• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    কিক অফের আগে: 'দুঃস্বপ্নের' অ্যানফিল্ডকেই ভয় বায়ার্নের

    কিক অফের আগে: 'দুঃস্বপ্নের' অ্যানফিল্ডকেই ভয় বায়ার্নের    

    'দুঃস্বপ্নের' অ্যানফিল্ডকেই ভয় বায়ার্নের

    লিভারপুল বনাম বায়ার্ন মিউনিখ; ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোল প্রথম লেগ; ২০ ফেব্রুয়ারি, রাত ২টা; অ্যানফিল্ড 

    ২০১৮-১৯ প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত ফর্মে আছে তারা। পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিকেও টপকে শীর্ষে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে আরেকটু হলেই বিদায় নিতে হতো গ্রুপপর্ব থেকে। নাপোলিকে হারিয়ে অবশ্য শেষ ষোল ঠিকই নিশ্চিত করেছেন ‘অল রেড’রা। প্রতিপক্ষ বায়ার্ন মিউনিখের সাথে অবশ্য লিভারপুলের মিল নেই খুব একটা। লিভারপুল যেখানে লিগে উজ্জ্বল, সেখানে বুন্দেসলিগায় কিছুটা হলেও বিবর্ণ ‘বাভারিয়ান’রা, টেবিলের দুই নম্বরে আছে তারা। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন অদম্য। অপরাজিত থেকে গ্রুপচ্যাম্পিয়ন হয়েই পরের রাউন্ডে এসেছে তারা। আজ অ্যানফিল্ডে  শেষ ষোলর প্রথম লেগে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। দিন কয়েক আগেই বায়ার্ন ফরোয়ার্ড আরিয়েন রোবেন অ্যানফিল্ডকে অভিহিত করেছেন প্রতিপক্ষের জন্য সবচেয়ে দুঃস্বপ্নময় স্টেডিয়াম হিসেবে। নকআউট পর্বে প্রতিপক্ষকে কীভাবে কাঁপিয়ে দিতে পারেন মোহামেদ সালাহ এবং অ্যানফিল্ড, দেখার বিষয় এখন সেটাই। বায়ার্নের প্রতিদ্বন্দ্বী বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের কোচ ছিলেন ক্লপ। আজকের ম্যাচটি তো তার জন্য আরও বিশেষ কিছু। বায়ার্নের হয়ে ক্লপের বিপক্ষে নামছেন বায়ার্ন স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি। রবার্টের লেভানডফস্কি হয়ে উঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদানটা যার, যার অধীনে ডর্টমুন্ডের হয়ে ইউরোপে নজর কাড়া শুরু করেছিলেন পোলিশ স্ট্রাইকার; সেই ক্লপের বিপক্ষেই আজ নামছেন 'লেউই'। 

     

     

     

    ‘বায়ার্নের বিপক্ষে ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই’

    মেইঞ্জের হয়ে কোচিংয়ে হাতেখড়ি হলেও ডর্টমুন্ডের ম্যানেজার হিসেবেই নিজের জাত চিনিয়েছেন ক্লপ। তার অধীনেই দশ বছর পর বুন্দেসলিগার শিরোপা পুনরোদ্ধার করেছিল ডর্টমুন্ড। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালেও নিয়ে গিয়েছিলেন দলকে, হেরেছিলেন এই বায়ার্নের কাছেই। ক্লপ জার্মানি ছেড়েছেন, হারিয়ে গেছে জার্মান লিগে ডর্টমুন্ডের আধিপত্যও। আজ অ্যানফিল্ডে আবারও বায়ার্নের মুখোমুখি হচ্ছেন ক্লপ। কিন্তু এতকিছুর পরও বায়ার্নের বিপক্ষে ব্যক্তিগত কোনও ক্ষোভ নেই ক্লপের, ‘প্রতিপক্ষকে সবসময় সম্মান দিয়েই কথা বলা উচিত। জার্মানিতে তারা (বায়ার্ন) আমার সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল। জার্মানি কাপ বা লিগ, ঘুরেফিরে বায়ার্ন বা ডর্টমুন্ডই জিতত। বায়ার্ন প্রতিপক্ষ হলেও আমাদের সেরাটা বের করে আনতে বেশ সাহায্য করেছে। এতটাই দুর্দান্ত তারা। ২০১৩ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালটা অবশ্যই বেশ পীড়া দেয়, কিন্তু ফুটবলে হারজিত থাকবেই। আর বায়ার্ন আমার প্রতিপক্ষ ছিল বা তাদের কাছে শিরোপা হেরেছি, এজন্য তাদের প্রতি ঘৃণা পুষে রাখা আমার দর্শনে নেই।’

