• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    একটুর জন্য কত কিছু হয়নি ওভালে!

    একটুর জন্য কত কিছু হয়নি ওভালে!    

    বাংলাদেশ ৪৯.২ ওভারে ২৪৪ (সাকিব ৬৪, সাইফ উদ্দিন ২৯, মিঠুন ২৬, সৌম্য ২৫, তামিম ২৪; হেনরি ৪/৪৭, বোল্ট ২/৪৪)

    নিউজিল্যান্ড ৪৭.১ ওভারে ২৪৮/৮ (টেলর ৮২, উইলিয়ামসন ৪০; মোসাদ্দেক ২/৩৩, সাইফ উদ্দিন ২/৪১, সাকিব ২/৪৭, মিরাজ ২/৪৭)

    ফলঃ নিউজিল্যান্ড ২ উইকেটে জয়ী


    ‘একটুর জন্য, একটুর জন্য’ কত কিছু হয়নি। ওভালে বাংলাদেশের সেই ‘একটুর’ আফসোস কি কখনো যাবে? জয়টা ঠিক বাংলাদেশের কখনো ছিল না, কিন্তু বিশ্বকাপে অন্তত এত কাছে এসে না পাওয়ার দুঃখ তো পেতে হয়নি। আর কয়েকটা একটু এদিক সেদিক হলেই তো হয়ে যেত।

    মুশফিকুর রহিমকে জিজ্ঞেস করুন। এই ম্যাচ হয়তো বাংলাদেশ জিতে যেতে পারত অনেক আগেই, যদি ১২তম ওভারে ওই ঘটনা না ঘটত। বা ভালো, মুশফিক যদি না ঘটাতেন। সাকিবের বলটা ঠেলে দিয়ে রান নিতে দৌড়েছিলেন রস টেলর। উইলিয়ামসনের দ্বিধা ছিল, দেরি করে ফেলেছিলেন। তামিমের থ্রোটা স্টাম্পই ভেঙে দিত। কিন্তু অতি উত্তেজিত মুশফিক তাড়াহুড়োয় বেসিক ভুলে গেলেন। স্টাম্পের সামনে চলে আসার চেষ্টা করলেন, তার আগে ফেলে দিয়েছেন বেল। স্টাম্পও ওঠাননি, আউটও হননি উইলিয়ামসন। ওই সময় মাত্র জুটি বেঁধেছিলেন টেলর-উইলিয়ামসন। মুশফিকের ওই আউট হলে বাংলাদেশ কি জিতত?

     

     

    ম্যাচটা যেভাবে শেষ হয়েছে, তাতে প্রায় নিশ্চিত হয়ে হ্যাঁ বলে দেওয়া যায়। বাংলাদেশ তো এরপরও দাঁতে দাঁত কামড়ে লড়ে গেছে। টেলর-উইলিয়ামসন যখন ম্যাচটা বের করে এনেছেন, মিরাজকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন উইলিয়ামসন। টেলর যখন সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছিলেন, মোসাদ্দেকের বলে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। স্পিনাররা বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছে বার বারই।

    তবে রান রেট নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ছিল বরাবরই। বাংলাদেশের দরকার ছিল উইকেট, যেটা একটু দেরি করেই এসেছে। এরপরও এসেছে একটুর হতাশা, সাব্বিরের দারুণ থ্রো স্টাম্প ভেঙে দিলেও নিশম ইঞ্চির ব্যবধানে বেঁচে গেছেন। ১৯১ রানে নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেট ফেলার পরও হয়তো আশা ছিল। এরপর জিমি নিশম আর কলিন ডি গ্র্যান্ডোম নিউজিল্যান্ডকে আরও কাছাকাছি নিয়ে গেলেন। এর মধ্যে একটুর জন্য এলবিডব্লু হলেন না নিশম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেকই করলেন বাজিমাত, তাঁর বলে নিশম ক্যাচ দিলেন লং অনে। ওভাল আগের ম্যাচের মতো আরও একবার ফেটে পড়ছে উল্লাসে, রস টেলর ম্যাচ শেষে যেমন বলছিলেন খেলাটা যেন ঢাকা বা চট্টগ্রামে হচ্ছে!

