'সুপারম্যান' স্টোকসে ইংল্যান্ডের উড়ন্ত শুরু
ইংল্যান্ড ৫০ ওভারে ৩১১/৮ (স্টোকস ৮৯, মরগান ৫৭, রয় ৫৪, রুট ৫১; এনগিদি ৩/৬৬, তাহির ২/৬১, রাবাদা ২/৬৬)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৯.৫ ওভারে ২০৭ অলআউট (ডি কক ৬৮, ফন ডার ডুসেন ৫০; আর্চার ৩/২৭, স্টোকস ২/১২, প্লাঙ্কেট ২/৩৭)
ফলঃ ইংল্যান্ড ১০৪ রানে জয়ী
সুপারম্যান বেন স্টোকস। আয়রনম্যান জফরা আর্চার। দুর্দান্ত আকাশী নীল ইংল্যান্ড। এই বিশ্বকাপে কেন তাদের ফেবারিট বলা হচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানে উড়িয়ে প্রথম ম্যাচেই সেই বার্তা দিল ইংলিশরা।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ বলে কথা, মেঘলা ওভালে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শুরুটা অবশ্য ভালো হলো না স্বাগতিকদের, টসে হাসলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। অইন মরগানের কপালের ভাঁজটা চওড়া হতে সময় নিল না।। সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথম ওভারটা তাহিরকে দিলেন ডু প্লেসি। দ্বিতীয় বলেই ওভালকে হতভম্ব করে দিলেন তাহির, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন জনি বেইরস্টো। বিশ্বকাপে এই প্রথম পেসার ছাড়া কেউ প্রথম ওভার করলেন, আবার সাফল্যও নগদে। ‘ইটস কামিং হোম’ একটু স্তিমিতই হয়ে পড়ছিল?
জ্যাসন রয় ও জো রুট ওভালকে আবার চাঙা করতে সময় নিলেন না। পাওয়ারপ্লেতে এলো ৬০ রান, ইংল্যান্ড আবার হালে পানি পেল। দুজনের জুটিতে ১০০ও হলো, দুজনের ফিফটিও হয়ে গেল দ্রুত। কিন্তু গিটারের স্ট্রিংয়ে হঠাৎ ছন্দপতন, ফেহলুকোয়ায়োর বনলে চার মারার পরেই উড়িয়ে ম্রতে গয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে এলেন রয়। তিন বল পর আরও বড় আঘাত, এবার রুট পয়েন্ট রাবাদার বলে দিলেন সহজ ক্যাচ। হঠাৎ করে জোড়া ধাক্কায় বেসামাল ইংল্যান্ড।
বেন স্টোকস ও অইন মরগান ক্রিজে। তবে সুরটা মিলিয়ে যেতে দিলেন না তারা, আবার ওভালে বাজতে শুরু করল ‘হেই জুড’। দুজনের জুটিতে এলো ১০৬ রান, এর মধ্যে ৩০ ওভার শেষে ১৭০ রান তুলে ফেলেছে ইংল্যান্ড। ৩৪০-৫০ মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব, তাদের জন্য যা এখন রুটিনই হয়ে গেছে।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরল আর এক দফা। তাহিরের বলে মার্করামের দারুণ এক ক্যাচে ফিরলেন মরগান, ৫৭ রানে। তবে ওভালে চিৎকার খুব একটা কমল না, ক্রিজে যে বাটলার এসে গেছেন! তখনও ১৪ ওভারের মতো বাকি, বাটলার-স্টোকস ক্রিজে। ইংল্যান্ডের ৩৫০ এর নিচে চিন্তা করার কারণ ছিল না।
কিন্তু বাটলার পারলেন না। এনগিদির বল স্টাম্পে টেনে নিয়ে এলেন মাত্র ১৮ রানে। এক ওভার পর এনগিদি ফেরালেন মঈন আলীকে, এবার ডু প্লেসির আরেকটি দারুণ ক্যাচে। ২৬০ রানে ৬ উইকেট নেই ইংল্যান্ডের।
স্টোকস অবশ্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন, ৪৫ বলে ফিফটি হয়েছিল। সেঞ্চুরির দিকেও এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে টেলে ঠিক সঙ্গটা পাচ্ছিলেন না, ওকসও পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেননি। শেষ দুই ওভারেও অবশ্য সেঞ্চুরির আশা ছিল, কিন্তু তা আর হলো না। ৭৯ বলে ৮৯ রান করে ক্যাচ দিলেন এনগিদির বলে। আর্চার আর প্লাঙ্কেট ইংল্যান্ডকে নিয়ে ৩১১ রান পর্যন্ত।
দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো হলো না। উইকেট পড়েনি, কিন্তু আর্চার শুরুতেই বাউন্সারে টালমাটাল করে দিয়েছেন আমলাকে। ধাক্কাটা সামলাতে না পেরে মাঠই ছাড়তে হলো আমলাকে। আর আর্চার এরপর দেখালেন, কেন বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড এত করে চেয়েছিল তাঁকে। প্রথমে মার্করামকে ক্যাচ বানালেন উইকেটের পেছনে, এরপর তুলে নিলেন ডু প্লেসিকে।
ডি কক আর ফন ডার ডুসেন অবশ্য খেলছিলেন ভালোই, পথেও রেখেছিলেন আফ্রিকাকে। কিন্তু ভালো খেলতে খেলতেই হঠাৎ আত্মহত্যার শখ হলো ডি ককের। বাজে এক শটে ৬৮ রানে উইকেট দিয়ে এলেন প্লাঙ্কেটের বলে। খানিক বাদে নেই ডুমিনিও, আর স্টোকস-মরগানের অসাধারণ যুগলবন্দিতে রান আউট হয়ে গেলেন প্রিটোরিয়াস। ১৪৪ রানের ভেতর ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলল আফ্রিকা।
ফন ডার ডুসেন অবশ্য ভালোই খেলছিলেন, ফেহলুকায়োকে নিয়ে ম্যাচে রেখেছিলেন প্রোটিয়াদের। কিন্তু আরও একবার আর্চারের আঘাত, এবার ঠিক ফিফটি করার পর ফেরালেন ডুসেনকে। ম্যাচের সেরা মুহূর্তটির জন্ম এরপর, যা অনেকদিন মনে রাখবে বিশ্বকাপ। আদিল রশিদের বলটা ফেহলুকায়ো যেভাবে মেরেছিলেন, ছয় ছাড়া অন্য কিছু মনে হচ্ছিল না। স্টোকস উল্টোদিকের দৌড়ে সুপারম্যানের মতো উড়ে এক হাতে বলটা ধরলেন। প্রথম দিনেই কি দেখে বিশ্বকাপ দেখে ফেলল এবারের সেরা ক্যাচ? সর্বকালের সেরা ক্যাচেরও তো ছোট্ট তালিকায় থাকবেন স্টোকস!
ব্যাট আর ফিল্ডিংয়ের পর স্টোকসের এরপর বল হাতে কিছু করার পালা। তার আগে আমলা আবার ব্যাট করতে নেমে ফিরেছেন প্লাঙ্কেটের বলে, আর স্টোকস রাবাদা ও তাহিরকে আউট করে মুড়ে দিয়েছেন লেজ।
অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ, দারুণ কিছু ফিল্ডিং, মনে রাখার মতো শট- বিশ্বকাপের প্রথম দিনটা একেবারে মন্দ হলো না!