নেট সেশন: নির্ভার নিউজিল্যান্ডের সামনে শ্রীহীন শ্রীলংকা
বিশ্বকাপ, তৃতীয় ম্যাচ
নিউজিল্যান্ড- শ্রীলংকা
কবে কখন
১ জুন, শনিবার, কার্ডিফ। বাংলাদেশ সময় ৩.৩০
ইতিহাস বলে, বিশ্বকাপের মানদন্ডে শ্রীলংকা এগিয়ে। শোকেসে একটা ট্রফি আছে, আরও দুবার পারেনি ফাইনালে উঠেও। সেখানে গত বিশ্বকাপে ফাইনালে ওঠাটাই নিউজিল্যান্ডের জন্য সবচেয়ে বড় সাফল্য। সবচেয়ে বড় মঞ্চে নিজেদের মধ্যে দেখায়ও নিউজিল্যান্ড শ্রীলংকার চেয়ে পিছিয়েই থাকবে। বিশ্বকাপে দুই দলের দেখায় নিউজিল্যান্ডের জয় আছে চারটিতে, আর শ্রীলংকার ছয়টিতে।
কিন্তু তারপরও কাল নিউজিল্যান্ড জয় না পেলে সেটা অঘটনই হবে। যারা ক্রিকেটের খবর মোটামুটি রাখেন তাদের কাছে সেটি অজানা নয়। খুব বেশিদিন আগে নয়, এই বছরেই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। একটি পরিত্যক্ত হওয়ার পর চারটিতেই হেরেছিল শ্রীলংকা, এক থিসারা পেরেরাই যা একটু বুক চিতিয়ে পড়েছিলেন। শ্রীলংকার ওয়ানডেতে অনেক দিন ধরেই পথ হারিয়ে খুঁজছে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর থেকে ৫৫ ম্যাচের হেরেছে ৪১টিতেই।
বিশ্বকাপে এসেছে আরও বেশি এলোমেলো অবস্থায়। দিমুথ করুনারত্নেকে হঠাৎ করে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কের দায়িত্ব, অথচ গত বিশ্বকাপের পর থেকে তিনি আর কোনো ওয়ানডেই খেলেননি। জীভান মেন্ডিস, লাথুরু থিরিমান্নে, মিলিন্দা সিরিবর্ধনা, জেফরি ভ্যান্ডারসেদের দলে ডাকা হয়েছে আবার। অথচ ২০১৭ সালের পর থেকে এদের কেউ ওয়ানডেই খেলেননি। আর মেন্ডিস সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন অধিনায়কের মতোই চার বছর আগে। এতো অনিয়মিত খেলোয়াড় নিয়ে আর কেউ আসেনি বিশ্বকাপে। প্রস্তুতিটাও খুব একটা ভালো হয়নি, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরেছে দুই ম্যাচেই। ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং অনুশীলনও হয়নি তেমন, সেরকম ফর্মেও নেই কেউ। করুনারত্নের কপালে ভাঁজ শুধু বড়ই হচ্ছে।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের অন্তত ফর্ম নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে হারলেও ভারতকে হারিয়েছে তার আগে। কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলরের ব্যাট কথা বলছে। আর সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, টিম সাউদিদের বোলিং আক্রমণ তো আছেই। বরং কাকে ছেড়ে কাকে খেলাবে, সেটাই প্রশ্ন হতে পারে কিউইদের জন্য।
রঙ্গমঞ্চ
সোফিয়া গার্ডেন, কার্ডিফ
কার্ডিফে নিউজিল্যান্ড বললেই দুই বছর আগে বাংলাদেশের সেই ম্যাচটির কথা মনে পড়বে আপনার। নিউজিল্যান্ডের জন্য এই মাঠে সুখস্মৃতি নেই খুব একটা, সর্বশেষ তিনটি ম্যাচই হেরেছে এখানে। এমনিতে কার্ডিফ উইকেট একটু স্লথ থাকলেও গত কিছুদিনে এখানে রান এসেছে অনেক। গত বছর ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেই এখানে ৬৪৬ রান হয়েছে। কাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কিছুটা মেঘ থাকলেও বৃষ্টি বাগড়া দেবে না বলেই জানা যাচ্ছে। সব মিলে বোলারদের জন্য দীর্ঘ একটা দিন অপেক্ষা করতেই পারে।
