'ঝুঁকিহীন ক্রিকেট' আর 'সম্মিলিত অবদানেই' মাশরাফির তৃপ্তি
রেকর্ডটা হয়ে যাওয়ার পরও আপনি হয়তো খেয়ালই করেননি। কেউ কোনো সেঞ্চুরি করেনি, এমনকি খুব ঝড়ও সেভাবে কেউ তোলেনি, তারপরও বাংলাদেশের ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটা হয়ে গেছে। তেমন কোনো ঝুঁকি না নিয়েই এই রেকর্ড করে ফেলা, এটা কি বাংলাদেশ দলের আরও পরিণতবোধের পরিচয় দেয় না? মাশরাফি বিন মুর্তজা অবশ্য সেই বিচারের কাজটা ছেড়ে দিতে চান ব্যাটসম্যানদের ওপর।
‘দশে মিলে করেই কাজের’ এই নীতিই বাংলাদেশের শক্তির আসল জায়গা। অন্য অনেক দলের মতো ছয়-সাত নম্বরে সেরকম হার্ডহিটার নেই বাংলাদেশের, বাটলার-ম্যাক্সওয়েল-রাসেলের মতো মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও নেই কারও। তবে বাংলাদেশ অভিজ্ঞতা দিয়ে সেই অভাব পুষিয়ে দিয়েছে অনেকটাই। বিশেষ করে মিডল অর্ডারে এমন তিন জন আছে, যারা কমপক্ষে ১৭০টি ওয়ানডে খেলেছেন। মিডল অর্ডারটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি কি না এমন প্রশ্নেও মাশরাফির উত্তর, ‘অবশ্যই, শতভাগ। এটাই আমাদের সেরা জায়গা। আপনি অভিজ্ঞতা দেখুন, তামিম শুরুতে। এরপর সাকিব, মুশফিক, ছয়ে রিয়াদ থাকা মানে গভীরতা বাড়া। আর পাঁচে মিঠুনও ভালো খেলছে। আর সৌম্য আউট অব দ্য বক্স নিয়ে আসছে। আর সাত নাম্বারে মোসাদ্দেক আর সাব্বিরের মতো বিকল্প আছে। এটা আসলেই বেশ হেভি একটা লাইন আপ।’
উপাত্তচিত্র/জাহিদুর রহমান
তারপরও আজকের কাজটা অন্যরকমই ছিল। এক ইনিংসে দুই সেঞ্চুরিও ছিল বাংলাদেশের, গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই সাকিব-তামিম সেটি করেছিলেন। কিন্তু তখনও এত রান হয়নি। আজ সৌম্য আর শেষে মাহমুদউল্লাহ ছাড়া খুব বড় শটও খেলতে হয়নি কাউকে। মাশরাফি এখানে ওভালের দুর্দান্ত উইকেটকেও কৃতিত্ব দিচ্ছেন,’ ‘এটা আমার কাছে মনে হয় ব্যাটসম্যানরা আরও ভালো বিশ্লেষণ করতে পারবে। অবশ্যই, দেখতে খুব ভালো লেগেছে তারা ঝুঁকি ছাড়া ইনিংস্টা বিল্ড আপ করেছে। তারা নিজেদের কাছে হয়তো এই বার্তা দিতে পেরেছে এই ধরনের উইকেটে খুব বেশি ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নাই। উইকেট যদি স্লথ হতো বা অন্য কিছু হতো তাহলে আরও বেশি ঝুঁকি নিতে হতো। আসল ব্যাপার হচ্ছে, প্রথমে একটু সময় নিতে হবে। তার পর খেলা সহজ হবে। আশা করি আমাদের ব্যাটসম্যানরা এটা ভালোমতো বুঝতে হবে। যতক্ষণ সময় যাবে আমার কাছে মনে হয় এখানে ব্যাটিং করা সহজ হবে। এই ব্যাপারটা মাথায় রাখলে পরের ম্যাচে ব্যাট করা সহজ হবে।’
সবাই মিলে অবদান রেখে জয় এনে দেওয়ার ব্যাপারটাও অন্যরকম তৃপ্তি দিচ্ছে মাশরাফিকে, ‘অবশ্যই, সবাই অবদান রাখলেই আমরা বেশির ভাগ সময় জিতি। আমরা দল হিসেবে এমনই। আমি বলব না দল হিসেবে এটা আমাদের সেরা জয়। ২০০৭ বিশ্বকাপে বা ২০১১ বিশ্বকাপে আমরা কয়েকটা ম্যাচ জিতেছি। কিন্তু এটা একদিক দিয়ে আমাদের সেরা পারফরম্যান্সের একটি, কারণ দেশের বাইরে খেলতে হয়েছে। যেভাবে খেলেছে তাতে আমি খুশি। আমি জানি এরকম হয়তো আমরা প্রতিদিন খেলতে পারব না, কিন্তু আমি এরকম জয় যে কোনো সময়ই লুফে নেব।’