• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    টানটান টন্টনে শেষ হাসি অস্ট্রেলিয়ার

    টানটান টন্টনে শেষ হাসি অস্ট্রেলিয়ার    

    অস্ট্রেলিয়া ৪৯ ওভারে ৩০৭ (ওয়ার্নার ১০৭, ফিঞ্চ ৮২; আমির ৫/৩০, আফ্রিদি ২/৭০ )

    পাকিস্তান ৪৫.৪ ওভারে ২৬৬ (ইমাম ৫৩, হাফিজ ৪৬, ওয়াহাব ৪৫; কামিন্স ৩/৩৩, স্টার্ক ২/৪২)

    অস্ট্রেলিয়া ৪১ রানে জয়ী


    ওই একটা রিভিউই কি ঘুরিয়ে দিল ম্যাচের মোড়? মিচেল স্টার্কের বলটা অ্যালেক্স ক্যারি ধরার পর আপিল করলেন ফিঞ্চরা, কিন্তু তাতে জোর ছিল না খুব একটা। ক্যারিও নিশ্চিত নন, ওয়াহাব রিয়াজকে দেখে মনে হলো একটু অস্বস্তিতে। সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগে রিভিউ নিলেন ফিঞ্চ, আল্ট্রাএজে ধরা পড়ল হালকা এজ। ৩৯ বলে ৪৫ রান করে ফিরলেন ওয়াহাব, জয় থেকে তখন পাকিস্তানের দূরত্ব ৪২ রান।

    ম্যাচের রোমাঞ্চ ওই ওভারেই শেষ করে দিলেন স্টার্ক। মোহাম্মদ আমির সেই ওভারেই আউট হয়ে গেলেন। সরফরাজ আহমেদ একা আর কতক্ষণই বা চালিয়ে যাবেন লড়াই? শেষ উইকেটে শাহীন শাহ আফ্রিদিকে নিয়ে সেটিও বেশিক্ষণ হলো না। সরফরাজের রান আউটেই শেষ হয়ে গেল ম্যাচ।

    অথচ পাকিস্তান সবাইকে চমকে দিয়ে জয়ের কাছাকাছিই চলে গিয়েছিল। ৬ উইকেটে ১৬০ রান পড়ার পর তাদের সম্ভাবনা কেউ না দেখাই স্বাভাবিক। প্রথমে হাসান আলীর ক্যামিও, এরপর ওয়াহাব রিয়াজ শুরু করলেন পাল্টা আক্রমণ। সরফরাজের সঙ্গে মিলে চলে এসেছিলেন কাছাকাছি। কিন্তু তীরে এসে আর তরী ভেড়ানো হলো না।

    ৩০৮ রান তাড়া করে পাকিস্তানের শুরুটাও ভালো হয়নি। ফাখার জামান যখন তৃতীয় ওভারে থার্ডম্যানে ক্যাচ দিলেন, স্কোরবোর্ডে উঠেছে ২ রান। আর ফাখার নিজে করেছেন শুন্য। তবে বাবর আজম এসেই নিজের মতো খেলতে শুরু করলেন। সুযোগ পেলেই চার মারছিলেন, প্রথম ২০ রান এসেছে বাউন্ডারিতে। দ্রুত পৌঁছে গেলেন ২৮ বলে ৩০ রানে, কিন্তু পুল শট খেলতে গিয়েই সর্বনাশ। কোল্টার নাইলের বলে ক্যাচ দিয়েছেন ডিপ স্কয়্যার লেগে।

    পাকিস্তানের সত্যিকারের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু এর পরেই। ইমাম উল হক ও মোহাম্মদ হাফিজ মিলে শুরু করলেন পাল্টা আক্রমণ। ইমাম একটু স্লথ হলেও হাফিজ খেলছিলেন দারুণ। ১১১ বলে পাকিস্তানকে দুজন এনে দিলেন ১০০ রান। দুজনের জুটিও হয়ে গেল ৮০ রানের, এর মধ্যে ফিফটিও হয়ে গেল ইমামের। কিন্তু এরপরেই দিয়ে এলেন উইকেট, কামিন্সের শর্ট বলটা ছিল লেগ স্টাম্পের ওপর, উইকেট নেওয়ার মতো না কোনোভাবেই। কিন্তু পুল করতে গিয়েই ক্যাচ তুলে দিলেন উইকেটের পেছনে।

    অস্ট্রেলিয়া তখনও পঞ্চম বোলারকে দিয়ে বল করাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। উপায় না দেখে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ এলেন, কে জানত পাকিস্তানকে বড় ধাক্কাটা দেবেন তখন। ফুল টসটা চাইলে যে কোনো জায়গা দিয়েই মাঠছাড়া করতে পারতেন, কিন্তু হাফিজের শট ডিপ স্কয়্যার লেগে খুঁজে নিল স্টার্ককে। ৪৯ বলে ৪৬ রান করে আউট হয়ে গেলেন হাফিজ। নিজেকে হারিয়ে খোঁজা শোয়েব মালিক মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই আউট, কামিন্সের বলেই। আসিফ আলীও রিচার্ডসনের বলে আউট হয়ে গেলেন ৫ রান করে।

