ব্যাটিং-বোলিং নয়, 'ফিল্ডিং-ই গড়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড-পাকিস্তানের পার্থক্য'
ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্স ট্রেন্টব্রিজে হলো ঠিক পাকিস্তানের বিপরীতমুখী। পাকিস্তান আগের ম্যাচে ১০৫ রানে অল-আউট হয়ে যাওয়ার পরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এসে হারিয়ে দিল ইংল্যান্ডকে, আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দাপুটে জয়ের পর এখানে এসে থমকে গেল ইংল্যান্ড। তবে সেটাও ‘আউটপ্লেইড’ ধরনের কিছু নয়। ট্রেন্টব্রিজের রান-প্রসবা কন্ডিশনে পাকিস্তান ৩৪৮ রান তোলার পর ইংল্যান্ডের ইনিংসে দুই সেঞ্চুরি তাদেরকে মোটামুটি ঠিক পথেই রেখেছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট হারানোয় লক্ষ্যে পৌঁছানো হয়নি তাদের। ইংল্যান্ড অধিনায়ক অইন মরগান অবশ্য বলছেন ফিল্ডিংয়ের কথা। বেশ পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ের কারণে 'যে ১৫-২০ রান বাড়তি গুণেছে ইংল্যান্ড', ম্যাচে সেটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে বলে মত তার।
ক্রিকইনফোর ডাটা অনুযায়ী আউটফিল্ডে এদিন প্রায় ১৭ রানের মতো অতিরিক্ত গুণেছে ইংল্যান্ড মিসফিল্ডের কারণে। সঙ্গে আছে মোহাম্মদ হাফিজের ক্যাচ মিস। জেসন রয় ফেলেছিলেন লোপ্পা ক্যাচটি। সে সময় হাফিজের রান ছিল ১৪, শেষ পর্যন্ত ম্যাচসেরা হওয়া হাফিজ করেছিলেন ৬২ বলে ৮৪ রান। অবশ্য ক্যাচ মিস করেছে পাকিস্তানও, রুটের সে ক্যাচ মিসের খেসারত তাদের দিতে হয়েছে প্রায় ৯৮ রানে। অবশ্য গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে ইংল্যান্ডের মতো পিচ্ছিল ছিল না তারা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বেন স্টোকসের সেই ক্যাচসহ ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত থাকা ইংল্যান্ডের সঙ্গে এদিন পাকিস্তানের পার্থক্য ফিল্ডিং-ই গড়ে দিয়েছে বলে মত মরগানের, “আমাদের ফিল্ডিং টুর্নামেন্টজুড়েই ধারাবাহিক হতে হবে। আমার মনে হয় এদিন গড়পড়তার নিচে ছিলাম আমরা, যাতে ১৫-২০ রান খরচ হয়েছে। আর আমরা কতো রান কম করেছি : ১৪ রান।”
ম্যাচসেরা হয়েছেন হাফিজ/আইসিসি
“আমার মনে হয় ফিল্ডিংয়ে আজ আমরা পেছনে পড়ে গিয়েছি। এটাই দুই দলের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে উত্থান-পতন হবে টুর্নামেন্ট জুড়ে (তবে ফিল্ডিংয়ে ধারাবাহিক থাকতে হবে)।”
টসে জিতে পাকিস্তানকেই ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল ইংল্যান্ড। লিয়াম প্লাঙ্কেটের বদলে দলে নেওয়া হয়েছিল মার্ক উডকে, ১০ ওভারে ৫৩ রানে ২ উইকেট নিয়ে সফলই ছিলেন তিনি। ম্যাচে তুলনামূলকভাবে কম খরুচে ছিলেন ইংলিশ পেসাররাই, তারা যেখানে ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৭.০২ হারে, পাকিস্তান পেসাররা খরচ করেছেন ৭.১৬ হারে। পাকিস্তানকে ৩৪৮ রানে বেঁধে ফেলার পরও ম্যাচ ইংল্যান্ডের হাতে ছিল বলেই ধারণা মরগানের, “ট্রেন্টব্রিজ বড় স্কোরের মাঠ। উইকেট দেখে আমাদের ভাল মনে হয়েছিল। আউটফিল্ড ছিল দ্রুতগতির, জুটি হলে ৩৫০ আমাদের নাগালের মধ্যে থাকবে বলেই ভেবেছিলাম।“
রানতাড়ায় শুরুতেই জেসন রয়ের উইকেট হারানোটা অবশ্য সহায়তা করেনি ইংল্যান্ডকে। তবে জো রুট ও জস বাটলারের সেঞ্চুরি ম্যাচে রেখেছিল তাদের। বাটলারের উইকেটের পরই ঘটে বিপত্তি। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ডেপথ নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও আজ অন্যতম দুজন হয়েছেন ব্যর্থ- বেন স্টোকস ও মইন আলি। দুই অলরাউন্ডারের ব্যাটিং পারফরম্যান্সই ছিল সাদামাটা। স্টোকস শুরুতেই ফিরেছেন, মইন স্বচ্ছন্দে ছিলেন না মোটেও। তবে মরগান বলছেন, শুরুতেই একটা বড় জুটি লাগতো তাদের, প্রথম চার উইকেটে যেটা হয়নি, “শুরুতেই উইকেট হারানোটা আদর্শ ব্যাপার নয় মোটেও। তবে জো ও জস আমাদের ৪০তম ওভারের মাঝামাঝি পর্যন্ত ম্যাচে রেখেছিল। শুরুতে একটা গ্রহণযোগ্য জুটি পেলে আমরা সীমানাটা পেরিয়ে যেতে পারতাম।”
ব্যাটিংয়ে শুরুর জুটির মতো এদিন আরেকটা ব্যাপারও মিস করেছে ইংল্যান্ড- আদিল রশিদের বোলিং। তার পক্ষান্তরে থাকা শাদাব খান যখন দুইটি দারুণ ব্রেকথ্রু দিয়েছেন, রশিদ ৫ ওভার ৪৩ রান দেওয়ায় তাকে আর বোলিংয়েই আনেননি মরগান। অবশ্য রশিদের সঙ্গী মইনই নিয়েছিলেন পাকিস্তানের শুরুর ৩ উইকেট। তবে যেদিন হাফিজ-মালিকরাও গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নেন, সেদিন আসলে যথেষ্ট হয় না সেটাও।