• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    কিক অফের আগে: রিয়ালের দুশ্চিন্তা ফর্ম, আয়াক্সের 'ভরসা' বার্নাব্যু

    কিক অফের আগে: রিয়ালের দুশ্চিন্তা ফর্ম, আয়াক্সের 'ভরসা' বার্নাব্যু    

    রিয়ালের দুশ্চিন্তা ফর্ম, আয়াক্সের 'ভরসা' বার্নাব্যু

    রিয়াল মাদ্রিদ বনাম আয়াক্স; ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোল ২য় লেগ; সান্তিয়াগো বার্নাব্যু; ৫ মার্চ, রাত ২টা

     

    গত বছর ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলর ড্রতে আয়াক্স আমস্টারডামকে পেয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ, তখন ইউরোপের 'হ্যাটট্রিক' চ্যাম্পিয়নদের পক্ষেই বাজি ধরার পাল্লাটা ছিল ভারী। সপ্তাহ তিনেক আগে ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনাতে ঘটেছে প্রত্যাশিত ঘটনাই। আয়াক্সের ঘাঁটি থেকে জয় নিয়ে ফিরেছে রিয়াল। কিন্তু রিয়ালের কট্টর সমর্থকেরাও হয়ত স্বীকার করবে, ঠিক কতটা ঘাম ঝড়াতে হয়েছে তাদের দলকে। 'ভিএআর'-এর বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিজেদের অনুকূলে না গেলে হয়ত ফিরতে হতো খালি হাতেই। ২-১ গোলের জয়, দুটি 'অ্যাওয়ে' গোল, দ্বিতীয় লেগ নিজেদের মাঠে-  শেষ আটে যাওয়ার সবধরণের অনুপ্রেরণাই আছে রিয়ালের। কিন্তু এই মৌসুমে নিজেদের মাঠে রিয়ালের পারফরম্যান্সে অঘটনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না একেবারেই। রিয়ালের ফর্মহীনতা, আর নিজেদের অকুতোভয় তারুণ্যই আশা দেখাচ্ছে আয়াক্সকে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে তাই আজ রোমাঞ্চকর কিছু ঘটার সব রসদই আছে প্রস্তুত।

     

    'রামোসের অনুপস্থিতি কোনও অজুহাত হতে পারে না' 

    গ্রুপপর্বে হলুদ কার্ড দেখেছিলেন দুটি। প্রথম লেগের শেষদিকে মার্কো আসেন্সিওর গোলে রিয়াল লিড নেওয়ার কিছুক্ষণ বাদেই ইচ্ছাকৃতভাবে হলুদ কার্ড দেখেন অধিনায়ক সার্জিও রামোস। দুই 'অ্যাওয়ে' গোল থাকায় হয়ত দ্বিতীয় লেগ মিস করে কোয়ার্টারে খেলা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। কিন্তু রামোসের 'সূক্ষ্ম কারচুপি' ধরে ফেলল ইউয়েফা, ফলাফল? এক নয়, দুটি ম্যাচ মিস করবেন তিনি। রিয়াল কোয়ার্টারে উঠলেও প্রথম লেগে থাকবেন না রামোস। বর্তমান ফর্মে রামোসের না থাকাটা রিয়ালকে ভোগাতে পারে বেশ। তবে যা-ই ঘটুক, অধিনায়কের অনুপস্থিতিকে দোহাই দিতে নারাজ রিয়াল কোচ সান্তিয়াগো সোলারি, 'সার্জিওর না থাকাটা অবশ্যই দুঃখজনক। এই মৌসুমে আমাদের সেরা ডিফেন্ডার সে। দলে তার নেতৃত্বের প্রভাব দারুণ। ওর মত বিশ্বমানের কাউকে যেকোনও দলই মিস করবে মূল একাদশে না থাকলে। কিন্তু আমরা রিয়াল মাদ্রিদ। নাচোর মত অভিজ্ঞ ফুটবলার আছে আমাদের। সার্জিওর জায়গায় সে অনেক বার খেলেছে। বড় ম্যাচে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে নাচোর। মূল কথা হল, আমরা হারি বা জিতি; ফলাফলের জন্য পুরো দলই দায়ী থাকবে। কারও একার গুণে আমরা জিতব না, আবার কারও একার ভুলে হারবও না। তবে যাই হোক, সার্জিওর অনুপস্থিতির দোহাই আমরা দিব না।'