    ২৪ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান পথ হারাচ্ছে তখন। হাসান আলী ঠিক করলেন, টনটনে একটু টানটান উত্তেজনা ফিরিয়ে আনবেন। রিচার্ডসন ও ম্যাক্সওয়েলকে তিন ছয় মারলেন, পরে আবার মারলেন দুই চার। কিন্তু শেষ হাসিটা হাসলেন রিচার্ডসনই, পরিস্থিতির দাবি না বুঝে হাসান আলী মারতে গিয়ে আউট ১৫ বলে ৩২ রানে। এরপর তো ওয়াহাব-বীরত্বের পর নাটকীয়ভাবে আবার ভেঙে পড়া।

     

    ম্যাচটাও ছিল আজ যেন ইংল্যান্ডের খেয়ালি আবহাওয়ার মতোই। অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা যেমন হয়েছিল, তাতে ৩৫০ মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। পাকিস্তানও বাজে ফিল্ডিং আর বোলিং করে সহজ করে দিচ্ছিল কাজটা। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার রান তাই হলো ৩০৭।

    অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার রান অনায়াসেই আরও বেশি হতে পারত। ৩০ ওভার শেষে যখন ২ উইকেটে ১৯০ উঠে গিয়েছিল স্কোরকার্ডে, সেখান থেকে ৩০০ করতে না পারার কোনো কারণ ছিল না। তবে ডেভিড ওয়ার্নারের ১৫তম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি ও পাকিস্তানি ফিল্ডারদের কাছ থেকে অমন সাহায্য পেয়েও সেটা ৩৩০ এর বেশি হলো না।

    সেটার জন্য বড় কৃতিত্ব অবশ্যই মোহাম্মদ আমিরের পাওনা। এই কন্ডিশনে কীভাবে বল করতে হয়, তা বাকিদের সামনে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। শুরু থেকেই দুর্দান্ত বল করেছেন, বিশ্বকাপ দলে তাঁকে না রাখাটা কত বড় ভুল হতো সেটা জানান দিয়েছেন আরও একবার।

    নতুন বলে বাজে শুরুই আসলে দিনটা পণ্ড করে দিয়েছে পাকিস্তানের। শাহীন শাহ আফ্রিদি শুরু থেকেই শর্ট লেংথে বল করে কমফোর্ট জোনে সুবিধা করে দিয়েছেন দুজনকে। একদিকে আমির যখন দুইটি টানা মেডেন ওভার করছেন, অন্যদিক দিয়ে আফ্রিদি দুই ওভারে দিয়েছেন ২৪ রান। এর মধ্যে ১৩তম ওভারে ওয়াহাব রিয়াজের বলে সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন আসিফ আলী। তবে আসিফ আলী আর পাকিস্তানের ফিল্ডিং দুঃস্বপ্নের সেটি তখন ছিল শুরু।

    ফিঞ্চ আর ওয়ার্নার তখন সেট হয়ে গেছেন। ফিঞ্চের হাতেই স্ট্রাইক ছিল বেশি, ফিফটিও পেলেন আগে। এরপর হাফিজের বলে সরফরাজ আবার তার কঠিন একটা ক্যাচ নিতে পারেননি, শাস্তিটা দিয়েছেন এরপর দুইটি চার ও একটি ছয় মেরে। সেঞ্চুরিটাও যখন পেয়ে যাবেন বলে মনে হচ্ছিল, তখন আমিরের আঘাত। ফিঞ্চ উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন ৮২ রানে।

    ওয়ার্নারও তখন হাত খুলে খেলতে শুরু করে দিয়েছেন। তিনে উঠে এসেছেন স্টিভ স্মিথ, তবে হাফিজের পার্টটাইমে আউট হয়ে গেছেন ১০ রানে। ম্যাক্সওয়েলকে চারে তুলে আনা ছিল চমকই, ১০ বলে ২০ রান করে শুরুটাও ভালো করেছিলেন। কিন্তু আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে গেলেন।

    ওয়ার্নার সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন একটু একটু করে। তবে সেঞ্চুরির আগে আউটও হয়ে যেতে পারতেন। ক্যাচ দিয়েও কিপার ও স্লিপের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে, চার হয়েই সেঞ্চুরি হয়ে গেছে তার। বাঁধভাঙা উদযাপনে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কতটা চেয়েছিলেন এই সেঞ্চুরিটা। এরপরেই আবার মিস পাকিস্তানের, এবারও সেই আসিফ আলী থার্ডম্যানে ফেলে দিয়েছেন সহজ ক্যাচ। ভাগ্য ভালো সেটার জন্য বড় মূল্য দিতে হয়নি, ফিরে গেছেন ১০৭ রানে।

    এরপর অস্ট্রেলিয়া ইনিংসটা হাঁটা শুরু করেছে উল্টো পথে। শন মার্শ, উসমান খাওয়াজা কেউই বেশিক্ষণ থাকেননি। আমির ফিরিয়েছেন দুজনকেই। কোল্টার নাইলকে ফিরিয়েছেন ওয়াহাব, আর কামিন্সকে হাসান আলী। দুজনই ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। অ্যালেক্স ক্যারিকে আউট করেছেন আমির, শেষ করে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বড় কিছুর আশা। আর স্টার্ককে আউট করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পেয়েছেন ৫ উইকেট।  দিন শেষে যা হয়ে থেকে সান্ত্বনাই।