টানটান ট্রেন্টব্রিজে জমজমাট বিশ্বকাপ
পাকিস্তান ৫০ ওভারে ৩৪৮/৮ (হাফিজ ৮৪, বাবর ৬৩, সরফরাজ ৫৫; আলী ৩/৫০, ওকস ৩/৭১)
ইংল্যান্ড ৫০ ওভারে ৩৩৪/৯ (রুট ১০৭, বাটলার ১০৩; ওয়াহাব ৩/৮২, শাদাব ২/৬৩, আমির ২/৬৭)
ফলঃ পাকিস্তান ১৪ রানে জয়ী
বিশ্বকাপ দেখতে দেখতে ঝিমিয়ে পড়েছিলেন? কাল ওভাল সেই ঘুম ভেঙে দিয়েছে, আর আজ ট্রেন্টব্রিজের পর এখন শুধুই তারিয়ে তারিয়ে বিশ্বকাপ উপভোগের সময়। এমন ম্যাচ তো আর প্রতিদিন দেখবেন না ক্রিকেটে। যে দল টানা ১১ ম্যাচ হেরে ব্যাকফুটে ছিল, তারাই হারিয়ে দিয়েছে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে। আর যে পাকিস্তানকে কদিন আগেই টানা চার ম্যাচে উড়িয়ে দিয়েছিল, সেই ইংল্যান্ডই আজ বিশ্বকাপের চাপটা নিতে পারল না! ইংল্যান্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের জয় এমন কিছু হওয়ার কথা নয়, তবে পরিস্থিতি আর ফর্মের জন্য সেটাকে হয়তো আপসেটও বলে ফেলা যাচ্ছে!
এমন অনেক কিছুই হয়েছে আজ, যা হয়নি আগে। বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা শেষ হয়েছে অবশেষে। শুধু ১৯৯৯ বিশ্বকাপেই প্রথম সেঞ্চুরির জন্য এত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তবে আগের ১১ বারই প্রথম সেঞ্চুরিয়ানের গলাতেই উঠেছিল জয়মাল্য। আজ দুজন সেঞ্চুরিয়ান পেয়েও যা পরতে পারেনি ইংল্যান্ড। একটাই সান্ত্বনা, আগের চার বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরিয়ানরা চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ হাসি হেসেছিল। ইংল্যান্ডের সেই পথটা এখনও অনেক দূর।
ম্যাচটা নিয়ে কিছু না বলাটা আসলে অবিচার হয়ে যাচ্ছে। ইংল্যান্ড হেরেছে বটে, তবে শেষ দুই ওভারের আগেও তারা ম্যাচে ছিল ভালোমতোই। যে ট্রেন্টব্রিজে তারা দুবার ৪০০ ছাড়ানো ইনিংস খেলেছে, আজ আর সেটা পারেনি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটাও তাই হয়নি।
পাকিস্তানের জন্য অবশ্য অনুপ্রেরণার অভাব নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একেবারে উড়ে যাওয়ার পর আজ একাদশে এসেছিল দুইটি পরিবর্তন। শোয়েব মালিক আর আসিফ আলীকে জায়গা করে দিয়েছেন হারিস সোহেল ও ইমাদ ওয়াসিম। বোলার কমে গিয়েছিল একজন, কিন্তু কাজে এসে গেছে ফাটকাটা। কাজের সময় দারুণ দুই ব্রেকথ্রু দিয়েছেন হাফিজ আর মালিক। ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা গড়া হয়ে গেছে সেখানেই।
পাকিস্তানের শুরুটা অবশ্য দেখিয়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার ইমাম উল হক ও ফাখার জামান। ৮৩ রানের জুটির পর দুজন ফিরে গেছেন দ্রুত। ১১১ রানে ২ উইকেট পড়ার পর জুটি বেঁধেছেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ। তৃতীয় উইকেটে দুজনের ৮৮ রানই দেখিয়ে দিয়েছে বড় রান। বাবর ৬৬ বলে ৬৩ রান করে আউট হয়ে গেলেও হাফিজ এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য তা হয়নি। ৬২ বলে ৮৪ রান করে আউট হয়ে গেছেন মার্ক উডের বলে, ৩৫০র পথে তখন রাস্তা হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। সরফরাজ ফিরে গেছেন ৫৫ রানে, এরপর আসিফ আলী, শোয়েব মালিক, ওয়াহাব রিয়াজের কেউই বড় ঝড় তুলতে পারেননি। বরং শেষ দিকে হাসান আলী ও শাদাব খান মিলে ৩৪৮ পর্যন্ত নিয়ে গেছেন পাকিস্তানকে।
এর চেয়ে বেশি রান করেও কয়েক দিন আগেই ইংল্যান্ডের কাছে হারতে হয়েছে পাকিস্তানকে। আজ একাদশে ছিলেন আমির, ওয়াহাব। ও আর ছিলেন শাদাবও, নতুন বলে এসে পেয়েছেন মূল্যবান এক উইকেট, ফিরিয়ে দিয়েছেন জেসন রয়কে। জনি বেইরস্টোকে ৩২ রানে ফিরিয়ে দিয়েছেন ওয়াহাব। মরগানও যখন ৯ রান করে বোল্ড হাফিজের বলে, এরপর মালিক যখন স্টোকসকেও ফিরিয়ে দিলেন; ১১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড।
এরপর ক্রিজে জো রুট আর জস বাটলার। প্রথমজন ইংল্যান্ডের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, আর দ্বিতীয়জন সবচেয়ে বড় ট্রাম্পকার্ড। দুজন মিলে শুরু করলেন দিনটা নিজেদের করে নেওয়ার। ভুল অধিনায়কত্ব আর বাজে ফিল্ডিংয়ে তাদেরকে সাহায্য করছিলেন সরফরাজরা। রুট বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরি পেলেন, কিন্তু তার পরেই আউট। বাটলার পেলেন বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি, কিন্তু পরের বলেই তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন ওয়াহাব। দুজন মিলে গড়েছেন ২১০ রান, কিন্তু বাকিরা কেউ ৩২ রানও পার করতে পারেননি। ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গেছে সেখানেই।
মঈন কিছু করতে পারনেনি, ধুঁকতে ধুঁকতে আউট করেছেন। ওকসকেও এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে ফিরিয়েছেন ওয়াহাব, ম্যাচটাও শেষ করে দিয়েছেন। আমির দিয়েছেন তুলিতে শেষ টান, ১৪ রান দূরে থাকতে থেমে গেছে ইংল্যান্ড। আর পাকিস্তানের বিবর্ণ বিশ্বকাপটা রঙিন করে তুলেছেন।