নেট সেশন- বিশ্বকাপের পাইলট এপিসোড
বিশ্বকাপ, প্রথম ম্যাচ
ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা
কবে, কখন
৩০ মে, ২০১৯
বাংলাদেশ সময় ১৫৩০ (বিকাল ৩.৩০)
এবং…. শুরু হয়ে যাচ্ছে বিশ্বকাপ।
৪৮ পর্বের সিরিজের পাইলট-এপিসোড।
যে সিরিজে আগে থেকেই নায়কের তকমা ইংল্যান্ডের গায়ে। শুনতে অদ্ভুত লাগছে না হয়তো গত চার বছরে ‘ওয়ানডে ইংল্যান্ডের বোধগম্য নয়’ থেকে ‘ওয়ানডেকে ইংল্যান্ড অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে’-এর মাঝের সময়ের সাক্ষী আপনি ছিলেন বলেই। তবে ১৯৯২ সালে ফাইনালের পর থেকে ইংল্যান্ড কোনো নক-আউট পর্বের ম্যাচ জেতেনি আর, বিশ্বকাপের সঙ্গে তাদের দূরত্বটা বেড়েছে শুধুই। সেটা কমিয়ে আনার সেরা সুযোগ হয়তো তাদের এবার, অন্তত তাদেরকে ঘিরে প্রত্যাশাটা তেমনই। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নিজেদের মাটিতে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার ২০ বছর পর আবার স্বাগতিক তারা, এ ২০ বছরে চারপাশের অনেক কিছুর মতো বদলে গেছে তাদের খেলার ধরনও। কতোখানি বদলে গেছে, সেটার বিশ্বমঞ্চে প্রদর্শনীর ভূমিকাটা হতে পারে আজ।
ইংল্যান্ডের গল্পটা যখন শুধুই দূরে যাওয়ার (বিশ্বকাপ থেকে, অন্তত ছিল এতদিন), দক্ষিণ আফ্রিকার গল্পটা সেই কাছে এসেও না পাওয়ার। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো করে গল্পের জোগান কেউ দিতে পারে না, সে গল্পে মিশে থাকে শুধুই বাদ পড়ার বিষাদ-কাব্য। বৃষ্টি-বেদনা, ব্রায়ান লারা, ভুল হিসাব কিংবা রহসম্যয় দৌড়ে অদ্ভুতুড়ে টাই, অথবা সামনের কারও সুপারম্যান হয়ে ওঠা- বিশ্বকাপ দক্ষিণ আফ্রিকাকে কম গল্প বলেনি। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাও কম গল্প শোনায়নি। সাত মৌসুমে অনেক পর্ব গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে থেকেছে সেই ট্র্যাজিক হিরোই, যার পাওয়া হয় না কিছুই।
চার বছর পর আরেকটি বিশ্বকাপের শুরু হচ্ছে এই দুই দলকে দিয়ে, ফিরে আসছে তাই চার বছর আগের গল্পও। বাংলাদেশের বিপক্ষে অ্যাডিলেডে সেই হারের পর থেকে যেন ঘুম ভেঙেছে ইংল্যান্ডের, ওয়ানডেতে গড়পড়তা দল থেকে তারা এবার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে অবশ্য খুব বেশি পরিবর্তন নেই, মোটা দাগে পার্থক্য বলতে এবার শুধু তাদের দলে নেই এবি ডি ভিলিয়ার্স। হয়তো এমন আবহ তৈরি হয়নি, তাদের সেই না-বলতে-চাওয়া ট্যাগটা ঘুচবে এবার। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সেটা করতে পারলে বুক থেকে পাথর নামবে হয়তো অনেকেরই।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর হয়েছে দুটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট। ২০১৬ ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে ফাইনালে গিয়ে হেরেছিল ইংল্যান্ড, ২০১৭ সালে সেমিফাইনালেও তাই। দক্ষিণ আফ্রিকা দুবারই থেমেছিল শেষ চারের আগেই। এ বিশ্বকাপে পেস, রিস্টস্পিন, দ্রুত রান তোলার সামর্থ্য- পার্থক্য গড়ে দিতে পারে নাকি এসবই। দুই দলেরই রসদ আছে সেসবে ভর করে গল্প বানানোর, রোমাঞ্চকর এক সিরিজের শুরুতেই আপনার মনযোগের পুরোটা নিয়ে নিতে পারে তাই এই ম্যাচটা।
প্রস্তুত তো আপনি?