     

     

    নিজেদের শেষ দুই 'হোম' ম্যাচ বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলেছিল রিয়াল, হেরেছে দুটিতেই। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আট নিশ্চিত করার আগে বার্সার বিপক্ষে বার্নাব্যুতে টানা দুই হার কোনও প্রভাব ফেলবে কি না, এমন প্রশ্ন উঠতেই বেশ চটে গিয়েছিলেন সোলারি, 'আগে কী হয়েছে, না হয়েছে এসব নিয়ে ভাববার সময় নেই। দুই দিন আগে হলেও সেই ম্যাচ আমাদের জন্য পুরনো। আমাদের সব ধ্যান-জ্ঞান শুধুমাত্র আজকের ম্যাচ নিয়েই।'

     

    'রূপকথায় বিশ্বাস না করলে এতদূর আসতে পারতাম না'

    সেই ২০০৫-০৬ মৌসুমে শেষবার চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্ব খেলেছিল আয়াক্স। শেষ আটে জায়গা করে নিতে পেরেছিল সেই ২০০২-০৩ মৌসুমে। এরপর গ্রুপপর্বের গেরোই আর কাটাতে পারেনি ডাচ দলটি। কিন্তু এই মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখের মত দলকে সমানে সমান টেক্কা দিয়ে নকআউটে এসেছে তারা। নিজেদের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখার কারণেই এতদূর এসেছে ক্রুইফের উত্তরসূরি, মানেন কোচ এরিক টেন হাগ, 'গত কয়েক মৌসুম ইউরোপে ভাগ্য একেবারেই সহায় হয়নি আমাদের। এই মৌসুমে দলটা বেশ গোছানো। অভিজ্ঞতা, তারুণ্যের মিশেলটা দারুণ। নিজেদের ওপর আস্থা, বিশ্বাস থেকেই এতদূর এসেছি। প্রথম লেগে দুর্দান্ত খেলেছে ছেলেরা। একটু এদিক সেদিক হলে আমরাই জিততে পারতাম। কিন্তু অতীতে আর ফিরে যেতে চাই না। আজ বার্নাব্যুতে আমাদের অন্তত দুই গোলের ব্যবধানে জিততে হবে, বা দুইয়ের অধিক গোল করতে হবে। অনেকের কাছে ব্যাপারটা অসম্ভব হতে পারে, কিন্তু রূপকথায় বিশ্বাস না করলে আমরা এতদূর আসতে পারতাম না। আর এতদূর এসে হাল ছাড়ার পাত্র নই আমরা। সমীকরণটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।'

     

     

    দলের খবর

    ইউরোপে টিকে থাকার ম্যাচে প্রায় পূর্ণশক্তির স্কোয়াডই পাচ্ছে দু'দল। ইনজুরির কারণে রিয়ালের হয়ে থাকছেন না মার্কোস ইয়োরেন্তে। আয়াক্সের সবাইকেই পাচ্ছেন এরিক।

     

    সম্ভাব্য মূল একাদশ 

    রিয়াল মাদ্রিদ (৪-৩-৩):কর্তোয়া; কারভাহাল, ভারান, নাচো; রেগুলিয়ন; মদ্রিচ, ক্রুস, কাসেমিরো; ভাজকেজ, ভিনিসিয়াস, বেনজেমা

