• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    নেট সেশন : বিশ্বকাপের প্রান্তরে আবার দেখা অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তানের

    নেট সেশন : বিশ্বকাপের প্রান্তরে আবার দেখা অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তানের    

    বিশ্বকাপ, চতুর্থ ম্যাচ
    অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান

    কবে, কখন
    ১ জুন, ২০১৯
    বাংলাদেশ সময় ১৮৩০ (সন্ধ্যা ৬.৩০)


    হয়তো অফিস থেকে আপনাকে একটা কনফারেন্সে পাঠালো, একটা প্রতিযোগিতাও আছে। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়তো এখন এমন একজন, যিনি আপনার মতো একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। সে সূত্রে তিনি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র। তবে তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে, আপনি তখনও কিন্ডারগার্টেন পার হননি। অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ-ইতিহাস কিছুটা তেমনই। আফগানিস্তান যখন বিশ্বকাপে খেলার লক্ষ্য নিয়ে আইসিসির ডিভিশন ফাইভ খেলছে, অস্ট্রেলিয়ার ততদিনে চারবার বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গেছে। 

    ব্রিস্টলে দুই দল যখন বিশ্বকাপে মুখোমুখি, তখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রের ব্যাপারটা এসে যায় তাই। এক দলের পাশে পাঁচ শিরোপা, আরেক দল খেলছেই দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। এবার একে অন্যের প্রতিপক্ষ তারা, গত বিশ্বকাপের পর থেকে দুই দল খেলেনি অবশ্য একে অপরের বিরুদ্ধে। তবে ইতিহাস এদিন সরে যাবে একপাশে, হাজির হবে মাঠের লড়াই। মোটা দাগে যদি বলতে চান, সে লড়াইটা মূলত পেস বনাম স্পিনের।  

     

     

    অস্ট্রেলিয়ার অনেক বড় শক্তি নিশ্চিতভাবেই তাদের পেস আক্রমণ। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ড, পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় বলে দেয়, এ বিশ্বকাপে পেসাররা রাখতে যাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অবশ্য ব্যাপারটা শুধুই পেসারদের বললে আসলে সব বলা হয় না, এ বিশ্বকাপে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপক্ষের উইকেট নেওয়া। সেই ব্যাপারটিতেই অস্ট্রেলিয়ার মূল অস্ত্র পেস হলে আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে সেটি স্পিন। 



    রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমানের সঙ্গে মোহাম্মদ নবির ত্রিমুখী স্পিন আক্রমণ দেখাতে পারে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে সেটা মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, ন্যাথান কোল্টার-নাইল বা জ্যাসন বেহরেনডর্ফের সঙ্গে (অথবা কেন রিচার্ডসন) মার্কাস স্টোইনিসের পেস আক্রমণের। এমন লড়াইয়ে আফগানিস্তানের সম্ভাবনা আসলে কতটুকু? 

     

     

    সংখ্যার মাপে সেটা বলা কঠিন একটু। তবে এখনকার অস্ট্রেলিয়া না হয়ে যদি ভারত সফরের আগের অস্ট্রেলিয়া হতো, তবে আফগানিস্তানের সম্ভাবনা বাড়ত নিশ্চিতভাবেই। টালমাটাল অস্ট্রেলিয়া ঠিক ট্র্যাকে ফিরে এলো তো ওই সিরিজেই, ২-০তে পিছিয়ে থেকেও সিরিজ জেতার পর। এরপর পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে তারা জানান দিল, বিশ্বকাপ আসছে, আসছে অস্ট্রেলিয়াও। প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বার্তাটা আরেকবার দিয়েছে তারা। 

     

    আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে আগুনে-পোড়ার ব্যাপারটা অবশ্য হয়ে গেছে আগেই। এ বিশ্বকাপে বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা দুটি দলের একটি তারা, এমনকি সে টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়নও। এরপর প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়েছে তারা। বাছাইপর্বের চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তানের সঙ্গে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার লড়াই তাই ব্রিস্টলের ম্যাচ। 

    জমবে? 

    রঙ্গমঞ্চ
    কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ব্রিস্টল 

    ৭৫১। সংখ্যাটা আপাতত সঙ্গী এ মাঠের। কদিন আগেই প্রস্তুতি ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড মিলে করেছিল সেটা। এর আগে ইংল্যান্ড-পাকিস্তানের ম্যাচও দেখেছিল বড় স্কোর (পাকিস্তান ৩৫৮/৯, ইংল্যান্ড ৩৫৯/৪)। তবে এ মৌসুমে কাউন্টির ঘরোয়া টুর্নামেন্ট রয়্যাল লন্ডন ওয়ানডে কাপের ৪ ম্যাচের এক ইনিংস ছিল শুধু ৩০০-পেরুনো। ছোট মাঠ বলে বড় স্কোরের সম্ভাবনাটা অবশ্য বেড়েই যায় এখানে। 

