• লা লিগা
  • " />

     

    কিক অফের আগে: রিয়াল নয়, বার্নাব্যুতে 'সুখস্মৃতি' এখন বার্সার

    কিক অফের আগে: রিয়াল নয়, বার্নাব্যুতে 'সুখস্মৃতি' এখন বার্সার    

    রিয়াল নয়, বার্নাব্যুতে 'সুখস্মৃতি' এখন বার্সার

    রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা; লা লিগা; সান্তিয়াগো বার্নাব্যু; ৩ মার্চ, রাত ১:৪৫; ফেসবুক লাইভ

    ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট। সহজ বাংলায় যার অর্থ মৃত্যুদন্ড। সাধারণত কোনও বড় অপরাধে মেলে এই শাস্তি। খেলাধুলার জগতে আক্ষরিক অর্থে 'মৃত্যুদন্ড' না থাকলেও কাব্যিক বা ভাবার্থে কিন্তু ঠিকই আছে। আর তা হল সুযোগ হাতছাড়া করা। রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে হয়ত ভালভাবে এই ব্যাপারটা বুঝবে পারবে না কেউই। গত বৃহস্পতিবার কোপা ডেল রের দ্বিতীয় লেগে 'অ্যাওয়ে' গোল নিয়েই নেমেছিল সান্তিয়াগো সোলারির দল। গোল করার দরকার নেই, গোল না খেলেই চলত সমীকরণ নিয়ে মাঠে নামা রিয়াল বার্সাকে কাঁপিয়ে দিইয়েছিল ঠিকই, কিন্তু একাধিক সুযোগ হারিয়ে গোলের দেখা আর পায়নি। সুযোগ বুঝে রিয়ালকে ফুটবলের 'ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট' দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধান্বিত হননি লিওনেল মেসিরা। ফলাফল? সুযোগ কাজে লাগিয়ে রিয়ালের জালে বার্সার তিন গোল। দিন তিনেক পর আবারও সেই বার্নাব্যুতে মুখোমুখি হচ্ছে স্পেনের দুই মহারথী। কোপা ডেল রে-র উত্তাপ ছড়াবে লা লিগায়। ৯ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা রিয়ালের সামনে সুযোগ ব্যবধান কমিয়ে শিরোপা রেস জমিয়ে তোলার, আর বার্সাকে হাতছানি দিচ্ছে রিয়ালের লা লিগা জয়ের টিমটিমে প্রদীপটিকে এই মৌসুমের জন্য নিভিয়ে দেওয়া। ৩ পয়েন্টের চেয়েও অবশ্য আরও অনেক বড় এক মাইলফলক অপেক্ষা করছে বিজয়ীর জন্য। ২৪১ ম্যাচ পর সমান ৯৫ জয় রিয়াল এবং বার্সার। আজ জিতলেই 'লিড'-এ চলে যাবে যেকোনো একজন।

     

    'গোলমুখেই ম্যাচটা হেরেছি'

    কোচ হয়ে আসার পর থেকে রিয়ালের হারিয়ে যাওয়া আক্রমণাত্মক ফুটবলটা আবারও ফিরিয়ে এনেছেন সোলারি। রিয়ালের এই কিংবদন্তীর অধীনে জাল খুঁজে পাওয়াকে রীতিমত 'রুটিন'ই বানিয়ে ফেলেছিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র, করিম বেনজেমারা। কিন্তু সেই গোলমুখেই বাজে ফিনিশিংয়ের জন্য বার্সার কাছে হারতে হয়েছে বলেই মনে করেন সোলারি, 'কেউ বলতে পারবে না আমরা খারাপ করেছি। পরিসংখ্যানও আমাদের পক্ষেই কথা বলবে। কেবল প্রথমার্ধেই বার্সার চেয়ে গোলের বেশি সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি। আর প্রতিপক্ষ যখন বার্সা, তখন এসব ভুলের কী মাশুল দিতে হয়, তা অজানা নয় আমাদের। মাঝমাঠ বা রক্ষণ নিয়ে খুব একটা অভিযোগ নেই আমার। সবাই নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। কিন্তু গোলমুখে অপয়তার কারণেই ম্যাচটা হেরেছি আমরা।' সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের মাঠ বার্নাব্যুতে বার্সার বিপক্ষে রিয়ালের এমন বেহাল দশার কোনও সদুত্তর নেই সোলারির কাছেও, 'এল ক্লাসিকোর মত ম্যাচে আসলে হোম বা অ্যাওয়ে ম্যাচে তেমন পার্থক্য থাকে না। যেমন ন্যু ক্যাম্পে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের ফলাফলই ভাল। সত্যি বলতে আমি নিজেও ঠিক জানি না বার্নাব্যুতে কেন গত কয়েক বছরে বার্সাকে হারাতে পারছি না আমরা। বার্নাব্যু সমর্থকদের সামনে আজ জিততে চাই।'

