• লা লিগা
  • " />

     

    মেসির 'দ্বিতীয়' হওয়ার ম্যাচে সহজ জয় বার্সার

    মেসির 'দ্বিতীয়' হওয়ার ম্যাচে সহজ জয় বার্সার    

    স্প্যানিশ লা লিগায় বার্সেলোনার হয়ে গোল, অ্যাসিস্টের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনিই। বাকি ছিল বার্সার হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচের রেকর্ডটা নিজের করে নেওয়ার। আজ সে মিশনে আরও এক ধাপ এগিয়ে আসলেন কাতালানদের অধিনায়ক লিওনেল মেসি। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে (৪৪২) টপকে বার্সার হয়ে লা লিগায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা ফুটবলার এখন মেসিই (৪৪৩), সামনে থাকলেন শুধু জাভি হার্নান্দেজ (৫০৫)। আরও এক মাইলফলক স্পর্শ করার ম্যাচে আবারও সেই মেসির কারণেই জয় পেল বার্সা। পিছিয়ে পড়ার ম্যাচে মেসি নিজে গোল করলেন, আরেক গোল করালেন জেরার্ড পিকেকে দিয়ে। আরও এক মেসিময় ম্যাচে ন্যু ক্যাম্পে রায়ো ভায়েকানোকে ৩-১ গোলে হারাল বার্সা। ২৭ ম্যাচে ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই থাকল এর্নেস্তো ভালোভার্দের দল, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাথে ব্যবধানটা থাকল ৭ পয়েন্টেই। 

     

     

    লা লিগা টেবিলের শীর্ষে আছে তারা, দুই নম্বরে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সাথে ব্যবধানটা ৭ পয়েন্টের। ন্যু ক্যাম্পে আজ প্রথমার্ধে বার্সা যেন জানান দিয়েই রাখল, কেন মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময়ই স্প্যানিশ লিগের শীর্ষে আছে তারা। মেসি, সুয়ারেজ, কুতিনিয়ো, ডেম্বেলে আক্রমণ চতুষ্টয়ে রায়োর টুঁটি চেপে ধরেছিল বার্সা। কিন্তু গোল পেতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে কাতালানদের। অবশ্য এজন্য মেসিদের ব্যর্থতার চেয়ে রায়ো গোলরক্ষক স্তোলে দিমিত্রিয়েভস্কির কৃতিত্বই বেশি। প্রথমার্ধের ২০ মিনিটে অন্তত ৪টি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন তিনি। সুয়ারেজ, কুতিনিয়ো, ডেম্বেলেদের পরাস্ত করেছেন একাধিকবার। ১৮ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে সুয়ারজের বাঁকানো শট হাওয়ায় ভেসে অসামান্য দক্ষতায় ফিরিয়ে দিয়েছেন দিমিত্রিয়েভস্কি। ২০ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ পায় বার্সা, আবারও বাধা হয়ে দাঁড়ান ম্যাসেডোনিয়ার গোলরক্ষক। দিমিত্রিয়েভস্কির দক্ষতা বৃথা যেতে দেয়নি রায়ো।

     

     

     

    ২৪ মিনিটে সুয়ারেজের পা থেকে বল কেড়ে নেন গার্সিয়া। বল দখলে এনেই বাঁ-প্রান্তে লম্বা পাস বাড়ান স্ট্রাইকার রাউল দে টমাসকে। বল নিয়ন্ত্রণে এনে জেরার্ড পিকে এবং নেলসন সেমেদোকে কাটিয়ে দুর্দান্ত এক বাঁকানো শটে দলকে লিড এনে দেন রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ধারে খেলতে আসা স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। এত সুযোগের পরও পিছিয়ে পড়ায় ভাটা পড়ে ন্যু ক্যাম্পের উৎসবমুখর পরিবেশে। এতক্ষণ সমর্থকদের হর্ষধ্বনিতে মুখর ন্যু ক্যাম্প মুহূর্তেই পরিণত হয় গম্ভীর নীরব কোনও ক্লাসরুমে। সমর্থকেরা কিছুটা চুপ মেরে গেলেও হাল ছাড়েনি বার্সা। ৩২ মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারত তারা। কিন্তু মেসির ফ্রিকিকে ডিবক্সে ফাঁকা জায়গা পেয়েও হেড করে বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি পিকে। তবে সুযোগ হাতছাড়ার শাপমোচনটা কিছুক্ষণ বাদেই করেছেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার।

     

     

    ৩৮ মিনিটে ডিবক্সের ডানপ্রান্তে ফ্রিকিক পায় বার্সা। মেসির চমৎকার ফ্রিকিকে এবার আর ভুল করেননি পিকে। লাফিয়ে উঠে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান তিনি। মুহূর্তেই যেন প্রাণের সঞ্চার হয় ন্যু ক্যাম্পে। এই মৌসুমে লা লিগার ডিফেন্ডারদের মধ্যে হেডে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন পিকেই (৩)। সমর্থকেরা ফিরে পান গলার জোর, বার্সাও ফেরে স্বরূপে। প্রথমার্ধ শেষদিকে পেনাল্টির আবেদন জানিয়েছিল বার্সা। রায়োর ৪জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডিবক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। শট নেওয়ার ঠিক আগ মূহূর্তে বার্সার অধিনায়ককে ট্যাকেল করেন বেবে। কিন্তু বার্সার ফুটবলারদের পেনাল্টির আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি। তবে বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে খুব একটা ভুগতে হয়নি তাদের।

     

     

    ৪৯ মিনিটে সেমেদোকে ডিবক্সে ফেলে দেন জর্দি আমাত। এবার ঠিকই পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। ১২ গজ থেকে দিমিত্রিয়েভস্কিকে পরাস্ত করেন মেসি। ম্যাচের বাকিটা সময় বার্সার কাছে আর পাত্তাই পায়নি রায়ো। গোলশোধের আশায় রক্ষণের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয় রায়ো। এতে যেন হিতে বিপরীতই হয় তাদের। বার্সার রক্ষণভাগকে তো পরীক্ষায় ফেলতেই পারেনি, উল্টো বার্সার প্রতি-আক্রমণের জোয়ারে ভেসে যেতে হয়েছে তাদের। তবে আগামী মঙ্গলবার অলিম্পিক লিঁওর বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগের কথা ভেবে হয়ত কিছুটা গা বাঁচিয়েই খেলেছে বার্সা। প্রতি-আক্রমণে সুযোগ পেলেও সেগুলো কাজে লাগাতে পারেননি মেসিরা। তবে রায়োর কফিনে তখনও শেষ পেরেকটা ঠুকে দেওয়া বাকি ছিল বার্সার।

    সেই কাজটাই করেন ইভান রাকিটিচ। বদলি হিসেবে নেমে ৮২ মিনিটে সুয়ারেজের সাথে দারুণ এক 'ওয়ান টু' করে ডিবক্সে ঢুকে পড়েন ক্রোয়াট মিডফিল্ডার। দিমিত্রিয়েভস্কিকে এগিয়ে আসতে দেখে নিঃস্বার্থভাবে সুয়ারেজের দিকে পাস বাড়ান রাকিটিচ। ফাঁকা গোলে আলতো টোকায় বার্সার জয় নিশ্চিত করেন সুয়ারেজ। শেষ পর্যন্ত সহজ জয়ে লিঁও মহড়াটা ভালভাবেই সেরে নিল ভালভার্দের দল। ধরে রাখল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের চেয়ে ৭ পয়েন্টের ব্যবধানটাও।