বার্নাব্যুতে আরও একবার বার্সাই বস
২০১৪-১৫ মৌসুমের পর আর লা লিগায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হারেনি বার্সেলোনা। একের পর এক জয়ে রিয়ালের মাঠকে যেন নিজেদের ‘সেকেন্ড হোম’ই বানিয়ে ফেলেছিল কাতালানরা। বার্নাব্যুতে আজ ৩ পয়েন্টের চেয়েও বার্সাকে হাতছানি দিচ্ছিল আরও বড় কিছু। জিতলেই ৮৭ বছর পর ক্লাসিকোর হেড টু হেড রেকর্ডে এগিয়ে যেত এর্নেস্তো ভালভার্দের দল। দিন তিনেক আগে এই মাঠেই কোপা ডেল রে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল বার্সা। আরও একবার সেই মাঠে জিতেই লা লিগার শিরোপার আরেকটু কাছে চলে গেল বার্সা। তবে এবার কাজটা অতোটা সহজ হয়নি মেসিদের জন্য। ইভান রাকিটিচের একমাত্র গোল ব্যবধান গড়ে দিয়েছে ম্যাচে। তাতে ‘লস ব্লাঙ্কোস’দের চেয়ে ১২ পয়েন্টে এগিয়ে গেছে বার্সা।
এক গোলের ম্যাচে উত্তেজনা, রোমাঞ্চ কোনোকিছুরই অভাব হয়নি। ক্লাসিকোর লড়াইটা হয়েছে তাই 'ক্লাসিক'। দুই অধিনায়কের ঠোকাঠূকি, দুই দলের ডিফেন্ডারদের নির্ভুল ফুটবলের রাতে ফরোয়ার্ডরা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু ম্যাচের প্রথম থেকে শেষ মিনিটে চোখ সরানোরও উপায় ছিল না ম্যাচ থেকে।
ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে সোলারি বলেছিলেন, আজ হারলে বিদায় জানাতে হবে লা লিগা শিরোপাকে। ম্যাচের শুরু থেকেই রিয়ালের মধ্যে জয়ের ক্ষুধাটা দেখা দিয়েছে ভীষণভাবে। ২ মিনিটেই ডিবক্সের সামান্য বাইরে ফ্রি-কিক আদায় করেছিলেন টনি ক্রুস, হলুদ কার্ড দেখেছিলেন সার্জিও বুস্কেটস। কিন্তু শুরুতেই বার্সাকে এমন সতর্কবাণী দিলেও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রং হারিয়েছে রিয়ালের আক্রমণভাগ। পজেশন ধরে রেখে আবারও রিয়ালকে চাপে ফেলে বার্সা। বিশেষ করে বাঁ-প্রান্তে উসমান ডেম্বেলে এবং জর্দি অ্যালবাকে আটকাতে রীতিমত হিমশিম খেয়েছেন দানি কারভাহাল। ডানপ্রান্তে গ্যারেথ বেল নামায় রক্ষণে তেমন সাহায্য পাননি কারভাহাল, লুকাস ভাজকেজকে হয়ত সবচেয়ে বেশি মিস করেছেন তিনিই। পরিকল্পিত এবং গোছানো আক্রমণে ম্যাচের ১৫ মিনিটেই ডিবক্সের বাইরে থেকে জোরাল শটে রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন লুইস সুয়ারেজ। মেসিও কম যাননি। ১৯ মিনিটে সুয়ারেজের সাথে দারুণ এক ওয়ান টু করে ডিবক্সে ঢুকে পড়েছিলেন মেসি, কিন্তু সুয়ারেজের ফিরতি পাস নাগাল পাননি।
এর মিনিট তিনেক পর প্রথমার্ধে নিজেদের সেরা সুযোগটা পেয়েছিল রিয়াল। বাঁ-প্রান্তে জেরার্ড পিকেকে কাটিয়ে ডিবক্সে ঢুকে পড়েন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের পাস করিম বেনজেমার পা ঘুরে আসে লুকা মদ্রিচের দিকে। ক্রোয়াট অধিনায়কের শট টের স্টেগানকে পরাস্ত করলেও লাইন থেকে দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন পিকে। প্রথমার্ধের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে রীতিমত ‘লেটার মার্কস’ই পেয়েছেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। গোলের