লড়াইয়ের মধ্যে লড়াই
মালিঙ্গা-গাপটিল
মার্টিন গাপটিল প্রস্তুতি ম্যাচে খুব একটা রান পাননি। তবে গত ফেব্রুয়ারিতেই বাংলাদেশের বিপক্ষে দুইটি সেঞ্চুরি করেছিলেন, শুরুতে তাঁর ঝড় ভালো একটা শুরু এনে দিতে পারে নিউজিল্যান্ডকে। আর সেটি থামানোর জন্য লাসিথ মালিঙ্গার দিকেই তাকিয়ে থাকবে শ্রীলংকা।
যাদের ওপর চোখ
রস টেলর
গত চার বছর দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান তাঁর, ৩৫ পেরিয়ে গেলেও উইলিয়ামসনের সঙ্গে কিউই মিডল অর্ডারের বড় ভরসা তিনি। কালও তাঁর কাছ থেকে দারুণ কিছু চাইবে দল।
থিসারা পেরেরা
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজেই অবিশ্বাস্য একটা সেঞ্চুরি করেছিলেন, যদিও শেষ পর্যন্ত জেতাতে পারেননি দলকে। ব্যাটে-বলে এই খর্বশক্তির শ্রীলংকার বড় ভরসাই।
সম্ভাব্য দল
নিউজিল্যান্ড প্রস্তুতি ম্যাচে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলিয়েছে সবাইকেই। শুধু চোটের জন্য টম ল্যাথাম ছিলেন না, এখন তিনি অবশ্য ফিট। তাঁর জায়গায় সুযোগ পেয়ে সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা টম ব্লান্ডেল, শেষ পর্যন্ত থাকবেন কি না সেটাই প্রশ্ন। একাদশের বাইরে থাকতে পারেন হেনরি, সোধি, মানরোও।
একাদশঃ মার্টিন গাপটিল, হেনরি নিকোলস, কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), রস টেলর, টম ল্যাথাম, জিমি নিশম, কলিন ডি গ্র্যান্ডোম, মিচেল স্যান্টনার, লকি ফার্গুসন, টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট
শ্রীলংকাও রদবদলের পর এখনো নিজেদের একাদশ গোছাতে পারেনি। কিন্তু বাকি কারা খেলবেন সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে
একাদশঃ দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), লাথিরু থিরিমান্নে, কুশল মেন্ডিস, কুশল পেরেরা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, থিসারা পেরেরা, জিভান মেন্ডিস, ইসিরু উদানা, লাসিথ মালিঙ্গা, সুরাঙ্গা লাকমল।
সংখ্যার খেলা
- ২০১৫ সালের পর থেকে বিশ্বকাপের দশ দলের মধ্যে সবচেয়ে কম জয় শ্রীলংকার (৮৫ ম্যাচে ২৪টি)
- বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী দল শ্রীলংকা (৩০ বছর ৪৩ দিন)
- কার্ডিফে সর্বশেষ দেখায় ২০১৩ সালে শ্রীলংকাকে ১ উইকেটে হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড
তারা যা বলেন...
গ্যারি স্টিড, নিউজিল্যান্ড কোচ
প্রস্তুতি ম্যাচে আমাদের অনুশীলন খুব ভালো হয়েছে। ভালো খেলেছি, আবার চাপেও পড়েছি। আত্মবিশ্বাসের পারদটা অনেক উঁচুতে নিয়েই বিশ্বকাপে যাচ্ছি
দিমুথ করুনারত্নে, শ্রীলংকা অধিনায়ক
দীর্ঘ বিরতির পর ওয়ানডে খেলতে নামা সহজ না, আমিও যেমন অনেক দিন পর খেলতে নামছি। নিজেদের চেনাটাও খুব জরুরি। তবে আশা করি আমরা সুযোগটা কাজে লাগাতে পারব।