    গত সপ্তাহেই চ্যাম্পিয়নস লিগের রাতগুলোতে অ্যানফিল্ডের পরিবেশকে 'দুঃস্বপ্নময়' বলেছিলেন রোবেন। প্রতিপক্ষের সাথে একমতই পোষণ করলেন ক্লপ, ‘সিগনাল ইদুনা পার্কের (ডর্টমুন্ডের স্টেডিয়াম) পরিবেশের ধারেকাছে কিছু নেই বলেই মানতাম আমি। কিন্তু অ্যানফিল্ড আসলেই আমাদের ধারণা বদলে দিয়েছে। আমাদের খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণার কোনও অভাব রাখেনি অ্যানফিল্ড। ডর্টমুন্ডের হয়েও এখানে এসেছিলাম। রোবেনের সাথে পুরোপুরি একমত আমি।’

     

     

    ‘রক্ষণ নিয়েই মূল দুশ্চিন্তা’

    বুন্দেসলিগায় একটা সময় শীর্ষ চারের বাইরেই চলে গিয়েছিল বায়ার্ন। কিন্তু নতুন বছরে ঠিকই স্বরূপে ফিরেছে ‘বাভারিয়ান’রা। চাকরি হারানো সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হওয়া নিকো কোভাচেই এখন পূর্ণ আস্থা বায়ার্নের। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের আগে বেশ চিন্তিতই মনে হল কোভাচকে, ‘লিভারপুলের আক্রমণ ইউরোপের অন্যতম সেরা। গতি, ড্রিবলিং, গোলের সুযোগ তৈরি- কোনও দিক দিয়েই পিছিয়ে নেই তারা। অ্যানফিল্ডে আক্ষরিক অর্থেই পুরোটা সময় নিজেদের সেরাটা দিতে হবে আমাদের। সামান্যতম ভুলকেই গোলে পরিণত করার সামর্থ্য আছে তাদের। তবে আমরা ভয় পাচ্ছি না। নিজেদের সেরাটা দিয়েই অ্যানফিল্ড থেকে ফিরতে চাই আমরা। জয় অবশ্যই আমাদের মূল লক্ষ্য, তাই অ্যাওয়ে গোলের দিকেই নজর থাকবে আমাদের।’

     

     

    দলের খবর

    ইনজুরির কারণে লিভারপুলের হয়ে ম্যাচটি মিস করবেন অ্যালেক্স অক্সলেড-চেম্বারলেইন এবং জো গোমেজ। তবে বহিষ্কারাদেশের কারণে হারানো ভার্জিল ভ্যান ডাইককেই খুব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি মিস করবেন লিভারপুল। ইনজুরির কারণে বায়ার্নের হয়ে থাকছেন না জেরোম বোয়াটেং, কোরেটিন তোলিসো এবং আরিয়েন রোবেন।

     

    সম্ভাব্য মূল একাদশ

    লিভারপুল (৪-৩-৩): অ্যালিসন; আলেকজান্ডার-আর্নল্ড, লভ্রেন, মাতিপ, রবার্টসন; মিলনার, কেইটা, ফাবিনহো; সালাহ, ফিরমিনো, মানে

    বায়ার্ন মিউনিখ (৪-৩-৩): নয়্যার; কিমিচ, হামেলস, সুলে, আলাবা; গোরেৎসকা, মার্টিনেজ, থিয়াগো; গ্নাব্রি, লেভানডফস্কি, কোমান

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়

    • লিভারপুলের বিপক্ষে খেলা ৭ ম্যাচে মাত্র ১বার জিতেছে বায়ার্ন (৪ হার, ২ ড্র)
    • অ্যানফিল্ডে খেলা ৩ ম্যাচে কখনও গোল করতে পারেনি বায়ার্ন
    • অ্যানফিল্ডে শেষ ১৯ ইউরোপিয়ান ম্যাচে অপরাজিত আছে লিভারপুল 

     

     

    'ডেভিড' লিঁওকেই ভয় 'গোয়ালিথ' বার্সার

    অলিম্পিক লিঁও বনাম বার্সেলোনা; ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোল প্রথম লেগ; ২০ ফেব্রুয়ারি, রাত ২টা; অলিম্পিক স্টেডিয়াম

    ২০১৮-১৯ চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে দিয়েছিল তারা। ইউনাইটেড, লিভারপুল, চেলসিরা যা পারেনি; ঠিক সেটাই করে দেখিয়েছিল অলিম্পিক লিঁও। বড় দলগুলোকে হারানোতে যেন বদ্ধপরিকর তারা। শুধু সিটি নয়, ফ্রেঞ্চ লিগে অদম্য পিএসজিকেও হার মানতে হয়েছে ব্রুনো জেনেসিওর দলের কাছে। এই মৌসুমে ইউরোপের অন্যতম 'সারপ্রাইজ প্যাকেজ'ই বলা চলে অকুতোভয় লিঁওকে। ইন্টার মিলান, টটেনহাম হটস্পারদের নিয়ে গড়া গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়ে আসলেও এই অদম্য লিঁওকে সমীহ করছে বার্সেলোনা।

