ক্ষ্যাপাটে মরগান, রেকর্ড-ভাঙা ইংল্যান্ডের সামনে অসহায় আফগানিস্তান
ইংল্যান্ড ৩৯৭/৬, ৫০ ওভার
আফগানিস্তান ২৪৭/৮, ৫০ ওভার
ইংল্যান্ড ১৫০ রানে জয়ী
অইন মরগানের ক্ষ্যাপাটে সেঞ্চুরি, জনি বেইরস্টো ও জো রুটের সেঞ্চুরির কাছাকাছি দুটি ইনিংসের সঙ্গে মইন আলির ক্যামিও- মূলত ব্যাটিংয়ের বড় সংগ্রহেই জয়ের চিত্রনাট্য লিখে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। আফগানিস্তানের ব্যাটিং তাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিয়মরক্ষার। শেষ পর্যন্ত হলো সেটাই। আফগানিস্তানকে ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে ইংল্যান্ড, ১৯৭৫ বিশ্বকাপের পর রানের হিসেবে যা তাদের সবচেয়ে বড় জয়। আর বিশ্বকাপের বাইরে এক পা দিয়ে রাখল আফগানিস্তান। ওল্ড ট্রাফোর্ডের রেকর্ড-ভাঙা দিনে ইংল্যান্ডের কাছে কোনোমতেই পাত্তা পায়নি আফগানিস্তান। ম্যাচশেষেও আফগান ক্রিকেটাররা হাসতে পারলেন মূলত ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্সের কারণেই, এমন দিনে তাদের কিইবা করার থাকে আর!
৩৯৮ রানের লক্ষ্য, আফগানিস্তানের জন্য বোধহয় এর চেয়ে তাদের পাহাড়ী পথে বিশাল বোঝা মাথায় নিয়ে দৌড় দেওয়া সহজ। ২য় ওভারে আর্চারের বলে স্টাম্পে বল ডেকে এনেছিলেন নুর আলি জাদরান। এরপর ওপেনিংয়ে নামা অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব ও টেস্ট অধিনায়ক রহমত শাহ যোগ করলেন ৪৮ রান, নাইবের শেষটা হলো বাটলারের দারুণ এক ক্যাচে। উডের বলে পুল করতে গিয়ে টপ-এজড হয়েছিলেন নাইব, দৌড়ে গিয়ে সেটা নিয়েছেন বাটলার। এরপর আরও দুটি মাঝারি জুটি গড়েছে আফগানিস্তান- প্রথমে রহমত ও হাশমতউল্লাহ শাহিদির ৫২ রানের পর পরের জনের সঙ্গে আসগর আফগানের ৯৪।
আদিল রশিদের দিনে প্রথম শিকার হয়েছেন রহমত, ৪৬ রান করতে তিনি খেলেছেন ৭৬ বল। শাহিদি ৭৬ করেছেন ১০০ বলে। এ দুজনের তুলনায় ম্যাচের টেম্পোর সঙ্গে বেশি মানানসই ছিল আফগানের ৪৮ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। এরপর আদতে তাদের ইনিংসে তেমন কিছু বলার নেই। আর্চার ছিলেন ভীতিজাগানিয়া, ৩ উইকেট নিয়েছেন ৫২ রানে। মার্ক উড ছিলেন মিতব্যয়ী, ১০ ওভারে ২ উইকেট নিতে খরচ করেছেন ৪০ রান। রশিদ খরুচে ছিলেন, তবে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
তবে ইংলিশ রশিদের ‘খরচ’টার কোনও তুলনাই চলে না যেন আফগান রশিদের সঙ্গে। তার ওপর দিয়ে যে গেছে রীতিমতো ঝড়। ৩০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের রান ছিল ২ উইকেটে ১৬৪। সেখান থেকে ইংল্যান্ডের এতখানি যাওয়ার মূল কৃতিত্বটা নিশ্চিতভাবেই অধিনায়ক অইন মরগানের ক্ষ্যাপাটে এক ইনিংসের। যে ইনিংসে তিনি ভেঙেছেন এক ওয়ানডে ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ১৬ ছয়ের রেকর্ড, মেরেছেন ১৭টি।
সকালেও ম্যাচের আগমুহুর্তে ফিটনেস টেস্ট দিয়েছেন মরগান। আফগানিস্তান এখন ভাবতেই পারে, সেই টেস্টে মরগান ব্যর্থ হলেই তাদের ওপর এই ধ্বংসযজ্ঞটা চলে না! এমনিতে জেসন রয় ছিলেন না, তার জায়গায় সুবিধা করতে পারেননি একটা জীবন পাওয়া জেমস ভিনস। প্রথম পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে দাওলাত জাদরানের বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে তিনি করেছেন ৩১ বলে ২৬ রান।
ওপেনিং ছেড়ে আবার তিনে নামা জো রুটের সঙ্গে বেইরস্টোর জুটিটা ছিল ধীরগতির, কিছুটা ক্ল্যাসিক ঘরানার। ১২০ রান তুলেছেন দুজন মিলে। বেইরস্টো সেঞ্চুরিটা পেলেন না ১০ রানের জন্য, গুলবাদিন নাইবকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। এলেন মরগান। শুরু হলো অন্য রকমের এক ইনিংস। খেললেন ৭১ বল। এর মধ্যে এজড হয়েছেন ছয়বার, বল খেলতে গিয়ে মিস করেননি একবারও। রক্ষণাত্মক শট খেলেছেন মাত্র ৩ বলে। সব মিলিয়ে মেরেছেন ৪টি চার, ১৭টি ছয়। শুধু বিশ্বকাপ নয়, ওয়ানডেতেই যা রেকর্ড। শুধু ছয় দিয়েই সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়ে গেছে মরগানের।
বোলিং ওপেন করা মুজিব ১০ ওভারে গুনেছিলেন ৪৪ রান, তবে শেষদিকে মুজিবের বোলিং যেন হয়ে গেল বিস্মৃত। এক রশিদ খান একাই ৯ ওভারে গুণলেন ১১০ রান, ওয়ানডেতে যা তৃতীয় খরুচে বোলিং। তবে তালিকায় তার ওপরে থাকা মিক লুইস ও ওয়াহাব রিয়াজ- দুজনেই করেছিলেন ১০ ওভার করে।
মরগান সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র ৫৭ বলে, বিশ্বকাপে যা চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি। ফিফটি করতে তিনি খেলেছিলেন ৩৬ বল, পরের ফিফটি করতে তাই খেলেছেন মাত্র ২১ বল। নাইবের বলে মিসহিটে লং-অফে ধরা পড়ার আগে করেছেন ৭১ বলে ১৪৮ রান। ম্যাচের তখনও বাকি ছিল ৩ ওভার। রুট ১২ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি, বাটলার ও স্টোকস ফিরেছেন ২ রান করে। মইন খেলেছেন ৯ বলে ৩১ রানের ক্যামিও।
শেষ বলে মইন আলি সিঙ্গেল নেওয়ার পর কি একটা দীর্ঘশ্বাসের সুর খেলে গেল ওল্ড ট্রাফোর্ডে? হতেই পারে। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ৪০০ রানের স্কোর থেকে যে ৩ রান দূরে থামল ইংল্যান্ড।
তাতে অবশ্য ম্লান হলো না কিছুই। মরগানের ক্ষ্যাপাটে ইনিংসেই বরং ম্লান হয়ে গেল আফগানিস্তান।