তাদের। শেষ পর্যন্ত ভুগিয়েছে তাদের পাওয়ারপ্লের মাঝেই ৩ উইকেট হারানোটা।
শুরু থেকেই ব্লকহোলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন উদানা, হযরতউল্লাহ জাজাইয়ের বিরুদ্ধে সফল হলেন তিনি। তার দারুণ ইয়র্কারের জবাব ছিল না জাজাইয়ের কাছে। রাসেলকে আগে পাঠানো হয়েছিল, তাকে দিয়ে উইকেটের খাতা খুলেছেন আরাফাত সানি।
সানি এরপর ফিরিয়েছেন সাকিবকে, মিড-উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন ঢাকা অধিনায়ক। আর আর্ম বলের জবাব দিতে পারেননি রনি তালুকদার, ২৬ বলে ২৪ করে তিনি হয়েছেন বোল্ড। সে ওভারটি মেইডেন নিয়েছেন সানি, ৫৩ রানেই ৫ম উইকেট হারিয়েছে ঢাকা।
কাইরন পোলার্ডের সঙ্গে মোহাম্মদ নাঈমের জুটিতে এরপর উঠেছে ৩১ রান। তবে রান-রেটের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি তারা, বড় শটের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন দুজনই। নাঈম মিরাজকে স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন, ১৮ বলে ১৭ রান করে। পোলার্ডের উইকেটে অবশ্য দারুণ অবদান রায়ান টেন ডেসকাটের, সঙ্গে সৌম্য সরকারের। রাব্বিকে তুলে মেরেছিলেন পোলার্ড, লং অনে লাফিয়ে উঠে ক্যাচটা নিয়ে বাউন্ডারি টপকে যাওয়ার আগে ছুঁড়ে দিয়েছেন ডেসকাটে, যেটা পরে ধরেছেন সৌম্য।
এরপর নুরুল হাসানের ১৪ বলে ২১ রানের ক্যামিও এসেছিল, তবে শেষ ওভারে মোস্তাফিজের বলে ক্যাচ তুলেছেন তিনি। শেষ ওভারে ২৭ রান প্রয়োজন ছিল ঢাকার, তারা তুলতে পেরেছে মাত্র ৬ রান।