দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিদায় করে ঝুলে রইল পাকিস্তান
লর্ডস
পাকিস্তান ৩০৮/৭, ৫০ ওভার
দক্ষিণ আফ্রিকা ২৫৯/৯, ৫০ ওভার
পাকিস্তান ৪৯ রানে জয়ী
সেমিফাইনালের সম্ভাবনাটা খাতা-কলমে টিকে ছিল দুই দলেরই। তবে সেটা এদিনের পরও টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন ছিল জয়। সেটা পাওয়া হলো না দক্ষিণ আফ্রিকার। পাকিস্তানের দেওয়া ৩০৯ রানের লক্ষ্যে তারা থেমেছে ২৫৯ রানেই। ২০০৩ সালের পর আবারও গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছে প্রোটিয়াদের, আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে এবারের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে তাদের। এবার আর বৃষ্টি বা ক্ষ্যাপাটে কোনও দৌড়ের প্রয়োজন পড়েনি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায়কে অন্য কিছু দিয়ে ট্যাগ করানো যাচ্ছে না তাদের পারফরম্যান্সের কারণেই। অন্যদিকে এ ম্যাচ জিতে টানেলের ওপাশে আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছে পাকিস্তান, ৩ ম্যাচ বাকি রেখে তারা ঝুলে রইল এখনও।
পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে ঠিক সেভাবে চেপে ধরতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা, অথবা বলা বেশি উপযুক্ত হবে, চাপ ধরে রাখতে পারেনি। আর ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের ফিল্ডিং তাদেরকে বেশ কয়েকবার দিয়েছে লাইফলাইন, অন্তত পাঁচটি ক্যাচ ছেড়েছে পাকিস্তান। তবে ম্যাচের সীমানাটা পেরিয়ে যাওয়া হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। রানতাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল মূলত দুই ধাপে, দুটি জুটির সময়। কুইন্টন ডি কক ও ফাফ ডু প্লেসির জুটির পর রাসি ফন ডার ডুসেনের সঙ্গে ডেভিড মিলারের জুটিতে। তবে মোহাম্মদ আমির ও শাদাব খানরা বারবার পাকিস্তানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
প্রথম ওভারেই হাফিজের বলে মিড-অনে রিয়াজের হাতে জীবন পেয়েছিলেন ডি কক। তবে প্রথম ব্রেকথ্রু পেতে পাকিস্তানকে অপেক্ষা করতে হয়েছে মাত্র ৭ বল। দুর্দান্ত আমিরে প্রথমে কাবু হয়েছেন হাশিম আমলা, শাফল করে খেলতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে, যেটি পাকিস্তান পেয়েছে রিভিউ নিয়ে। ডু প্লেসি ও ডি কক এরপর চেষ্টা করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস পুনর্গঠনের। ৮৭ রানের জুটিও হয়ে গিয়েছিল। গিয়ার বদলাতে গিয়েই বিপত্তি টেনে এনেছেন ডি কক।
ওয়াহাব রিয়াজকে পায়ের ওপর থেকে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছয় মেরেছিলেন, ডি কক এরপর শাদাবকেও স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ইমামের হাতে। আবার টেলিভিশন আম্পায়ারের কাছে গিয়েছিল সিদ্ধান্ত, তবে এবার সফট সিগন্যাল ছিল আউট, সেটার পক্ষে সিদ্ধান্ত দিতে বেশিবার দেখতে হয়নি টিভি আম্পায়ারকে।
মার্করাম বেশিক্ষণ টেকেননি, শাদাবকে ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড। ফন ডার ডুসেনের সঙ্গে ডু প্লেসির ৩৩ রানের জুটিটা ভেঙেছেন আমির। তার শর্ট অফ আ লেংথ বলে পুলের চেষ্টায় টপ-এজড হওয়া ডু প্লেসি ধরা পড়েছেন তারই প্রতিরুপ সরফরাজের হাতে। এর আগে ডু প্লেসির বিপক্ষে একটি কট-বিহাইন্ডে রেফারেল নিয়ে রিভিউ হারিয়েছিল পাকিস্তান।