    ২১৮ রানে তখন পড়ে গেছে ৭ উইকেট, হাতে ৩ উইকেট নিয়েও নিউজল্যান্ডকে করতে হবে ২৭ রান। মিচেল স্যান্টনার অনেক ম্যাচই জিতিয়েছেন আগে, আজ আরও একবার তুলে নিয়েন দায়িত্ব। হেনরির সঙ্গে যোগ করলেন ২০ রান। এর মধ্যে স্যান্টনার খোঁচা দিয়েও স্লিপ না থাকায় বেঁচে গেলেন। জয় থেকে তখন ৭ রান দূরত্বে নিউজিল্যান্ড, সাইফ উদ্দিনের বলে বোল্ড হয়ে গেলেন হেনরি। লকি ফার্গুসন ঠেকাতে গিয়ে উলটো চার মেরে দিলেন, ম্যাচে বাংলাদেশের আশা ভরসা প্রায় শেষ ওখানেই। শেষ পর্যন্ত দুই উইকেট হাতে রেখেই জিতে গেল কিউইরা।

    অথচ ম্যাচের চিত্রনাট্য হতে পারত অন্যরকম। সাকিব আল হাসান দিনটা আজ নিজের করে নেওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। ব্যাটিংয়ের কথায় পরে আসছি, আগে বোলিংটাই বলা যাক। বল হাতে পেয়েই প্রথম বলে তাকে উড়িয়ে মারতে গেলেন মার্টিন গাপটিল। ক্যাচ! ৩৫ রানে গেল প্রথম উইকেট। এরপর মানরো আউট হয়ে গেলেন সাকিবের বলেই; এবার মিরাজের দারুণ একটা ক্যাচে। এরপর তো মুশফিকের ওই মিস, যেটি শেষ পর্যন্ত ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টই হয়ে থেকেছে।

    সাকিবের ব্যাটিংয়ের কথাই একটু আসা যাক। পুরো ম্যাচে বলতে গেলে বাংলাদেশের ব্যাট হাতে সাকিবই ছিলেন জ্বলজ্বলে তারা। ওভালের উইকেট ছিল স্লথ, আউটফিল্ডও মন্থর। রান তুলতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কতটা কষ্ট হয়েছে সেটা একটা পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়। শুরুতে সৌম্য ২৫ বলে ২৫ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার পর স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু সাকিবের স্ট্রাইক রেট ছিল আশির ওপরে। মিঠুন একটুর জন্য লেটার পাননি, ৭৯-তে আটকে গেছেন; কিন্তু তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক সবাই ছিলেন ৬৫-র নিচে। এর মাঝে মুশফিক যেভাবে আউট হয়েছেন, সেটা তাঁর কিপিংয়ের মতোই পীড়াদায়ক। সিঙ্গেল না থাকার পরেও সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে হয়ে গেছেন রান আউট। যেটির জন্য দিতে হয়েছে বড় মূল্য। মিঠুন মন্দ শুরু করেননি, কিন্তু আরও একবার বড় কিছু করতে পারেননি। আর মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক খোলসে ঢুকে নষ্ট করে দিয়েছেন মোমেন্টাম। ১০ ওভার করে খেলেও দুজনের স্ট্রাইক রেট প্রায় অবিশ্বাস্য, ৫০ এর আশেপাশে! বাংলাদেশ যে শেষ পর্যন্ত ২৪৪ পর্যন্ত গেছে তাতে বড় অবদান সাইফ উদ্দিনের। ২৩ বলে ২৯ রান করে পালটা আক্রমণ করেছেন, তারপরও অবশ্য পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেনি বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের পরিকল্পনামাফিক বোলিং আর ফিল্ডিংও বাংলাদেশকে থিতু হতে দেয়নি।

    ওহ, এতকিছুর মধ্যে সাকিবের কথাটাই তো বলা হয়নি। আজ শুরু থেকে একটু স্লথ ছিলেন, কিন্তু নিশামের এক ওভারে পর পর তিন চারে পেয়ে গেছেন ছন্দ। ফিফটি পেয়ে বড় কিছুর দিকে এগুচ্ছিলেন, শেষ পর্যন্ত উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৬৮ বলে ৬৪ রানে থেমে গেছেন। এত কিছুর পরও দিন শেষে বৃথাই গেছে ইনিংসটা। ইশ, যদি, কিন্তু নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন সাকিব।

    একটুর জন্য আজ অনেক কিছু হয়নি!