'উইকেট না নিতে পারার সঙ্গে বড় ক্ষতি করেছে ম্যাক্সওয়েলের ইনিংসও'
যেন বালি দিয়ে বাঁধ আটকানোর চেষ্টা। একটু করে দেওয়া হয়, সেটা আবার ফুটো হয়। শেষকালে আর আটকানো গেল না জলের স্রোত। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং স্রোতে বিপরীতে ট্রেন্টব্রিজে বাংলাদেশের বোলিং ফিল্ডিং ছিল এমনই। ৩৭তম ওভার শেষেও রানরেট ছিল ছয়ের নিচে, তবে ৩৮তম ওভারের পর থেকে ভেঙে গেল বাঁধ। অস্ট্রেলিয়ার হাতে থাকা ৯ উইকেটের তোপটাই সামাল দিতে পারেনি বাংলাদেশ।
৩৮তম ওভার থেকে বাঁধের ভাঙনটা হয়ে উঠেছিল ভয়ঙ্কর। রুবেল হোসেনের সে ওভারে এসেছিল ১২ রান। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়া রান তুলেছে প্রায় ১২.৫৪ হারে। ডেভিড ওয়ার্নার ফিরলেও অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়েছিল তাদের আরেক বড় অস্ত্র-- গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। উসমান খাওয়াজার সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে ম্যাক্সওয়েল না ফিরলে হয়তো রানটা আরও বড় হতে পারত অস্ট্রেলিয়ার! ম্যাক্সওয়েল করেছেন শেষ পর্যন্ত ১০ বলে ৩২ রান। ঠিক সময়ে উইকেট না নেওয়ার সঙ্গে ম্যাক্সওয়েলের সেই ইনিংসকেও টার্নিং পয়েন্ট বলছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
এ নিয়ে এ বিশ্বকাপে দুবার ৩৮০-এর ওপর রান প্রতিপক্ষ করলো বাংলাদেশের সঙ্গে-- ইংল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়া। দুবারই রান ৪০-৫০টি বেশি হয়ে গেছে বলে মনে করেন মাশরাফি, তেমন না হলে ব্যাটসম্যানরা এ দুই ম্যাচের অন্তত একটি বের করে নিয়ে আসতে পারতেন বলেও ধারণা তার, “৩০০-৩২০ পর্যন্ত বিশ্বাস ছিল, আমাদের ব্যাটিং এমন, তাড়া করতে পারব। এমনকি ৩৪০-এর বেশি যাতে না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে চেয়েছিলাম। (সে পর্যন্ত তাড়া করতে পারব) আজ এটা বিশ্বাস ছিল। ইংল্যান্ড বা আজকের মধ্য থেকে একটি ম্যাচ জেতা সম্ভব ছিল, যদি কম রানে তাদের আটকে রাখতে পারতাম।”
তবে আটকে রাখার জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল উইকেট। এদিন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নিলেন সৌম্য সরকার। ফিঞ্চের পর খাওয়াজাকে নিয়ে ওয়ার্নার বেশ পরিকল্পনা করে খেলেছেন সাকিবকে। মিরাজের ওপর তেমন চড়াও না হলেও উইকেট দেননি তাকেও। মাশরাফি বলছেন, এদিন মোসাদ্দেক হোসেন থাকলে দুদিক থেকে দুই অফস্পিনার চালিয়ে ‘ক্ষতিটা আরেকটু কম’ করার চেষ্টা করতে পারতেন তিনি, “সাকিবকে পরিকল্পনা করে খেলেছে, ওয়ার্নার আক্রমণ করছিল, খাওয়াজা সিঙ্গেল নিয়ে দিচ্ছিল। মোসাদ্দেক থাকলে আরেকটু কম ক্ষতি হতো। সৌম্য কাভার করেছে তবুও। ৩৮ ওভার-এর পর থেকেই মূল ক্ষতিটা হয়েছে।”
“এসব ব্যাটসম্যানকে এমন উইকেটে বোলিং করা কঠিন। আমরা সুযোগ পেয়েছিলাম। আমরা জানতাম উইকেট নিতে হবে, নাহলে কঠিন হবে। ওয়ার্নার, ফিঞ্চ, খাওয়াজা-- সবার ব্যাটিং ভাল হয়েছে। তবে আমার মনে হয় বড় ক্ষতিটা করেছে ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং, ১৩ বলে ৩০ এর মতো রান করেছে সে (১০ বলে ৩২)। সেটা বড় একটা ক্ষতি করেছে।”
মোটামুটি ফ্ল্যাট উইকেট স্কোর যে বড় হবে, সে ধারণা ছিল তাদের। টসে জিতলে ব্যাটিং নিতেন, সেটা বলেছিলেন আগেই। তবে শেষ পর্যন্ত সময়ের মাঝে উইকেট না পাওয়াতেই ঘটেছে বিপত্তি, “আমরা জানতাম, স্কোর বড় হবে। বোলাররা ৩০০-এর মধ্যে বেঁধে ফেলারা চেষ্টা করেছে, তবে উইকেট নিতে হতো। শেষে নিয়েছি উইকেট। ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন হয়ে গেছে কাজ। ৩২০-৩৪০ তাড়া করতে পারতাম। এর বেশি ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন হয়ে যায়।”
তবে এরপরও ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেছেন তিনি, “সবাই ‘ইন্টেন্ট’ নিয়ে ব্যাটিং করছে, সাহসিকতা দেখাচ্ছে। ৩৩০ খারাপ স্কোর না।”
“যদি ইংল্যান্ডের উইকেট বা সবকিছুর দিকে তাকান, আমরা যে মাঠে খেলছি, বড় রান হবে জানতাম। তবে এতো হওয়া উচিত হয়নি। ২৮০-৩০০ হতে পারত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবং আজ ৩৮০ হয়েছে-- অনেক বেশি ব্যাটসম্যানদের জন্য যা। ৩০০-৩২০ ব্যাটসম্যানদের জন্য ভাল হতো। ৪০-৫০ রান প্রতি ম্যাচে বেশি হয়ে যাচ্ছে।”