স্বপ্নের শুরুর পর দুঃস্বপ্নের ধসে শ্রীলংকা হেরে গেল অস্ট্রেলিয়ার কাছে
অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ৩৩৪/ ৭ (ফিঞ্চ ১৫৩, স্মিথ ৭৩, ম্যাক্সওয়েল ৪৬; উদানা ২/৫৭)
শ্রীলংকা ৪৫.৫ ওভারে ২৪৭ (করুনারত্নে ৯৭, পেরেরা ৫২; স্টার্ক ৪/৫৫, রিচার্ডসন ৩/৪৭)
ফলঃ অস্ট্রেলিয়া ৮৭ রানে জয়ী
৩২ ওভার শেষে স্কোর ২ উইকেটে ১৮৬। ওভারপ্রতি আটের বেশি রান দরকার বটে, তবে ক্রিজে একজন সেট ব্যাটসম্যান পাচ্ছে সেঞ্চুরির সুবাস। আর ব্যাটিং অর্ডারের পড়ে আছে পুরোটাই। ওভালে দুর্দান্ত একটা ম্যাচ দেখা হবে, সেই আশা নিয়েই নড়েচড়ে বসেছিল সবাই। কিন্তু কী ম্যাচ কী হয়ে গেল! সেখান থেকে ম্যাচটা যে ইংলিশ আবহাওয়ার মতো এমন অননুমেয় হয়ে যাবে সেটাই বা কে ভেবেছিল? এরপর ৬১ রান তুলতে আরও ৮ উইকেট হারাল শ্রীলংকা। যে ম্যাচ মনে হচ্ছিল জমজমাট হবে, সেটাই হারল ৮৭ রানে।
অথচ কুশল পেরেরা ও দিমিথ করুনারত্নে স্বপ্নের মতো একটা শুরুই এনে দিয়েছিলেন শ্রীলংকাকে। ১০ ওভারের মধ্যে দুজন তুলে ফেলেছিলেন ৮৭ রান, এখন পর্যন্ত পাওয়ারপ্লেতে বিশ্বকাপের যা সর্বোচ্চ। করুনারত্নে ফিফটি পেয়েছিলেন আগেই, পেরেরাও পরে ৩৩ বলেই তুলে নিলেন ফিফটি। স্টার্ক-কামিন্সরা যখন লাইন খুঁজে জেরবার হচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত ফুল লেংথ বলেই পেরেরাকে ফেরালেন স্টার্ক, ৫২ রানে।
তবে করুনারত্নে খেলছিলেন দুর্দান্তই, একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন লক্ষ্যের দিকে। থিরিমান্নের সঙ্গে জুটি থেকেই রান রেট স্লথ হতে শুরু করে, শেষ পর্যন্ত ২৬ বলে ১৬ রান করে আউট হয়ে যান থিরিমান্নে। তবে করুনারত্নে সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছিলেন, রান রেট বেড়ে গেলেও ম্যাচটা তখনও অসম্ভব হয়ে যায়নি শ্রীলংকার জন্য। ৯৭ রানে রিচার্ডসনের বলে ক্যাচ দিলেন করুনারত্নে, শ্রীলংকার পতন সেখান থেকেই। কামিন্সের শর্ট বলে আউট হয়ে গেছেন ম্যাথুস, সিরিবর্ধনার স্টাম্প উপড়ে ফেলেছেন স্টার্ক। থিসারা পেরেরা ছয় মেরে শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত ক্যাচ দিয়েছেন স্টার্কের বলে। এই তিন জনই আউট হয়ে গেছেন দুই অঙ্কের আগে, ম্যাচের আশাও ওখানেই শেষ শ্রীলংকার। এরপর মেন্ডিস ৩০ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শেষ করে দিয়েছেন বাকি আশাও। সেটাও সেই স্টার্কের বলে। মালিঙ্গা ও প্রদীপকে আউট করে বাকি আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন রিচার্ডসন ও কামিন্স।
তার আগে ৩৩৪ পর্যন্ত যে অস্ট্রেলিয়া গেছে, সেই কৃতিত্ব অবশ্যই ফিঞ্চের বেশি। ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে এবারের বিশ্বকাপে জুটিটা জমছে ভালোই, পাঁচ ম্যাচেই অন্তত ৫০ করেছেন দুজন। তবে আগের মতো আজ ওয়ার্না সাবধানী, ফিঞ্চই খেলেছেন হাত খুলে। ওয়ার্নার এতোটাই খোলসে ঢুকে গিয়েছিলেন, ২৬ রান করতে তার খেলতে হয়েছে ৪৮ বল। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে বোল্ড হয়ে শেষ পর্যন্ত শেষ হয়েছে ইনিংসটা। ওয়ার্নারের আউটের পর ফিঞ্চও একটু স্লথ হয়ে গিয়েছিলেন। খাওয়াজা চাপটা সামলাতে পারেননি, ২০ বলে আউট হয়ে গেছেন ১০ রান করে।
তখনও ২৫ ওভার শেষে ওভারপ্রতি পাঁচও তুলতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসের দ্বিতীয় অধ্যায়টা শুরু হয়েছে এরপর, ধনঞ্জয়ার এক ওভার থেকে ১৮ রান নিয়েছেন ফিঞ্চ। রান রেট পাঁচের ওপরে নিয়ে গেছেন দ্রুত, আর স্মিথও যোগ দিয়েছেন তার সঙ্গে। দেখতে দেখতে নব্বইতে পৌঁছে গেছেন ফিঞ্চ, মিলিন্দা সিরিবর্ধনাকে ছয় মেরেই পেয়ে গেছেন সেঞ্চুরি। ফিফটি করেছিলেন ৫৩ বলে, আর সেঞ্চুরির জন্য খেলতে হয়েছে ৯৭ বল। অ্যালান বোর্ডার আর রিকি পন্টিংয়ের পর তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি পেলেন।
সেটা এরপর অনেক বড় করবেন বলেও মনে হচ্ছিল। স্মিথও তখন হাত খুলে খেলতে শুরু করে দিয়েছেন, ৪৬ বলে পেয়েছেন ফিউফটি। হুট করেই ৩৫০ অস্ট্রেলিয়ার জন্য খুব সম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল। ফিঞ্চ পরে ৫০ করলেন মাত্র ৩১ বলে, এরপরেই আউট হয়ে গেলেন ১৫৩ রানে।
ওদিকে স্মিথ আর ম্যাক্সওয়েল তখন আরও খড়গহস্ত। স্মিথ অবশ্য ৫৯ বলে ৭৩ রান করে আউট হয়ে গেলেন। তবে ম্যাক্সওয়েলের থামাথামির লক্ষণ নেই, ৪৫তম ওভারে নুয়ান প্রদীপের বল থেকে নিলেন ২২। কিন্তু এরপরেই পথ হারিয়ে ফেলল অস্ট্রেলিয়া। শন মার্শকে দারুণ এক স্লোয়ারে বোকা বানালেন উদানা। তবে তার চেয়েও বড় চমক দিলেন পরের ওভারে। উদানার এক ওভারে দুর্দান্ত দুই থ্রোতে রান আউট হয়ে গেলেন ক্যারি আর কামিন্স। শেষ ৫ ওভার থেকে অস্ট্রেলিয়া নিতে পারল মাত্র ৩২ রান। ৩৩৪ এর বেশি হলো না তাই। সেটাই হয়ে গেছে যথেষ্টর চেয়েও অনেক বেশি।