     

     

    গোল করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করলেও রিয়ালের কোনও ফরোয়ার্ডকে শূলে চড়াতে নারাজ সোলারি, 'প্রত্যেক দলেরই খারাপ দিন আসে। দারুণ খেলেও অনেক সময় গোলের দেখা পাওয়া যায় না। কোপার সেমিতে আমাদের সাথে তা-ই হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই না যে ভিনি বা করিমেরই সব দোষ। তারা তো গোলমুখে শট ঠিকই নিয়েছে। ভাগ্য আমাদের সহায় ছিল না। আর মার্ক (টার স্টেগান) দুর্দান্ত খেলেছে পুরোটা ম্যাচ। হার থেকেই শেখে সবাই। আজ বার্নাব্যুতে যেন গত সপ্তাহের পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকেই লক্ষ্য রাখব আমরা। গোল করা আর গোল না খাওয়া, দুই-ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কোপার ম্যাচে আমরা কোনোটিই ঠিকমত করতে পারিনি। তবে আশা করছি আজ নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিতে পারব।'

     

    'এক সপ্তাহে একই দলকে দু'বার হারানো কঠিন'

    একটা সময় ছিল যখন বার্নাব্যুতে বার্সার জেতাই ছিল বিস্ময়কর। ২০০৪ পর্যন্ত রিয়ালের মাঠে খেলা ৭৪ ম্যাচে বার্সার জয় ছিল মাত্র ১৩টি। কিন্তু এরপরের গল্পটা প্রতিপক্ষের ঘাঁটিতে কাতালানদের ঘুরে দাঁড়ানোর। ২০০৪ থেকে বার্নাব্যুতে খেলা ১৭ ম্যাচের ১২টিতেই জিতেছে বার্সা। প্রতিপক্ষের মাঠে এমন পারফরম্যান্সে বার্নাব্যুকে বিদ্রূপ করে অনেকেই বার্সার 'ট্রেনিং গ্রাউন্ড' বলেও অভিহিত করেছে। দল কোপার ফাইনালে, লা লিগার শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে প্রায় পুরোটা মৌসুমই। গত সপ্তাহেই এই বার্নাব্যুতেই রিয়ালকে হারিয়েছে তার দল। কিন্তু দিন তিনেক পর একই মাঠে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নামলেও এর্নেস্তো ভালভার্দের কাছে চ্যালেঞ্জটা পর্বতসম, 'কোনও দলকেই সপ্তাহের ব্যবধানে দু'বার হারানো বেশ কষ্টসাধ্য। আর প্রতিপক্ষ যখন রিয়াল, তখন চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি। কোপার দ্বিতীয় লেগের সুখস্মৃতি অবশ্যই আছে, কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভোগা আমার দর্শনে নেই। বার্নাব্যুতে আমাদের সাম্প্রতিক ফলাফল, বা কোপার দ্বিতীয় লেগ- কোনও কারণেই বার্সার কেউই আজকের ম্যাচটি হালকাভাবে নিচ্ছে না। আমাদের জন্য ম্যাচটি অন্য সব ম্যাচের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।'

     

     

    বার্নাব্যুতে এই ম্যাচের দিন তিনেক পরই অলিম্পিক লিঁওর বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলর দ্বিতীয় লেগ। প্রথম লেগ গোলশূন্য ড্র হওয়ায় ম্যাচটি নিয়ে কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন থাকার কথা বার্সা। অন্যদিকে লা লিগায় আজ (রবিবার) হারলেও শীর্ষেই থাকবে বার্সা। সেজন্যই হয়ত ড্র নিয়েও সন্তুষ্ট থাকবে বার্সা, এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছিল বেশ। এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠতেই কিছুটা রাগান্বিতই মনে হলো ভালভার্দেকে, 'খুবই দুঃখজনক যে কারো কাছে এমনটা (রিয়ালকে হালকাভাবে নেওয়া) মনে হতে পারে। আমরা প্রত্যেকেই পেশাদার। এখানে সহজ বলে কিছু নেই। সব প্রতিপক্ষই শক্ত, সব ম্যাচই জয়ের জন্য লড়তে হয়। তিনটি প্রতিযোগিতাই (লা লিগা, কোপা ডেল রে, চ্যাম্পিয়নস লিগ) আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। রিয়ালকে হালকাভাবে নিচ্ছি, এমন অপবাদ দুঃখজনক এবং হাস্যকর।'

     