    আয়াক্স (৪-৩-৩): ওনানা; মাজারুই, ডি লিট, ব্লিন্দ, টালিয়াফিকো; ডি ইয়ং, দি বিক, শোন; নেরেস, তাদিচ, জিয়েচ

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়

    • ডাচ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ৫ ম্যাচই জিতেছে রিয়াল।
    • প্রতিপক্ষের মাঠে প্রথম লেগ জেতার পর ৩৪বারে মাত্র একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিয়েছে রিয়াল।
    • নিজেদের শেষ ৭ ম্যাচে ক্লিনশীট রাখেনি সোলারির দল। 

     

    'মিশন ইম্পসিবল'-এ ডর্টমুন্ডের একমাত্র ভরসা সিগনাল ইদুনা 

    বরুশিয়া ডর্টমুন্ড বনাম টটেনহাম হটস্পার; ইউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোল ২য় লেগ; সিগনাল ইদুনা পার্ক; ৫ মার্চ, রাত ২টা

     

    হ্যারি কেইন, ড্যালে আলি ছাড়া ওয়েম্বলিতে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে প্রথম লেগে নেমেছিল টটেনহাম। আক্রমণভাগের অন্যতম দুই কান্ডারি ছাড়া হয়ত কঠিন এক ম্যাচেরই অপেক্ষা করছিলেন কোচ মরিসিও পচেত্তিনো। ডর্টমুন্ডের অবস্থাও যে খুব একটা ভাল ছিল, তা অবশ্য নয়। ওয়েম্বলিতে ছিলেন না মার্কো রয়েস, পাকো আলকাসেরদের কেউই। মূল ভরসাদের ছাড়া খেলতে নেমে ডর্টমুন্ডকে রীতিমত নাচিয়ে ছেড়েছে স্পার্স। ৩-০ গোলের বড় জয়ে শেষ আটে বলতে গেলে এক পা দিয়েই রেখেছে পচেত্তিনোর দল। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন ডর্টমুন্ড, আর মাঠের নাম যখন সিগনাল ইদুনা পার্ক; তখন আসলে ব্যবধান যত বড়ই হোক; আত্মতুষ্টিতে ভোগার মত বোকামী করলে হয়ত বিদায়ই নিতে হবে স্পার্সকে। ইউরোপের অন্যতম বৈরী পরিবেশ হিসেবে খ্যাত এই সিগনাল ইদুনাই ভরসা দেখাচ্ছে ডর্টমুন্ডকে, নিজেদের মাঠে তো আর কম রূপকথার জন্ম দেয়নি লুচিয়ান ফাভ্রের দল।

     

    'প্রথম গোলটাই মুখ্য'

    ওয়েম্বলিতে স্পার্সের বিপক্ষে ডর্টমুন্ডের এমন ভরাডুবি আশা করেননি কেউই। ৩ গোলের বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় কাজটা আজ একটু বেশিই কঠিন হয়ে পড়ল বুন্দেসলিগার এই মৌসুমের শীর্ষ দলটির জন্য। কিন্তু এই সিগনাল ইদুনাতেই ইউরোপের অন্যতম সেরা রক্ষণভাগ সমৃদ্ধ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল তারা। আজ এই ব্যবধানে জিতলেই নিশ্চিত হবে শেষ আটের যাত্রা। তবে এখনই আকাশ কুসুম স্বপ্নে বিভোর হচ্ছেন না ডর্টমুন্ড কোচ লুচিয়ান ফাভ্রে, 'অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে কী হয়েছিল, তা নিয়ে এখন কথা বলার কিছু নেই। প্রত্যেকটি ম্যাচই আলাদা। একবার বড় ব্যবধানে বড় দলকে হারিয়েছি বলে তার পুনরাবৃত্তি যে হবেই, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে এটা নিশ্চিত, আমরা হাল ছাড়ছি না। দলের একজন সদস্যও অসম্ভব মনে করছে না আজকের ম্যাচটি। বিশ্বাসই মূল। আর ম্যাচের শুরুর দিকেই প্রথম গোলটা আমাদের পেতেই হবে। তবে গোলের নেশায় আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষণের দিকে উদাসীন হওয়া চলবে না। কারণ স্পার্স সুযোগ পেলেই প্রতি-আক্রমণে গোল করে বসবে। ৫ গোল করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে তখন। আমাদের দারুণ বিচক্ষণতার সাথে ছক কষতে হবে। যেকোনও কিছু সম্ভব।'

