• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    মাশরাফির কাছে বিশ্বকাপের পাঁচ চ্যালেঞ্জ

    মাশরাফির কাছে বিশ্বকাপের পাঁচ চ্যালেঞ্জ    

    সিটবেল্টটা ঠিক করে নিতে পারেন এখন থেকেই। ইংল্যান্ডের এবারের বিশ্বকাপ হতে পারে অন্যতম বড় রান-উৎসব। ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের মাটিতে ৩৭ বার হয়েছিল ৩০০-পেরুনো স্কোর, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সে অঙ্কটা ২৬ বার, যার মধ্যে ২০টিই ইংল্যান্ডের। এ সময়ে বাংলাদেশ ৩০০ পেরিয়েছে ৬ বার, এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঢাকায় ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩২৯। ইংল্যান্ডের মাটিতে একটি ৩০০-পেরুনো স্কোর আছে বাংলাদেশের, ওভালে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে, সেটা অবশ্য তাড়া করে সহজেই জিতেছিল স্বাগতিকরা। 

    ইংলিশ কন্ডিশন বললে সুইং-সিমসহ বোলারদের দাপট বুঝালেও চিত্রটা সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত ওভারে বদলে গেছে বেশ। উইকেট এখন বেশ ফ্ল্যাট থাকে, তার ওপর আইসিসি টুর্নামেন্ট বলে সেটা হওয়ার কথা আরও বেশি ব্যাটিং সহায়ক। বিশ্বকাপের ব্যাপারটা আঁচ করতে পারছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। দেশ ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে ইংল্যান্ডে ভাল করতে যেসব পয়েন্টের কথা বলছেন তিনি- 

    দরকার তামিমের ক্রিজে থাকা

    তামিমকে আমরা লম্বা সময় ব্যাটিং করার যে ভূমিকা দিয়েছি, সেটা করলে আমাদের রানটা বড় হয়। ও একশ করলে আমাদের তিনশর কাছে যায়। তামিম তার খেলার ধরন বদলেছে দলের জন্য। সে এখন ফোকাস করে ৪০ ওভার ব্যাট করার। ৫০ ওভারও ব্যাটিং করতে বলি কখনো কখনো।

     

     

    তামিমকে যখন এই ভূমিকা দিচ্ছি তখন বাকিদের লিটন বা সৌম্যকে ওই স্বাধীনতা দিতে হয় যাতে শটস খেলতে পারে। নিউজিল্যান্ডে লিটন তিন ম্যাচেই মারতে গিয়ে আউট হয়েছে। সমালোচনা ঠিকই হয়েছে, তবে ওর উপর আমাদের কোন চাপ ছিল না। কারণ ব্যাপারটা ছিল, ওরা ফ্রি ক্রিকেট খেলুক। এর মানে এই না যে ফ্রি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে আউট হবে। আপনি যদি দেখেন বিরেন্দর শেওয়াগ বা অ্যাডাম গিলক্রিস্ট কেমন মারত। কিন্তু ওদের ধারাবাহিকতা ছিল। ওদেরকেও এটা মানিয়ে নিতে হবে। ওরা যদি পারফর্ম করতে পারে তাহলে দলের জন্য ভাল হবে। 



    চ্যালেঞ্জ রিস্ট-স্পিনার না থাকা...

    বিশ্বকাপে আইসিসির চাওয়া থাকে ফ্ল্যাট উইকেট এবং প্রচুর রানের। সেক্ষেত্রে অবশ্যেই এখানে বড় রানের খেলা হবে। ইংল্যান্ডে এই সময়ে অনেক রান হয়। সব দলের বোলারদের জন্যই যেটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের হয়তো কোনো রিস্ট স্পিনার নেই…. এটা আমাদের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যান্য দলে যাদের আছে তারা ব্রেকথ্রু আনে মাঝের দিকগুলিতে। এটা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ।