    আবহাওয়া থাকার কথা শুষ্ক, বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই। শুষ্ক কন্ডিশন সহায়তা করতে পারে স্পিনারদের, আফগানিস্তান সেক্ষেত্রে একটা ব্যাপারে থাকবে এগিয়েইই। 

    লড়াইয়ের মাঝে দ্বন্দ্বযুদ্ধ 

    মোহাম্মদ নবি বনাম গ্লেন ম্যাক্সওয়েল 

    অলরাউন্ডার হিসেবে রেকর্ড বলে, নবি এগিয়ে ম্যাক্সওয়েলের চেয়ে। নবির ব্যাটিং গড় ২৯ হলেও বোলিংয়ে উইকেট প্রায় ম্যাচসংখ্যার সমান ১১৮টি। ম্যাক্সওয়েলের উইকেটসংখ্যা সেখানে ম্যাচসংখ্যার অর্ধেক ৫০টি। তবে অস্ট্রেলিয়ার এই একাদশে স্পিনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হতে পারে ম্যাক্সওয়েলকে।


    যাদের ওপর চোখ

    স্টিভ স্মিথ
    এ বিশ্বকাপে হয়তো অধিনায়কত্ব করতেন তিনিই। তবে কেপটাউন-কেলেঙ্কারি বদলে দিয়েছে সব। স্মিথ বিশ্বকাপে খেলছেন অবশ্য ঠিকই। প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। কথাটা একটু অন্যরকম শোনালেও বলতে হয়, যেন দেখা গিয়েছিল সেই স্মিথকে, আশেপাশের কিছুই যাকে ছুঁয়ে যায় না যখন তিনি ব্যাটিং করেন। সেরকম মুডে তিনি যাতে না যেতে পারেন, আফগানিস্তান হয়তো চাইবে সেটাই। 

    রশিদ খান
    আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বর বোলার। গত বিশ্বকাপের পর থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট তার। অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও মুখোমুখি হয়নি তার। তবে আইপিএল, বিগ ব্যাশের মতো ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে অবশ্য তার দেখা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ানরা। রশিদ কতোখানি ‘খেল’ দেখাতে পারেন, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। 

    সম্ভাব্য একাদশ

    প্রশ্ন ছিল ডেভিড ওয়ার্নারকে ঘিরে। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিত করেছে, তাদের প্রথম ম্যাচে খেলবেন তিনি। অ্যারন ফিঞ্চের সঙ্গে ওপেনিং-ও করার কথা তারই। সেক্ষেত্রে উসমান খাওয়াজা বা শন মার্শের একজনকে বেছে নিবে অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে খাওয়াজার ৮৯ এগিয়ে রাখতে পারে তাকেই।

    অস্ট্রেলিয়া- অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাওয়াজা/শন মার্শ, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টোইনিস, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটকিপার), প্যাট কামিন্স, ন্যাথান কোল্টার-নাইল, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জ্যাম্পা

    আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে শঙ্কা ছিল হজরতউল্লাহ জাজাইকে নিয়ে, প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেছেন তিনি। রশিদ-মুজিবের সঙ্গে নবি, আফগানিস্তান খেলাতে পারে তিনজনকেই।

    আফগানিস্তান- মোহাম্মদ শাহজাদ (উইকেটকিপার), হজরতউল্লাহ জাজাই, রহমত শাহ, আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবি, গুলবাদিন নাইব (অধিনায়ক), নাজিবুল্লাহ জাদরান, রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমান, হামিদ হাসান, দাওলাত জাদরান


    সংখ্যার খেলা 

    • ২- দুই দল খেলছে ২টি ওয়ানডে, এর মাঝে একটি ছিল গত বিশ্বকাপে
    • ২৭৫- অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৫ বিশ্বকাপে হারা ম্যাচের ব্যবধানটি আফগানিস্তানের রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় 
    • ১২৫- গত বিশ্বকাপের পর থেকে রশিদ খানের উইকেটসংখ্যা 

    তারা বলেন

    এক মুহুর্তের জন্যও যদি আপনার মনযোগ অন্য কিছুতে যায়, তারা আঘাত করে বসবে। তাদেরকে হারাতে আপনার সেরাটা দিতে হবে। গত চার বছরে তাদের উত্থানটা বিশাল। পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচেও তারা দুর্দান্তভাবে জিতেছে। তারা দারুণ বোলিং করেছে, দারুণ ব্যাটিং করেছে।

    অ্যারন ফিঞ্চ, অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক

    ২০১৫ বিশ্বকাপে যে দল খেলেছিল, বিশেষ করে আফগানিস্তান, আমরা এখন আলাদা। আশা করি একটা ভাল ম্যাচ হবে। 

    গুলবাদিন নাইব, আফগানিস্তান অধিনায়ক