     

     

    'আমাদের কাছে স্কোরলাইন এখনও সমান সমান'

    প্রথম লেগে খুব সম্ভবত এই মৌসুমে নিজেদের অন্যতম সেরা খেলাটাই দিয়েছিল স্পার্স, তাও কেইন এবং আলিকে ছাড়া। দ্বিতীয় লেগটা কঠিন হলেও আত্মবিশ্বাস তুঙ্গেই থাকার কথা স্পার্সের, কিছুটা আত্মতুষ্টিতে ভুগলেও হয়ত বাড়াবাড়ি হবে না। কিন্তু পচেত্তিনো মনে করিয়ে দিলেন, প্রথম লেগের কথা ভুলে গেছে দলের সবাই, 'অবশ্যই ফলাফলটা দারুণ ছিল আমাদের জন্য। কিন্তু অতীতের সুখস্মৃতি আমরা অতীতেই ফেলে এসেছি। এখন শুধু সামনে দেখবার পালা। শেষ আটে যাওয়ার দারুণ সুযোগ এসেছে আমাদের সামনে। ডর্টমুন্ড জীবন বাজি রেখে লড়বে, কিন্তু আমাদেরও সাবধান থাকতে হবে। প্রথম লেগের সুখস্মৃতি তো বটেই, ফলাফলও ভুলে গিয়েছি আমরা। আজকের ম্যাচে নামার আগে আমাদের মানসিকতা এমন থাকবে যে প্রথম লেগ গোলশূন্য ড্র হয়েছে। এই ম্যাচ দিয়েই শেষ আটে যেতে হবে। ডর্টমুন্ড প্রেসিং করে খেলবে, কিন্তু আমাদের স্নায়ুর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো চলবে না।'

     

     

    দলের খবর

    প্রথম লেগে একাধিক খেলোয়াড় হারানো স্পার্সের হয়ে আজ থাকছেন না কেবল আলি। হ্যারি, উইঙ্কস, ইয়ান ভার্টনহেনদের সবাই-ই ফিরেছেন পূর্ণ অনুশীলনে। ডর্টমুন্ডের হয়ে থাকছেন না রাইটব্যাক লুকাস পিজচেক। ম্যাচের আগে ফিটনেস পরীক্ষার পরই জানা যাবে মার্সেল স্মেলজার এবং ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচের অংশগ্রহণের ব্যাপারে।

     

    সম্ভাব্য মূল একাদশ

    বরুশিয়া ডর্টমুন্ড (৪-৩-৩): বুর্কি; হাকিমি, আকাঞ্জি, দিয়ালো; গুরেরো; উইটসেল, ডেলেইনি, পুলিসিচ; সানচো; আলকাসের, রয়েস

    টটেনহাম হটস্পার (৩-৪-৩): লরিস; সানচেজ, অল্ডারওয়েরেল্ড; ভার্টনহেন; অরিয়ের, ওয়ানইয়ামা, উইঙ্কস, সিসোকো; এরিকসেন, সন, কেইন

     

    সংখ্যায় সংখ্যায় 

    • ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ৩ ম্যাচেই জিতেছে স্পার্স। 
    • চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে খেলা শেষ ১৩ ম্যাচের ১০টিই হেরেছে ডর্টমুন্ড। 
    • চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের শেষ ১৭ ম্যাচেই জাল খুঁজে পেয়েছে স্পার্স।