     

    'চাপে না থেকে উপভোগ করতে চাই'

    দল আছে দারুণ ফর্মে। শেষ ৭ ম্যাচের ৬টিতেই জিতেছে তারা। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন পাঁঁচবারের চ্যাম্পিয়ন বার্সা, তখন স্বাভাবিকভাবেই 'আন্ডারডগ' থাকবে  লিঁও। 'ফেভারিট'-এর তকমা পাওয়া নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছেন না লিঁও কোচ জেনেসিও। ফুটবলারদের চাপ না নিয়ে খেলাটা উপভোগ করার পরামর্শই দিয়েছেন তিনি, 'বার্সা অবশ্যই ইউরাওপের অন্যতম সেরা দল। লা লিগাতেও শীর্ষে আছে তারা। এবারের গ্রুপপর্বের সবচেয়ে কঠিন গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে তারা। দলটাও দুর্দান্ত। সত্যি বলতে, এসব 'ফেভারিট' বা 'আন্ডারডগ' তকমা নিয়ে আমার একেবারেই মাথাব্যথা নেই। এগুলো শুধু খবরেই পড়তে বা শুনতে ভাল লাগে। আজ যে বার্সা ফেভারিট, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের হারানোর কিছুই নেই। আমরা বাদ পড়লেও বলতে পারব, নকআউট পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছি। বাড়তি চাপ নেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা দেখি না আমি। আজ এবং ন্যু ক্যাম্পে আমরা নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলব। এই ম্যাচটা আমাদের কাছে অন্য দশটা ম্যাচের মতই।'

     

     

    'ধার বাড়াতে হবে আমাদের'

    গত সপ্তাহে রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে জয়ের আগে টানা তিন ম্যাচ ড্র করেছিল বার্সা। পয়েন্ট হারালেও গোলমুখে কাতালানদের নেতিয়ে পড়া চোখে পড়েছে সবারই। লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজরা ঠিক স্বরূপে নেই। লা লিগায় অনেক পয়েন্টে এগিয়ে থাকায় হয়ত আক্রমণভাগের অক্ষমতা সেভাবে গায়ে লাগেনি বার্সার। কিন্তু কোচ এর্নেস্তোু ভালভার্দে মানছেন, নকআউট পর্বে এসে আক্রমণের ধারটা বাড়াতেই হবে তাদের, 'গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা নিজেদের সেরাটা দিতে পারছি না। দোষটা শুধু ফরোয়ার্ডদের নয়, মাঝমাঠের সাথে তাদের সমন্বয়েও বেশ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। রক্ষণেও উন্নতি করতে হবে আমাদের। লিঁও দলটা অসাধারণ, বিশেষ করে প্রতি-আক্রমণে। আমাদের ডিফেন্ডারদের সতর্ক থাকতে হবে পুরোটা সময়। শেষ ষোলতে কোনও 'ফেভারিট' নেই। লিঁওর বিপক্ষে জিততে হলে আমাদের ঘাম ঝড়াতেই হবে।'

     

    দলের খবর

    ইনজুরির কারণে লিঁওর হয়ে থাকছেন না তানজি এন'ডম্বেলে। বহিষ্কারাদেশের কারণে থাকছেন না অধিনায়ক নাবিল ফেকির। ইনজুরির কারণে বার্সার হয়ে ম্যাচটি মিস করবেন থমাস ভার্মাইলেন, আর্থার মেলো, রাফিনহা এবং গোলরক্ষক জাসপার সিলিসেন। ইনজুরি কাটয়ে অনুশীলনে ফিরলেও সাবেক দলের বিপক্ষে হয়ত মাঠে থাকবেন না স্যামুয়েল উমতিতি। 

     

     

    সম্ভাব্য মূল একাদশ

    লিঁও (৩-৪-৩): লোপেজ; মার্সাল, দেনায়ের, মার্সেলো; মেন্ডি, আউয়ার, তেতে, ডেম্বেলে; ডিপাই, ডেম্বেলে, কোর্নেট

    বার্সা (৪-৩-৩): টার স্টেগান; সেমেদো, পিকে, লংলে  আলবা; বুস্কেটস, রাকিটিচ, কুতিনিয়ো; মেসি, সুয়ারেজ, ডেম্বেলে

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়

    • চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের শেষ ১০ 'অ্যাওয়ে' ম্যাচের মাত্র ৩টিতে জিতেছে বার্সা
    • গ্রুপপর্বের সব ম্যাচেই গোল করেছে লিঁও এবং বার্সা
    • এবারের গ্রুপপর্বে সবচেয়ে বেশি গোল হজম করেছে লিঁও (১১)