৫ গোলের থ্রিলার জিতে মিলানে ইন্টারের রাজত্ব
৬ মিনিটের ইনজুরি টাইমও প্রায় শেষ। সান সিরোতে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ৩-২ গোলে পিছিয়ে এসি মিলান। প্যাট্রিক কুত্রোনে সিক্স ইয়ার্ড বক্সের ভেতর বাম কোণা থেকে শট করলেন। ওখান থেকে শট অন টার্গেটে রাখতে পারলেই গোল হয়ে যায় সাধারণত। ইন্টার ডিফেন্ডার ডানিলো ডি আমব্রোসিওর কিছু করারও ছিল না। দুই হাত পেছনে বেঁধে ওই শট ঠেকাতে শুয়ে পড়লেন। বলা যায় আমব্রোসিওর ওই ব্লকটাই শেষে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে। পাঁচ গোলের থ্রিলারে মিলান ডার্বি জিতে ইন্টার মিলান উঠে গেছে পয়েন্ট তালিকার তিনে। আর টানা পাঁচ ম্যাচ জেতা জেনেরো গাত্তুসোর দলের জয়ের ধারায় ছেদ তো পড়েছেই, রোসোনেরিরা নেমেও গেছে এক ধাপ।
ইন্টার ম্যানেজার লুসিয়ানো স্প্যালেত্তির সময়টা ভালো যাচ্ছিল না মোটেই। সিরি আতে ক্রমেই নিচের দিকে নামছিল ইন্টার, মাউরো ইকার্দি ইস্যুও ছিল সঙ্গে। গেল সপ্তাহেও তারা বাদ পড়েছে ইউরোপা লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। সবশেষ মিলান ডার্বির পর থেকেই খেই হারিয়েছিল ইন্টার, আর পথ খুঁজে পেয়েছিল মিলান। সাম্প্রতিক সময়ে যাই হোক না কেন, ইন্টার আসলে মিলানকে মনে করিয়ে দিয়েছে, এই ডার্বিতে তারাই রাজা। ২০১৬ সালের পর থেকে নেরাজ্জুরিরা লিগে একবারও হারেনি মিলানের কাছে। সেটাই বোধ হয় অনুপ্রেরণা যোগালো ইন্টারকে শুরু থেকেই। মিলানের ওপর চড়াও হয়ে মাত্র ৩ মিনিটে এগিয়ে যায় ইন্টার।
ডানদিক থেকে ইভান পেরিসিচ ক্রস করেছিলেন ফারপোস্টে, সেটা হেড দিয়ে নামিয়ে গোলের সামনে মাঝামাঝি জায়গায় ফেলেছিলেন লাউতারো মার্টিনেজ। এরপর ভেসিনো সেখান থেকেই গোল করেছেন। এরপর প্রথমার্ধে একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ইন্টারকে। মিলানকে পুরোটা সময় কোনঠাসা করে রেখেছিল তারা। প্রথমার্ধে ব্যবধানটা যে আরও বড় হয়নি, তার জন্য মিলান অবশ্য ভেসিনো আর স্ক্রিনিয়ারকে ধন্যবাদ দিতে পারে। দুইজনই সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেছেন গোলের সামনে। প্রথমার্ধে মিলানের বলার মতো আক্রমণ ছিল একটিই, পাকেতার সেই হেড অবশ্য সামির হান্দানোভিচকেও ভোগাতে পারেনি না। দারুণ ফর্মে থাকা ক্রিজতম পিয়ন্তেকও হতাশ করেছেন মিলানে। তিনি অবশ্য পুরো ম্যাচেই সুবিধা করতে পারেননি।
৫১ মিনিটে কর্নার স্টেফান ডি ভ্রাই গোল করার পর অবশ্য মনে হচ্ছিল খেলাটা একপেশেই হবে। তবে মিলান ডার্বির রোমাঞ্চ আসলে শুরু এরপর থেকেই। এর কিছুক্ষণ পর হেডে গোল করে টিয়েমুয়ে বাকেয়োকো মিলানকে ফিরিয়ে আনেন ম্যাচে। মিলানের এক গোল শোধ করার আনন্দে অবশ্য ভাটা পড়ে মিনিট দশেক পরই। স্যামু কস্তেলেহো ডিবক্সের ঠিক লাইন বরাবর জায়গায় ফাউল করে বসেন মাতেও পলিতানোকে। স্পটকিক থেকে গোল করে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মার্টিনেজ আবারও দুই গোলের লিডে নিয়ে যান ইন্টারকে।
তবে মিলান সেখান থেকেই যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অন্য প্রান্তে আরেক আর্জেন্টাইন মাতেও মুসাকিও গোল করে খেলা জমিয়ে তোলেন আরও। মুসাকিওর ওই গোল নিয়ে অবশ্য বিতর্কও হতে পারে, গোলের বিল্ডআপে ক্রিজতভ পিয়ন্তেক অফসাইড পজিশনে থেকে খেলায় প্রভাব ফেলছিলেন কী ফেলছিলেন না- সেই প্রশ্নের জবাব পরে ভিএআরেই নির্ধারণ হয়েছে।
শেষদিকে দুইদল আক্রমণে গতি বাড়ায় আরও। এর মধ্যে একবার আন্দ্রে কন্তিকে লাল কার্ডও দেখান রেফারি। পরে আবার নিজেই ভিএআরের সাহায্য নিয়ে সেটা বাতিল হয়ে হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন কন্তিকে। নাটক অবশ্য সেখানেও শেষ নয়। রেফারির সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি ইন্টার ম্যানেজার। পরে রেফারি উল্টো তাকেই মাঠ থেকে বের করে দেন।
৯৬ মিনিটের ওই সুযোগের আগেও অবশ্য ম্যাচে ফেরার দারুণে এক সুযোগ এসেছিল মিলানের কাছে। কস্তেলেহোই ইন্টারের প্রথম গোলের মতো সুযোগ তৈরি করেছিলেন হেড করে। কিন্তু জায়গামতো কোনো সতীর্থকে পাননি। পরে গোলের সামনে থেকেই বল ক্লিয়ার করে ইন্টার।
এই জয়ের পর আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার দৌড়ে ফিরে আসলো ইন্টার। ২৮ ম্যাচ থেকে তাদের পয়েন্ট এখন ৫৩। আর রোসোনেরিরা পিছিয়ে আছে দুই পয়েন্টে।