    ...তবে ভরসা সাকিবদের ওপরই 

    হয়তো বাড়তি পেস নেই, তবে বৈচিত্র আছে। কাজ হবে সেসব ঠিকঠাক ব্যবহার করা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলিং করা- সব মিলিয়ে আমাদেরকে ওইভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। যেহেতু আমাদের রিস্ট স্পিনার নেই, এখানে আমাদের অভাব আছে। তবে সাকিব বিশ্বমানের। মিরাজ খুব ভালো করছে। মোস্তাফিজ, রুবেল, সাইফউদ্দিন, আমি আছি। ইউনিট হিসেবে আমরা খারাপ না যে আমরা ওই চাপ সামলাতে পারব না। কিন্তু কোনো কোনো ম্যাচে ওঠানামা যাবে। কিন্তু ফিরে আসা জরুরী। এটা হতে পারে এক ম্যাচ পর..আবার মাঝের দিকে। ভালো দুই-একটা উইকেট পড়লে খেলা বোলারদের পক্ষে চলে আসে। আমাদের সামর্থ্য সম্পর্কে আমরা জানি, সেসবের ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।।

    পেসে প্রয়োজন এক ইউনিট

    অস্ট্রেলিয়ার মতোই কন্ডিশন এখানে। সেখানে পেসাররা ভালো করেছিল, আমাদের এখানেও ভালো করার সামর্থ্য আছে। আমি নিশ্চিত, ওখানে যে কোনো দলের পেস বোলাররা যদি ভালো করে তাহলে ওখানে ভালো করার সুযোগ বেশি থাকবে। ওখানে সহায়তা ততটা থাকবে না, স্পিনারদেরও সহায়তা ততটা থাকবে না।  আমরা যারা পেস বোলার আছি, আমরা যদি শুরুটা ভালো করি…ভালো বোলিং করি তাহলে আমাদের জয়ের সুযোগ বেশি থাকবে। আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বোলাররা ভালো করিনি বলে আমরা দলগত পরফরম্যান্স সেভাবে ভালো করতে পারিনি। অবশ্যই আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিলাম কিন্তু “ইন অ্যান্ড আউট” আমরা চার ম্যাচে পেস বোলিং ভালো করিনি ইংল্যান্ডে। ওটা আমাদের মাথায় আছে।  আমরা পেস বোলিং ইউনিট সম্মিলিতভাবে কতোটা ভালো করতে পারি।  নির্দিষ্ট করে একজনকে না বলে পুরো পেস ইউনিটকে ভালো করতে হবে।

    শক্তি যখন অলরাউন্ডার

    আমার মনে হয় মিরাজই আমাদের একমাত্র স্পিনার যে ওপরে ব্যাটিং করতে পারে। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো যারা সাত বা আটে ব্যাটিং করে বা অলরাউন্ডার , তারা বোলার কাম ব্যাটসম্যান, তবে সাকিব ছাড়া। সে যদি ব্যাটসম্যান কাম বোলার হয়, তাহলে দলের জন্য সমস্যা হয়ে যায়। কারণ যারা আট নয় বা দশের দিকে ব্যাটিংয়ে নামে তাদের কাছ থেকে বোলিংটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন সাইফুদ্দিন, ও যদি ব্যাটিং কিছুই না পারে, তারপরও সমস্যা নেই। ওর কাছ থেকে আমরা বোলিং আশা করি। মিরাজ ভালো করছে।

    নাঈম (আয়ারল্যান্ড সিরিজে দলে আছেন) ওভার-আর্ম বোলার, ও বাউন্স পেতে পারে, ওই চিন্তা করেই ওকে নেয়া। মোসাদ্দেক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রু দিয়েছিলো। এ সব কিছু চিন্তা করেই আসলে ওদেরকে দলে রাখা। এ ছাড়া মোসাদ্দেক এখন পারফর্মও করছে। ঢাকা লিগে ভালো খেলেছে। মাঝামাঝি যারা আছে, মিঠুন ও রিয়াদ আছে, ওদের ব্যাকআপ লাগলে মোসাদ্দেকই আছে, যে ওখানে ভালো পারফর্ম করতে পারে।