সেভিয়ার বিপক্ষে রিয়ালের স্বস্তির জয়
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসিদের টপকে ব্যালন ডি'অর জিতলেও তার গোল করার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। ক্যারিয়ারে কখনোই গোলদাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন না লুকা মদ্রিচ। তবে গত সপ্তাহে রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে গোল করে দলকে জিতিয়েছিলেন। আজ সেভিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে আবারও করলেন গোল, দলও জিতল আবারও। দুই মিডফিল্ডার কাসেমিরো এবং মদ্রিচের গোলে সেভিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। আজকের জয়ে ২০ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিন-এ উঠে এল রিয়াল। ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে চার-এ নেমে গেল সেভিয়া।
নিজেদের মাঠে আজ পূর্ণশক্তির দলই নামাতে পেরেছিলেন কোচ সান্তিয়াগো সোলারি। ইনজুরি এবং নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফিরেছিলেন করিম বেনজেমা এবং লুকাস ভাজকেজ। কিন্তু ম্যাচে রিয়ালের প্রথম সুযোগটা পেয়েছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়রই। ৬ মিনিটে লুকা মদ্রিচের থ্রু পাস থেকে সেভিয়া গোলরক্ষক থমাস ভাচলিককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, কিন্তু গোল করতে পারেননি। পুরো ম্যাচেই বল দখল, সুযোগ তৈরি- সব দিক দিয়েই এগিয়েছিল সোলারির দল। কিন্তু ভিনিসিয়াস বাদে ভাচলিককে তেমন পরীক্ষায় আর ফেলতে পারেননি কেউই। সুযোগ বুঝে ম্যাচে ফিরতে থাকে সেভিয়াও। ১৫ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে এভার বানেগার জোরাল শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়া। এর মিনট ছয়েক পর প্রথমার্ধের সেরা সুযোগটা পেয়েছিল সেভিয়াই।
২১ মিনিটে দুর্দান্ত এক প্রতি-আক্রমণে কর্তোয়াকে একা পেয়ে যান লেফটব্যাক সার্জিও এস্কুদেরো। কিন্তু ভিনিসিয়াসের মত প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি তিনি। রিয়ালের এমন ভোঁতা পারফরম্যান্সের প্রভাব সমর্থকদের ওপর পড়তেও সময় নেয়নি খুব একটা। এস্কুদেরোর মিসের পর থেকেই জোর দুয়ো শুনতে হয় সার্জিও রামোসদের। কিন্তু তারপরও গোলমুখে তেমন সেভিয়া রক্ষণভাগকে তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি বেনজেমারা। গোছানো আক্রমণেও সেভিয়ার রক্ষণভাগের সামনে বারবার খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাদের।
প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও গোছানো আক্রমণ দিয়ে সেভিয়াকে চেপে ধরেছিল রিয়াল। কিন্তু ভাচলিককে আর পরীক্ষায় ফেলা হয়নি। সেভিয়ার ডিফেন্ডার সিমন কিয়ার এবং ড্যানিয়েল কারিসো ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। প্রায় পুরো ম্যাচই ক্রসে খেলা রিয়ালের আক্রমণ গুঁড়িয়ে দিতে তেমন সমস্যাই হয়নি পাবলো মাচিনের দলের। গোছানো আক্রমণ বা ক্রসে কাজ না হওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধে দূরপাল্লার শটের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়ে রিয়াল। আরেকটু হলেই কাজও হয়ে গিয়েছিল তাতে। ৬৭ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ থেকে গত সপ্তাহে রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে জয়সূচক গোল করা দানি সেবায়োসের আগুনে শট ভাচলিককে পরাস্ত করলেও প্রতিহত হয় ক্রসবারে। মাথায় হাত দিয়ে বার্নাব্যুর পিচে ভূপাতিত হন সেবায়োস, হতাশায় আলাশের দিকে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন সোলারি। কিন্তু হতাশা আর তেমন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি রিয়ালের। দূরপাল্লার শটেই কপাল খোলে তাদের।
৭৮ মিনিটে সেবায়োসের মতই দূরত্ব থেকে শট নেন কাসেমিরো। শরীর হাওয়ায় ভাসিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করেও হার মানতে হয় ভাচলিককে। বলে হাত লাগাতে পেরেছিলেন ঠিকই, কিন্তু বল জালে জড়ানো থেকে বিরত রাখতে পারেননি তিনি। গোলের পর আর রিয়ালকে তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি। প্রায় পুরো প্রথমার্ধ রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেছিল সেভিয়া। ম্যাচের মাত্র মিনিট দশেক বাকি থাকতে তাই পিছিয়ে পড়ায় ফিরতেও পারেনি তারা। আক্রমণের চেয়ে বল দখলে রেখে পাসিংয়েই মেতেছিলেন মদ্রিচরা। প্রথমার্ধে দুয়ো দেওয়া মাদ্রিদ সমর্থকেরাই 'ওলে! ওলে!!' চিৎকারে মুখরিত বার্নাব্যু। শেষদিকে মদ্রিচের গোলে স্বস্তির জয়ই পেয়েছে সোলারির দল।