রঙ্গমঞ্চ
দ্য ওভাল, লন্ডন
হোম অফ ক্রিকেট লর্ডস, তবে ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল এ ভেন্যুতে, ১৯৯৯ সালে লর্ডসে হলেও এবার এখানেই শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ। গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখানে হয়েছে ১১টি ওয়ানডে, ওভারপ্রতি রান উঠেছে ছয়েরও বেশি হারে। অনেকটা নিশ্চিতভাবেই তাই হওয়ার কথা ব্যাটিং উইকেট। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই। অবশ্য জায়গাটা লন্ডন বলে এর আবহাওয়া নিয়ে পূর্বাভাসের ওপর খুব বেশি নির্ভর না করাই নাকি ভাল।
লড়াইয়ের মাঝে দ্বন্দ্বযুদ্ধ
আদিল রশিদ বনাম ইমরান তাহির
দুই দলের পেস আক্রমণ বেশ দৃঢ়, তবে এই দুজন লেগস্পিনারের কে কেমন করেন, সেটা নজর কাড়তে পারে আলাদা করে।
যাদের ওপর চোখ
জফরা আর্চার
তার উত্থানের গল্পটা দারুণ। প্রাথমিক স্কোয়াডে না থাকলেও চূড়ান্ত স্কোয়াডে ডেভিড উইলিকে সরিয়ে জায়গা পেয়েছেন ঠিকই। ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণে তিনি যোগ করেছেন ‘বাড়তি পেস’। এখন পর্যন্ত তিন ওয়ানডেতে নিয়েছেন তিন উইকেট, তাকে নিয়ে মাতামাতিটা কেন, সেটা দেখিয়ে দেওয়ার প্রথম সুযোগটা আসছে আর্চারের সামনে।
কাগিসো রাবাদা
এ তরুণের অভিষেক গত বিশ্বকাপের পর। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণের অন্যতম বড় ভরসা তিনি। আইপিএল থেকে চোট নিয়ে ফিরেছিলেন, ছিল সংশয়। সেটা কেটে গেছে আপাতত। পেসের সঙ্গে লাইন-লেংথে নিখুঁত বোলিং রাবাদাকে এগিয়ে রাখে সবসময়ই।
সম্ভাব্য একাদশ
অঘটন না ঘটোলে ইংল্যান্ডের একাদশের ক্ষেত্রে প্রশ্নটা একটা জায়গা ঘিরেই উঠতে পারে। প্রস্তুতি ম্যাচে উঠে গিয়েছিলেন মার্ক উড, উইকেট পেয়েছিলেন লিয়াম প্লাঙ্কেট। উড নাকি অভিজ্ঞ প্লাঙ্কেট, ইংল্যান্ডের ‘ফাইনাল কল’ হতে পারে সেটিই। চোটের কারণে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচে না থাকলেও পরের ম্যাচে ছিলেন মরগান।
ইংল্যান্ড- জ্যাসন রয়, জনি বেইরস্টো, জো রুট, অইন মরগান (অধিনায়ক), জস বাটলার, বেন স্টোকস, মইন আলি, আদিল রশিদ, ক্রিস ওকস, জফরা আর্চার, মার্ক উড/লিয়াম প্লাঙ্কেট
চোটের কারণে ছিটকে গেছেন ডেল স্টেইন। তার শূন্যস্থান পূরণ করার দৌড়ে আছেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ও এনরিখ নরকিয়ার চোটের কারণে শেষ মুহুর্তে দলে ডাক পাওয়া ক্রিস মরিস।
দক্ষিণ আফ্রিকা- হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি কক, ফাফ ডু প্লেসি (অধিনায়ক), র্যাসি ফন ডার ডুসেন, ডেভিড মিলার, জেপি ডুমিনি, অ্যান্ডাইল ফেহলুকওয়ায়ো, ক্রিস মরিস, কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, ইমরান তাহির
সংখ্যার খেলা
- ৩- বিশ্বকাপে ছয়বার মুখোমুখি হয়ে তিনটি করে জয়ে পেয়েছে দুই দল।
- ৩৪০- সম্পন্ন হওয়া নিজেদের শেষ ৪ ওয়ানডেতে ৩৪০-এর ওপর করে রান করেছে ইংল্যান্ড
- ৩- মুখোমুখি হওয়া শেষ ৫ ম্যাচের তিনটিই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা
তারা বলেন
দেশের মাটিতে বিশ্বকাপটাকে বিশাল সুযোগ। আমরা বিশ্বের এক নম্বর। আমাদের প্রস্তুতি দারুণ। দক্ষিণ আফ্রিকা অনেক শক্তিশালি। গত দুই বছরে তারা বদলে গেছে। কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। আমরা কোনোকিছুকেই ‘প্রাপ্য’ ধরে নিচ্ছি না।
অইন মরগান, ইংল্যান্ড অধিনায়ক
তিন-চারটি দল আছে, যাদের স্কোয়াড আমাদের চেয়ে ভাল। তারা ফেভারিট। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা আমরা উপভোগ করতে চাই। আশা করি ভাল ম্যাচ হবে। আশা করি… প্রথম ম্যাচেই আপসেট হবে!
ফাফ ডু প্লেসি, দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক