উড-আর্চারের তোপের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উপড়ে ফেললেন রুট
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৪.৪ ওভারে ২১২ (পুরান ৬৩, হেটমেয়ার ৩৯, গেইল ৩৬; উড ৩/১৮, আর্চার ৩/৩০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৩.১ ওভারে ২১৩/২ (রুট ১০০, বেইরস্টো ৪৫, ওকস ৪০; গ্যাব্রিয়েল ২/৪৯)
ফলঃ ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী
কেভিন পিটারসেন ইংল্যান্ডের টস জেতার পরেই টুইট করেছিলেন, টসের সঙ্গে ম্যাচটাও জিতেল ইংল্যান্ড। কে জানত, সেই ভবিষ্যতবাণী এভাবে ফলে যাবে? ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে আরও একটি জয় পেল ইংল্যান্ড, শেষ চারের দিকেও এগুল। আর প্রথম ম্যাচ জয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুধু পেছনের দিকেই হাঁটছে।
তাও আজ ইংল্যান্ডের আজকের জয়টা এসেছে এক অর্থে জেসন রয় ও অইওন মরগানকে ছাড়াই। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ফিল্ডিংয়ের সময় মাঠ ছেড়েছেন রয়, আর মরগান ছেড়েছেন পিঠের ব্যথায়। দুজনের কেউই আর ব্যাট করতে নামেননি পরে, বা বলা ভালো দরকার হয়নি। কিন্তু দুজনের চোট ইংল্যান্ডের জন্য উদ্বেগ জাগাবেই।
সেই উদ্বেগ অবশ্য ইনিংসের শুরুতে বুঝতে দেননি জনি বেইরস্টো আর জো রুট। রয়ের জায়গায় ওপেন করতে নেমেছিলেন রুট, শুরু থেকেই খেলেছেন দারুণ। দুজনের জুটিই আসলে ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে দিয়েছে। ১৫ ওভারের মধ্যেই দুজন ওপেনিং জুটিতে তুলে ফেলেছেন ৯৫ রান, ম্যাচ আসলে ওখানেই শেষ। বেইরস্টো সুযোগ পেয়েও বড় করতে পারেনই ইনিংসটা, ৪৫ রান করে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে ক্যাচ দিয়েছেন থার্ডম্যানে।
এরপর একটু চমকে দিয়ে তিনে উঠে এসেছেন ওকস। তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন প্রথম কয়েকটি শটে, আর অন্য পাশে তো দুর্দান্ত রুট ছিলেনই। ঠিক ৫০ বলে ফিফটি পেয়েছেন রুট, আর পরের ফিফটি করতে লেগেছে ৪৩ বল। ৯৩ বলের সেঞ্চুরিটা এই টুর্নামেন্টে তার দ্বিতীয়, আর ক্যারিয়ারের ১৬তম। আর বিশ্বকাপে হলো তিন সেঞ্চুরি, যে কীর্তি নেই আর কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যানের। ওকসকে নিয়ে ম্যাচটা শেষ করে আসবেন বলেই মনে হচ্ছিল, তবে ৪০ রান করে আউট হয়ে গেছেন ওকস। তাতে অবশ্য ইংল্যান্ডের সমস্যা হয়নি কোনো। আর নিয়ন্ত্রণহীন আর পরিকল্পনাহীন বোলিংয়ে কাজটা আরও সহজ করে দিয়েছেন ক্যারিবিয় পেসাররা।
তার আগে প্রথম ইনিংসেই আসলে লেখা হয়ে গেছে ম্যাচের ভাগ্য। একদিকে উড-আর্চার, অন্যদিকে গেইল-রাসেল, অপেক্ষা ছিল গতি আর শক্তির লড়াইয়ের। কিন্তু তাতে গতি জিতল বিপুল ব্যবধানে, ইংল্যান্ডের বোলিংয়ের বিপক্ষে ‘ফুল আন্সারও’ করতে পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অলআউট হয়ে গেল ৫০ ওভারের আগেই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আর শুরু থেকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। এভিন লুইস ফর্ম হারিয়ে খুঁজছিলেন, ক্রিস ওকসের ফুল লেংথের ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ার আগে করেছেন ২ রান। গেইল শুরুতে নিজের মতোই স্লথ ছিলেন, আর্চারকে দুই চার মারার পর ওকসকে চার-ছয় মেরে একটু গা ঝাড়া দিয়ে এলেন। ১ রানের সময় কঠিন একটা ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন, সেটা কাজে লাগাবেন বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি, ৪১ ভলে ৩৬ রান করে আউট হয়ে গেছেন প্লাংকেটের বলে। শাই হোপ শুরু থেকেই ধুঁকছিলেন, এলবিডব্লু হওয়ার আগে করতে পারলেন ৩০ বলে ১১ রান। ৫৫ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
পুরান আর হেটমেয়ার পরিস্থিতির দাবি মেটানোর দায়িত্ব নিলেন। দুজনই দারুণ মারকুটে, তবে সিঙ্গেল আর সুযোগ পেলে চার মেয়েই স্কোরকার্ড সচল রাখছিলেন। ইংল্যান্ড এই পরিস্থিতিতে আশ্রয় নিল প্ল্যান বির। স্পিনে হেটমেয়ার হিমশিম খাচ্ছিলেন, শেষ পর্যন্ত ছটফট করতে করতে ৩৯ রানে ফিরতি ক্যাচ দিলেন জো রুটকে। জেসন হোল্ডারও রুটকেই দিলেন ফিরতি ক্যাচ, এবারও উপহারই দিয়ে এলেন। ১৫৬ রানে ৪ উইকেট নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
আন্দ্রে রাসেল শুরুতেই একবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেলেন, ধরতে পারলেন না ওকস। এরপর চার-ছয়ে নিজের মতো করেই শুরু করেছিলেন, কিন্তু সেটা আর বেশিদূর হলো না। মার্ক উডের শর্ট বলে শেষ পর্যন্ত প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিলেন উডকে। ২১ রান করে রাসেল আউট, এরপর দৃশ্যপটে আর্চার। পুরান ওয়ানডেতে নিজের প্রথম ফিফটি পেয়েছিলেন, কিন্তু ৬৩ রান করে ক্যাচ দিলেন। আম্পায়ার শুরুতে আউট দেননি। কিন্তু বাটলার রিভিউ নিয়ে পেয়েছেন উইকেট। পরের বলে কটরেলও আউট, রিভিউ নিয়ে সেটি হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত সেটার মূল্যই দিতে হয়েছে। ব্রাথওয়েট আউট হয়ে নিতে পারেননি, যদিও বল তার ব্যাটে না, বাহুতেই লেগেছিল। আর্চার আর উডের তোপে নিভু নিভু হয়ে গিয়েছিল ক্যারিবিয় প্রদীপ। যেটি পরে এক ফুতে নিভিয়ে দিয়েছেন জো রুট।