• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    "সামনে দীর্ঘ পথ... তবে অনেক দূরে তাকানোর প্রয়োজন নেই"

    "সামনে দীর্ঘ পথ... তবে অনেক দূরে তাকানোর প্রয়োজন নেই"    

    ব্যাপারটা পরীক্ষার খাতার মতো। সবসময় বলা হয়, যেটা সবচেয়ে ভাল পারা যাবে, সেটা আগে উত্তর করতে। তাহলে নাকি আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তবে প্রথম প্রশ্নের মতো পরের প্রশ্নগুলিও ভূমিকা রাখে পরীক্ষার ফলের ওপর। যদি সমান নম্বর থাকে, তাহলে আদতে গুরুত্ব সবগুলিরই সমান। প্রথমটিতে এ প্লাস নম্বর পেয়ে পরেরগুলিতে নাটকীয়ভাবে খারাপ উত্তর নিশ্চয়ই পরীক্ষার সামষ্টিক ফলের জন্য মোটেও ভাল কিছু নয়। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচটা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতে বাংলাদশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা যা বললেন, তার অর্থ মোটামুটি ওই পরীক্ষার প্রশ্নোত্তরের মতোই। শুধু এক ম্যাচ জিতে কিছুই হবে না, তবে আত্মবিশ্বাসটা একটু বেশি থাকবে এ ম্যাচ জয়ের পর। এ ম্যাচ জিতে অনেকেই রোমাঞ্চিত হলেও তারা ঠিক তা হতে পারছেন না বলে মত তার। বাংলাদেশ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে চায় জানিয়ে তিনি বলেছেন, আপাতত খুব বেশি দূরে তাকাতে চান না তিনি, তার ভাবনা নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পরের ম্যাচটি নিয়েই। 

    বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ইতিহাসে শুরুর ম্যাচের ফলের সঙ্গে পুরো টুর্নামেন্টের সাফল্য ঠিক সরলরৈখিক গ্রাফ নয় অবশ্য। চাইলেই তেমন সমীকরণও বের করা যাবে না। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের, তবে সেবার জয় ছিল স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। প্রথমবার বিশ্বকাপে এসে সেটা ছিল দারুণ অর্জনই। ২০০৩ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে কানাডার কাছে হেরে বসা বাংলাদেশ ফিরেছিল একদম শূন্য হাতেই। ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয় বাংলাদেশকে সুপার এইটের দিকে এগিয়ে দিয়েছিল, সেটা নিশ্চিত ভাবেই ছিল আপসেট। সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতলেও বাংলাদেশ পায়নি আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ‘প্রত্যাশিত’ জয়। 

    ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের সঙ্গে হার দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ, সেবারের বিশ্বকাপটা গেছে অদ্ভুত। ৫৮ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ৭৮ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে অল-আউট হওয়া বাংলাদেশ আবার হারিয়েছিল ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসকে। পরের বার আফগানিস্তানের সঙ্গে জয় দিয়ে শুরু, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনাল। 



    বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা পারফরম্যান্সের কথা বলতে মাশরাফি ২০০৭ বিশ্বকাপের সঙ্গে টানলেন ২০১১ বিশ্বকাপকেও, “আমরা আগেও কিছু ভাল ম্যাচ খেলেছি। ২০০৭, ২০১১-তে কিছু ভাল ম্যাচ খেলেছি। নির্দিষ্ট ম্যাচ করে বললে কিছু ম্যাচ আছে, যেগুলোতে আমরা ভাল খেলেছি। (অবশ্য) এটা ইংল্যান্ডে, কন্ডিশন এখানে আমাদের দেশের মতো পক্ষে না। তবে এটা অন্যতম সেরা অবশ্যই। আমরা এভাবেই খেলতে চাই। তবে এটা তো প্রতিদিন হবে না। এভাবে খেলতে পারলে ভাল লাগবে।”

    এক ম্যাচ জিতেই তাই উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক, বাংলাদেশের এ জয় অন্য দল কীভাবে দেখবে, সেটা নিয়েও ভাবছেন না, “অন্যান্য দলের ওপর নির্ভর করছে, তারা কীভাবে দেখছে। আমরা সবাইকে বড় দল ভাবছি। টুর্নামেন্টে ভাল করতে হলে এমন দলের সঙ্গে জিততে হবে। আমাদের দলের চোট নিয়ে যেসব ব্যাপার আছে, সেগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

    “প্রতি ম্যাচে এমন হবে না। সবাই ভাল করলে সামনে ভাল করার সুযোগ আছে। সবারই স্বাভাবিক থাকা জরুরী। এই ম্যাচ জিতে আমরা পয়েন্ট টেবিলের কোথাও নাই। এতো রোমাঞ্চিত মানুষ হলেও আমাদের হওয়ার প্রয়োজন দেখছি না। অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।” 

    অবশ্য সে পথের প্রথম স্টেশনের অভিজ্ঞতাটা খারাপ হলো না। ম্যাচের শুরুতে অবশ্য কন্ডিশন একটু ধন্দে ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশকে। যে উইকেটে খেলা হয়েছে, ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটাও হয়েছিল এটিতেই। ফলে আগে ব্যাটিং না পরে, সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তারা ঠিকঠাক, “(টসের আগে) আধা ঘন্টা আমরা ধন্দে ছিলাম, কী করব। ফিল্ডিং না ব্যাটিং। ইংল্যান্ডে একটু মুভমেন্ট থাকে। এটা ব্যবহার করা উইকেট, কী হবে কিছুই জানার উপায় নেই। সে কারণে আশা করছিলাম, টসে হারলেই ভাল হবে। তারা ব্যাটিং দিল। (আবার এখানে)পরের অংশে স্পিনার ভূমিকা রাখে। তারা প্রত্যেক পর্যায়েই উইকেট নেওয়া সামর্থ্য রাখে।”

    শুরুতে ধন্দে থাকলেও বাংলাদেশ ধীরে ধীরে পেয়েছে আত্মবিশ্বাস। ম্যাচশেষেও এ ম্যাচ থেকে প্রাপ্তি সেটুকুই বলে মনে হচ্ছে মাশরাফির, “আমার কাছে মনে, এতো দূরে তাকানোর প্রয়োজন নেই। আজকেরটি শেষ, (এটির) চিন্তা বাদ দেওয়া উচিত। নিউজল্যান্ড নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি কিনা, সেটা দেখতে হবে। আজকের ম্যাচে জিতে হয়তো আত্মবিশ্বাস ভাল থাকবে। তবে চ্যালেঞ্জ আরও আসবে। আরও ইনিংস বড় করা যায় কিভাবে, সেদিকে ফোকাস করা উচিত।” 

    “ভাল করতে চাইলে বড় দলকে হারাতে হবেই। অন্যান্য দল, যাদেরকে আমাদের চেয়ে বড় করা হচ্ছে, তারা আমাদের সমানই। তাদের সঙ্গে জিততে হবে।” 

     

     

    বাংলাদেশের এ জয়কে কে কীভাবে দেখছেন, সেগুলোও ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি, “এসব নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে পারি না। কে কীভাবে ভাবে, তার ওপর নির্ভর করে। আমরা নিজেদের ওপর লক্ষ্য রাখছি। লোকে যা ইচ্ছা তাই বলতে পারে। তারা খুশি না হলে আমাদের পক্ষে কথা বলতে নাও পারে। আমি নিশ্চিত, অনেক মানুষ নেই যারা আমাদের খেলা পছন্দ করে।”