বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ওরা ১৫: কে হবেন পঞ্চম পেসার?
দলটা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন একরকম বলেই দিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডে সিরিজে যে ওয়ানডে দল খেলেছে, সেখানের প্রায় সবাই থাকবেন। ওপেনার থেকে শুরু করা গেলে তামিম ইকবালের সঙ্গে থাকবেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। এরপর সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির রহমানের সঙ্গে আরেকজন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাইফ উদ্দিনের জায়গাও প্রায় নিশ্চিত। মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন তো থাকছেনই। এই ১৩ জন নিয়ে খুব একটা সংশয় থাকার কথা নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, ১৪ ও ১৫ নম্বর সদস্য হিসেবে কে যাচ্ছেন।
এই দুজনের একজন যে একজন পেসার হবেন সেটাও নিশ্চিত। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই পেসার হিসেবে কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে? মাস দুয়েক আগে বিপিএলের শেষ দিকেও জায়গাটা নিয়ে খুব বেশি সংশয় ছিল না। তাসকিন আহমেদ বিপিএলে সিলেট সিক্সারসের হয়ে নিজেকে চেনাচ্ছিলেন প্রায় প্রতি ম্যাচেই। বিপিএল শেষ করেছেন ২২ উইকেট নিয়ে, টুর্নামেন্টেরই যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু শেষ ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে অ্যাঙ্কল ভেঙেই হলো সর্বনাশ। নিউজিল্যান্ড সফরে জায়গা পেয়েও ছিটকে যেতে হলো তাসকিনকে। মাস দুয়েকের জন্যই আর নাম হলো না মাঠে।
এখানে তাসকিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শোনা যাচ্ছে শফিউল ইসলামের নামটাই। তাসকিনের মতো ২০১৭ সালের পর তিনিও জাতীয় দলের বাইরে, বিপিএলে তাঁর পারফরম্যান্সও খুব খারাপ ছিল না (১৩ ম্যাচে ১৫ উইকেট, গড় ২৩.৫৩)। তবে নিউজিল্যান্ড সফরে প্রস্তুতি ম্যাচে বা এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও খুঁজে পাওয়া যায়নি শফিউলকে। বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিগে ৮ ম্যাচে ৩০.৪১ গড়ে ১২ উইকেট গড় বলছে, ছন্দটা ঠিক খুঁজে পাচ্ছেন না। তারপরও অভিজ্ঞতা বিবেচনায় এই মুহূর্তে শফিউলই নির্বাচকদের শর্টলিস্টে এগিয়ে আছেন বলে জানা যাচ্ছে। তাসকিন অবশ্য আগামীকালই (বুধবার) প্রিমিয়ার লিগে নামছেন, চোট থেকে ফেরার পর নিজেকে প্রমাণ করার একটা সুযোগ পাচ্ছেন সেখানে। মাসদুয়েক বাইরে থাকার পর কাজটা অবশ্য সহজ হবে না মোটেও।
ফর্মের হিসেবে তাই দুজনের তুলনাটা ঠিক করা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আরেকটি মানদন্ড হতে পারে ইংল্যান্ডের মাটিতে আর বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স। ইংল্যান্ডের মাটিতে দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলেছিলেন তাসকিন, দুই ম্যাচে ৪৬ গড়ে পেয়েছিলেন ২ উইকেট। শফিউল খেলেছেন তিনটি ওয়ানডে, ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাঠে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের ম্যাচে শেষ ওভারে বলও করেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা এগিয়ে রাখতে পারে তাঁকে।
আর বিশ্বকাপ খেলা বিবেচনায় আনলেও সর্বশেষ অভিজ্ঞতা এগিয়ে রাখবে তাসকিনকেই। ২০১৫ বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছিলেন তাসকিন, বাংলাদেশের হয়ে যা ছিল সর্বোচ্চ। শফিউল সেবার খেলেননি, ২০১১ বিশ্বকাপে অবশ্য ৬ ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন।
এই দুজনের বাইরে ফর্মের কারণেই আরেকজনের নাম আসছে আলোচনায়। ফরহাদ রেজা গত কিছু দিনে যেমন খেলছেন, ফর্মের বিচারে অন্তত তাঁকে ফেলে দেওয়া মুশকিল। বিপিএলে ১৪ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে বোলারদের তালিকায় ছিলেন ছিলেন বোলারদের তালিকায় আটে, আর প্রিমিয়ার লিগে সোমবার পর্যন্ত ১০ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে সবার অনেক ওপরেই। ব্যাট হাতেও ঝড় তুলছেন নিয়মিত, কদিন আগে লিস্ট এ ক্রিকেটে বাংলাদেশের কারও দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডও গড়েছেন। পাঁচ বছর ধরে জাতীয় দলের বাইরে বলেই তাঁর নাম হয়তো বিবেচনায় আসছে না। বিপক্ষে আছে বয়সও।
এর বাইরে অন্য কেউ বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়ে গেলে সেটা হবে বড় চমক। আবু জায়েদ রাহী, খালেদ আহমেদ, এবাদত হোসেনরা টেস্ট দলে খেললেও সীমিত ওভারে সেভাবে সুযোগ পাননি। আবার আবু হায়দার রনির মতো সাম্প্রতিক সময়ে যারা খেলেছেন, তাদেরও আসার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ।
শেষ পর্যন্ত তাই তাসকিন বা শফিউলের ভাগ্যেই হয়তো শিকে ছিঁড়তে যাচ্ছে...