    দলের খবর

    ইনজুরি নিয়ে খুব একটা ভাবতে হচ্ছে না কাউকেই। বার্সার বিপক্ষেই কোপার প্রথম লেগে হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে পড়া মার্কোস ইয়োরেন্তে থাকছেন না আজও। আর্থার মেলো, স্যামুয়েল উমতিতিরা ইনজুরি থেকে ফেরায় পূর্ণশক্তির স্কোয়াডই পাচ্ছেন ভালভার্দে।

     

    সম্ভাব্য মূল একাদশ

    রিয়াল মাদ্রিদ (৪-৩-৩):কোর্তোয়া; কারভাহাল, রামোস, ভারান, রেগুলিয়ন; ক্রুস, মদ্রিচ, কাসেমিরো; ভাজকেজ, বেনজেমা, ভিনিসিয়াস

    বার্সেলোনা (৪-৩-৩): টার স্টেগান; সেমেদো, উমতিতি, পিকে, আলবা; রাকিটিচ, বুস্কেটস, আর্থার; মেসি, সুয়ারেজ, ডেম্বেলে

     

    ট্যাকটিক্সের টুকিটাকি

    কোপার দ্বিতীয় লেগে বেশ চৌকস ভাবেই ম্যাচটি জিতেছিল বার্সা। অবশ্য ভাগ্যও কিছুটা সহায় ছিল তাদের। প্রথমার্ধে গোল করতে পারেনি রিয়াল, কিন্তু প্রেসিং করেছিল দারুণভাবে। দ্বিতীয়ার্ধে তাই কিছুটা পরিশ্রান্তই মনে হয়েছেন ক্রুস, মদ্রিচদের। লুইস সুয়ারেজের প্রথম গোলে বার্সার ক্লেমেন্ত লংলেকে প্রেস করতে গিয়ে মাঝমাঠ ফাঁকা করে দেন মদ্রিচ। উসমান ডেম্বেলে ক্রস করার ঠিক আগ মুহূর্তে ডিবক্সে ঢুকে কেইলর নাভাসকে পরাস্ত করেছিলেন সুয়ারেজ। মদ্রিচ থাকলে হয়ত এই সুযোগটা নাও পেতে পারতেন 'এল পিস্তোলেরো'। মাঝমাঠে কাসেমিরো দারুণ খেললেও নিজেদের পাসিং দিয়ে ক্রুস, মদ্রিচকে নাচিয়ে ছেড়েছিলেন বুস্কেটস, রাকিটিচরা। ফলাফলটাও পেয়েছেন হাতেনাতে। আজ হয়ত একই চাল চালতে পারেন ভালভার্দে। সেক্ষেত্রে নিজেদের জাত চেনানোর ব্যতিক্রম থাকছে না মদ্রিচদের সামনে। আক্রমণভাগে দারুণ খেললেও নিচে নেমে রিয়াল লেফটব্যাক সার্জিও রেগুলিয়নকে সাহায্য করেননি ভিনিসিয়াস। ডেম্বেলে, সেমেদোর বিপক্ষে তাই কিছুটা অসহায়ই মনে হয়েছে তরুণ স্প্যানিয়ার্ডকে। আজ তাই আক্রমণের সাথে রেগুলিয়নকেও সাহায্য করতে হবে ভিনিসিয়াসকে।

     

     

    রামোস, ভারানরা ভাল খেললেও রক্ষণ থেকে পাস ছাড়ার ক্ষেত্রে একেবারেই গড়পড়তা ছিলেন দুজনই। পজেশন একাধিকবার হারিয়ে তাই আক্রমণ গড়তে পারেনি রিয়াল। সুয়ারেজের গতিবিধির দিকেও আজ সতর্ক থাকতে হবে তাদের। মাত্রই ইনজুরি থেকে ফিরেছেন উমতিতি, সেভিয়ার বিপক্ষে বেশ নড়বড়েই মনে হয়েছিল তাকে। আর লংলে নিজেও খুব একটা ভাল খেলছেন না। রক্ষণে পিকের সঙ্গী যে-ই হোক, রিয়ালের চোখে তিনিই হবেন বার্সার 'উইক লিঙ্ক'। মেসিকে দমিয়ে রাখার কাজটা দারুণভাবে করেছিলেন কাসেমিরো। প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে পকেটবন্দি করার জন্য আজ তার দিকেই তাকিয়ে থাকবেন সোলারি।

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়

    • এল ক্লাসিকোতে সমান ৯৫ জয় দু'দলেরই
    • ২০১৪-১৫ মৌসুমের পর লা লিগায় বার্নাব্যুতে বার্সাকে হারাতে পারেনি রিয়াল
    • শেষ ৪ ক্লাসিকোতে বার্সাকে হারাতে পারেনি রিয়াল