সেরা সুযোগের মিনিট চারেক পরই পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। রবার্তোর সাথে ‘ওয়ান টু’ করে রিয়ালের ডিবক্সে ঢুকে পড়েন রাকিটিচ। এগিয়ে আশা কর্তোয়াকে চিপ করে বার্সাকে লিড এনে দেন ক্রোয়াট মিডফিল্ডার। মদ্রিচের সুযোগের পর জোর হর্ষধ্বনিতে মাতা বার্নাব্যু মুহূর্তেই পরিণত হয় মৃত্যুপুরিতে। গোলের পর ম্যাচে দখল একেবারেই নিজেদের করে নেয় বার্সা। ৩৩ মিনিটে রাকিটিচের দারুণ পাসে আরেকটু হলেই কর্তোয়াকে একা পেয়ে যেতেন মেসি, কিন্তু এবারও অল্পের জন্য বল নাগালে আনতে পারেননি। ৩৯ মিনিটে আবারও রিয়ালের ত্রাণকর্তা হয়ে আসেন কর্তোয়া। ডিবক্সের বাইরে থেকে ফিরিয়ে দেন সুয়ারেজের জোরাল শট, ফিরতি বলে রাকিটিচের শটও রুখে দেন তিনি। একপাক্ষিক প্রথমার্ধের শেষদিকে বার্নাব্যুতে উত্তেজনা ছড়ায় নতুন করে। বল দখলের লড়াইয়ে মেসিকে কনুই মেরে বসেন রামোস। রিয়াল অধিনায়কের আঘাতে মেসি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও খেলা চালিয়ে যায় রিয়াল। রামোস, মেসির বাগবিতণ্ডায় শেষ হয় প্রথমার্ধ।
প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুটা ভালোই করেছিল রিয়াল। ভিনিসিয়াস, বেলরা পিকেদের তটস্থ রেখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু গোলের সুযোগ আর তৈরি হয়নি। উল্টো ৫১ মিনিটে প্রতি-আক্রমণে মেসির পাস থেকে সুয়ারেজের শট ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। পুরো ম্যাচে নিজেকে তেমন মেলে ধরতে না পারলেও সামর্থ্যের ঝলক ঠিকই দেখিয়েছেন মেসি। ৫৮ মিনিটে তার সুযোগসন্ধানী পাশে বাঁ-প্রান্তে বল পেয়ে যান আলবা। কিন্তু স্প্যানিশ লেফটব্যাকের ক্রস নাগাল পাননি ডেম্বেলে, সুয়ারেজের কেউই। আরেকটু হলেই লিড দ্বিগুণ করতে না পাড়ার চড়া মাশুলই দিতে হত বার্সাকে। ৬০ মিনিটে রাকিটিচের ভুলে ডিবক্সে বল পেয়ে যান ভিনিসিয়াস। পিকেকে কাটিয়ে দারুণ এক শটও নিয়েছিলেন, কিন্তু ক্লেমেন্ত লংলের দুর্দান্ত ব্লকে বল চলে যায় গোলের বাইরে দিয়ে। মিনিট দশেক পর আবারও গোলের সুযোগ পায় বার্সা।
৭০ মিনিটে আবারও মেসির ডিফেন্সচেরা এক পাসে কর্তোয়াকে একা পেয়ে যান ডেম্বেলে। কিন্তু এবারও দক্ষহাতে বার্সাকে ফিরিয়ে দেন কর্তোয়া। ম্যাচের বাকিটা সময় হাজারও চেষ্টা করে বার্সার রক্ষণভাগ ভেদ করতে পারেনি রিয়াল। প্রতি-আক্রমণে উল্টো বার্সাকেই মনে হয়েছে ভয়ঙ্কর। বদলি হিসেবে মার্কো আসেন্সিও, ইস্কোকেও নামিয়ে দিয়েছিলেন সোলারি। কিন্তু কাজের কাজটা আর হয়নি। আজকের হারে তিন দিনে টানা দু’বার বার্নাব্যুতে বার্সার কাছে হারল রিয়াল মাদ্রিদ। এবার এক গোলই যথেষ্ট হলো বার্সার জন্য।
এল ক্লাসিকো একাদশ
রিয়াল মাদ্রিদ (৪-৩-৩): কর্তোয়া; কারভাহাল, ভারান, রামোস, রেগুইলন; ক্রুস, মদ্রিচ, কাসেমিরো; বেল, বেনজেমা, ভিনিসিয়াস
বার্সেলোনা (৪-৩-৩): টের স্টেগান; রবার্তো, পিকে, লংলে, আলবা; রাকিটিচ, বুস্কেটস, আর্থার; মেসি, সুয়ারেজ, ডেম্বেলে