পাকিস্তান এরপর আরেকদফা মেতেছিল ক্যাচ মিসের মহড়ায়। মিলারের ফিরতি ক্যাচ ধরেও সামলাতে পারেননি আমির, ৩৭তম ওভারে রিয়াজের বলেই হয়েছে দুইটি ক্যাচ মিস। তবে ততক্ষণে রানরেট নাগালের বাইরে চলে গেছে প্রায় দক্ষিণ আফ্রিকার। মরিয়া ফন ডার ডুসেন ক্যাচ তুলেছেন শাদাবের বলে, অবশেষে একটি ক্যাচ নিয়েছে পাকিস্তান হাফিজের হাত ধরে। মিলার বোল্ড হয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায় এরপর হয়ে দাঁড়িয়েছিল সময়ের অপেক্ষা। ক্রিস মরিস, কাগিসো রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিডিকে বোল্ড করে রিয়াজ দেখিয়েছেন দাপট। অ্যান্ডাইল ফেহলুকওয়ায়ো শেষ পর্যন্ত শুধু অপরাজিতই থেকেছেন ৩২ বলে ৪৬ রানে, পার্থক্য গড়তে পারেননি কোনও।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা যখন পাকিস্তানের কাছ থেকে পাওয়া জীবন কাজে লাগাতে পারেননি, লর্ডসের দিনটি তখন হয়ে থেকেছে একজন পাকিস্তান ব্যাটসম্যানের অনেক অপেক্ষার পর পাওয়া সুযোগ কাজে লাগানোর উপলক্ষ্য হিসেবে। মূলত হারিস সোহেলের ৫৯ বলে ৮৯ রানের ইনিংসে ভর করেই পাকিস্তান তুলেছিল ৩০৮ রান, পেয়েছিল লাইফলাইন।
টপ অর্ডারে রান পেয়েছেন পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা, সে ভিতে দাঁড়িয়েই হারিস খেলেছেন সেই ইনিংস। যে ইনিংসে ছিল দারুণ টাইমিং, সঙ্গে বোলারদেরও পড়েছেন দারুণভাবে। তার ইনিংসে ৯ চারের সঙ্গে মেরেছেন ৩ ছয়। বাবর আজমের সঙ্গে ৬৮ বলে ৮১ রানের পর ইমাদ ওয়াসিমের সঙ্গে ৪০ বলে ৭১ রানের জুটিতে ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রেকথ্রু খুঁজে পেয়েছে, তবে নিয়মিত নয়।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানকে মোটামুটি দৃঢ় শুরু এনে দিয়েছিলেন ফাখার জামান ও ইমাম-উল-হক। দুজনই করেছেন ৪৪ রান করে, দুজনই শিকার হয়েছেন ইমরান তাহিরের। ফাখার অবশ্য ফিরতে পারতেন একটু আগেই, মরিসের বলে ডিপ-মিডউইকেটে ক্যাচ গিয়েছিল তাহিরের কাছেই। তবে অন-ফিল্ড আম্পায়ারের সফট সিগন্যাল নট-আউট থাকায় সেটা ওভারটার্ন করার মতো এভিডেনস খুঁজে পাননি টিভি আম্পায়ার।
তাহির ব্রেকথ্রু দিয়েছেন নিজের প্রথম ওভারেই। তাকে স্কুপ করতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েছেন ফাখার। ৫ ওভার পর তাহির নিয়েছেন নিজের বলে দারুণ ক্যাচ, এবার ফিরেছেন ইমাম। তার ক্যাচটা আম্পায়ার নাকচ করে দিয়েছিলেন, সেটাই যেন দারুণ বোলিং-ফিল্ডিংয়ে পুষিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি।
দ্রুত দুই উইকেটের চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ, তাদের ৪৫ রানের জুটি ভেঙেছেন পার্ট-টাইমার এইডেন মার্করাম, তাকে সুইপ করতে গিয়ে মিস করার পর এলবিডব্লিউ হয়েছেন হাফিজ।
৩০ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ছিল ৩ উইকেটে ১৪৩। এরপর পাকিস্তানকে নিয়ে উড়ান দিয়েছেন হারিস। রাবাদাকে দারুণ কাভার ড্রাইভে চার মেরে আক্রমণ শুরু করেছিলেন, তার পরের ওভারে চার-ছয় মেরে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিমিয়াম পেসারকে ছাড় দেওয়ার লক্ষণ দেখাননি তিনি। বাবর তার দায়িত্ব শেষ করেছেন ৮০ বলে ৬৯ করে, ফেহলুকওয়ায়োর বলে এনগিডির হাতে ক্যাচ দিয়ে।
এরপর আরও আক্রমণাত্মক হয়েছেন হারিস, সঙ্গে পেয়েছেন ইমাদ ওয়াসিমকে। শেষ হারিস ফিফটি ছুঁয়েছেন ৩৮ বলে, শেষ ওভারে গিয়ে টপ-এজড হয়ে ফিরেছেন এনগিডির বলে। তার আগের ওভারে ইমাদকে ফিরিয়েছিলেন তিনি, সঙ্গে ওয়াহাব রিয়াজকেও।