বিশ্বকাপে নিজের জায়গা নিয়েই শঙ্কিত ছিলেন ফিঞ্চ
বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দলে নিজের জায়গা নিয়ে ‘গভীর শঙ্কায়’ ছিলেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। নিজের ফর্মের কারণে অধিনায়কত্বের আত্মবিশ্বাসেও চিড় ধরেছিল তার বলে জানিয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ৫ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে আসার পর টিম পেইনকে সরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল ফিঞ্চকে। সে সফরে একটি সেঞ্চুরি করেছিলেন, তবে এরপর টানা ৯ ইনিংসে ফিফটিশূন্য ছিলেন তিনি, সর্বোচ্চ ছিল ৪১ রান।
বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দরজায়, ফিঞ্চের মাথায় তখন খেলছে অস্ট্রেলিয়ার আগের অধিনায়কদের কথা, “বিশ্বকাপ আসছে, কিন্তু অধিনায়ক হয়েও সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কিছু করতে পারছিলাম না বলে ব্যাপক দুশ্চিন্তা ছিল আমার। যখন আমি আগের অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রিকি পন্টিং, স্টিভ ওয়াহ, মার্ক টেইলর, অ্যালান বোর্ডারদের কথা ভাবছিলাম, সবাই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, সবই করছিলাম, তবে সাফল্য পাচ্ছিলাম না। হচ্ছিল না কোনোমতেই। হতাশ হয়ে পড়ছিলাম।”
দলের সবাই তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলেন, তবে তার মাথায় শুধু ঘুরছিল বিশ্বকাপ, “সবাই দারুণ সমর্থন দিচ্ছিল। তবে মনের মধ্যে খেলছিল, ‘বিশ্বকাপ দূরে নয়, অধিনায়ক হয়েও আমি স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ে যেতে পারি। এরপর যেটা হয়, আপনি তখন নিজেকে অযাচিত কিছু চাপ দেবেন, আদতে যেসবের ওপর আপনার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। নিজের কাজটা ঠিকঠাক করলে আপনাআপনিই সব হয়ে যাবে।”
ভারতের বিপক্ষে দেশের মাটিতে তিন ইনিংসে ২৬ রান। এরপর ফিরতি সফরের আগে ভাবলেন, খেলবেন আক্রমণাত্মক খেলা। হায়দরাবাদে নিজের শততম ম্যাচে খেলেন গোল্ডেন ডাক, ফিঞ্চ আবার ভাবতে শুরু করলেন। অনুশীলন, মানসিক প্রস্তুতি, ফর্মে থাকা অবস্থার সঙ্গে তখনকার পার্থক্য। তিনি বলছেন, “সত্যি বলতে কি, এ দুইয়ের মাঝে আসলে তেমন বড় পার্থক্য নেই। এটা আমার মনের মধ্যেই ছিল শুধু। আমি নেতিবাচক চিন্তা করছিলাম।”
নিজের ব্যাটিংয়ের প্রভাব পড়ছিল তার অধিনায়কত্বের ওপরও, “ছেলেদের সঙ্গে গেমপ্ল্যান নিয়ে, কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে সেসব নিয়ে কথা বলা অধিনায়ক হিসেবে আপনার দায়িত্ব। তাদেরকে উন্নতি করার ব্যাপারে বলতে হবে, তবে আমি নিজেই আমার কাজ ঠিকঠাক করছিলাম না। আমার মনে হচ্ছিল, তাদের সমালোচনা করার মতো অবস্থানে নেই আমি, নিজে যখন কিছু করছি না। ব্যাপারটা খুবই কঠিন ছিল, সেটা কিভাবে একপাশে সরিয়ে রাখা যায় সেটা শিখতে হয়েছে।”
এরপর নাগপুরে ৩৭ রান করেছিলেন, তবে খরাটা অবশেষে কেটেছিল রাঁচিতে, সেদিন করেছিলেন ৯৩ রান। উসমান খাওয়াজার সঙ্গে গড়েছিলেন দারুণ এক জুটি। পরের ম্যাচে মোহালিতে আবার ডাক মারলেন তিনি, আবার মনের মধ্যে ফিরে এলো সংশয়। দিল্লীতে এরপর করেছিলেন ২৭। তবে অস্ট্রেলিয়া ২-০তে পিছিয়ে পড়েও সিরিজ জিতলো, ফিঞ্চ আবার ফর্মে ফিরলেন শারজায় পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে। সে সিরিজে ১১২.৭৫ গড়ে ফিঞ্চ করেছেন ৪৫১ রান, দুই সেঞ্চুরিসহ। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জিতেছিল ৫-০ ব্যবধানে।
বিশ্বকাপে তাকে অধিনায়ক করেই দল ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরছেন সাবেক অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, সাবেক সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান ফিঞ্চ, সঙ্গে দীর্ঘদিন পর তাদের ফিরে পেয়ে রোমাঞ্চিতও তিনি।
১ জুন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্রিস্টলে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। এর আগে ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে তারা। আর দেশ ছাড়ার আগে নিউজিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে তিনটি একদিনের ম্যাচ আছে তাদের।