• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে বিদায়ও করে দিল ভারত

    ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে বিদায়ও করে দিল ভারত    

    লাইভস্কোর দেখুন এখানে


    ভারত ২৬৮/৭, ৫০ ওভার 
    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪৩ অল-আউট, ৩৪.২ ওভার
    ভারত ১২৫ রানে জয়ী 


    ওল্ড ট্রাফোর্ডে এদিন ছিল নীল রঙের আধিপত্য। ম্যানচেস্টারের রঙ হয়ে গিয়েছিল নীল। শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সে রঙ বিবর্ণ করার চেষ্টা করেছিল, আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের মতো। তবে আফগানিস্তানের মতো লড়াইটাও করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, .৯৪ বল বাকি থাকতেই হেরে গেছে তারা। এ হার দিয়ে বিশ্বকাপে টিকে থাকার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের পর তৃতীয় দল হিসেবে বিদায় নিল তারা। ভারতের সেমিফাইনাল অবশ্য নিশ্চিত হয়নি, তবে ৪ ম্যাচ বাকি রেখে তারা এগিয়ে গেছে অনেকটাই। 

    ম্যানচেস্টারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য এদিন সুখস্মৃতি হয়ে থেকেছে তাই শুধু কেমার রোচ ও জেসন হোল্ডারের বোলিং-ই। যে বোলিং সহায়তা করেছিল ভারতকে ২৬৮ রানে আটকে দিতে। বিরাট কোহলির ৭২, এমএস ধোনির ফিফটির সঙ্গে হারদিক পান্ডিয়ার ক্যামিওই শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হয়েছে ভারতের। 

    আর রানতাড়ায় শুরু থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরেছিল ভারত। শুরু থেকেই চাপ ধরে রেখেছিলেন শামি, গেইলকেও দেননি কোনও রুম। শর্ট বল করে তাকে নড়বড়ে করে দেওয়ার পর করেছেন শরীর বরাবর, সেটি পুল করতে গিয়ে মিড-অনে আলগা ক্যাচ দিয়েছিলেন গেইল। আমব্রিস-হোপের লড়াইটা ছিল টীকে থাকার, ৭ম ওভারে গিয়ে হোপের চারটাই ছিল বলতে গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসে প্রথম কমান্ডিং শট। তবে পরের বলেই শামির দারুণ সিম মুভমেন্টের শিকার হয়ে বোল্ড হোপ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের এদিনের নিয়তিটাই যেন ঠিক হয়ে গিয়েছিল তখনই।  

    আমব্রিস-পুরানের ৫৫ রানের জুটিই ছিল দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বোচ্চ, যে জুটি ভেঙেছেন পান্ডিয়া। পান্ডিয়া পা তাক করে বল করছিলেন আগে থেকেই, তবে উপযুক্ত লাইনটা খুঁজে পেয়েছেন ওভার দ্য উইকেটে এসে। আমব্রিস হয়েছেন এলবিডব্লিউ। 

     

     

    পেসারদের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরেছিলেন স্পিনাররা, বিশেষ করে কুলদিপ যাদব। ১০ ওভারের পরই প্রয়োজনীয় রানরেট ছয় ছুঁয়ে ফেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের, শেষ পর্যন্ত কমেনি সেটা। কুলদিপের চাপ আলগা করতে চেয়ে সীমানাছাড়া করতে গিয়েছিলেন পুরান, লং-অফে সহজ ক্যাচ ছাড়া আর কিছু দিতে পারেননি। হোল্ডার চেয়েছিলেন চাহালকে ইনফিল্ড ক্লিয়ার করে খেলতে, তার শট খুঁজে পেয়েছে শর্ট এক্সট্রা কাভারের ফিল্ডার। 

    এরপর ফাস্ট-ফরোয়ার্ড করে উইকেট গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বুমরাহর পরপর দুই বলে ফিরেছেন হোল্ডার ও অ্যালেন, প্রথমজন ধোনির ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নেওয়া দারুণ ক্যাচের শিকার, পরেরজন এলবিডব্লিউ। হেটমায়ার একদিকে টিকে ছিলেন, শামির বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। 

    চাহালকে কটরেল চারের পর বিশাল ছয় মেরেছিলেন একটা, তবে দুই বল পরই তিনি হয়েছেন এলবিডব্লিউ। ভারতের আত্মবিশ্বাসী বোলিং লাইন-আপের আধিপত্য ছিল এমনই।   

    ভারতের বোলাররা তাই ছাপিয়ে গেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসারদেরও, যারা শুরুতে এ উইকেটে করেছেন দারুণ উপযুক্ত বোলিং, খুঁজে পেয়েছেন উপযুক্ত লাইন-লেংথ। শুরুর আঘাতটা করেছিলেন রোচই। তার ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ইনসাইড-এজড হয়েছেন রোহিত, অন্তত টিভি আম্পায়ার ভেবেছেন তেমনই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়েছিল রিভিউ, বল ব্যাট-প্যাডে লেগেছিল প্রায় একই সঙ্গে, টিভি আম্পায়ার মাইকেল গফ সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেননি খুব একটা। রোহিত অবশ্য মানতে পারছিলেন না। 

    রোহিতের উইকেটের চাপ বেশ সামাল দিয়েছিলেন কোহলি-রাহুল। তবে ক্রমাগত দারুণ লাইন-লেংথে বোলিংয়ের পুরষ্কারটা প্রথম হোল্ডার পেয়েছেন রাহুলের উইকেট দিয়েই। রাহুল ব্যাট-প্যাডে শুধু ফাঁক রাখেননি, নিপড-ব্যাক বলটায় সামনে ঝুঁকবেন নাকি পেছনের পায়ে ভর করবেন সে অনিশ্চয়তার দোলাচলে পড়ে মোটামুটি আটকে ছিলেন ক্রিজে। সেটারই খেসারত দিয়েছেন বোল্ড হয়ে, ২ রানের জন্য ফিফটি মিস করে।

    রাহুলের ওপেনিংয়ে যাওয়া বিজয় শঙ্করকে এনেছে চার নম্বরে, তবে সে চাপটা এখনও সামাল দিতে পারেননি তিনি। রোচের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ক্রিজে আটকে থেকে খোঁচা দিয়েছেন তিনি। কেদার যাদবও টেকেননি বেশিক্ষণ, রোচের লাফিয়ে ওঠা লেংথ বল ড্যাব করতে গিয়ে তিনিও হয়েছেন কট-বিহাইন্ড। এ উইকেটও ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়েছিল রিভিউ নিয়ে, বেশ সূক্ষ্ণ এজড হয়েছিলেন তিনি। 

     

     

    সে ধরনের বড় জুটি না হওয়াটা চাপ বাড়িয়েছিল কোহলির ওপর। সঙ্গে এ বিশ্বকাপে ধোনির শ্লথগতির ইনিংস শুরুতে ইনিংসের গতি হোঁচট খেয়েছিল ভারতের। শুরুর দিকে একটু ধীরগতিতে থাকা কোহলি ৫৫ বলেই পূর্ণ করেছিলেন ফিফটি, এর আগেই দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে পূর্ণ করেছেন ২০ হাজার রান। হোল্ডারের প্রায় লং-হপ ধরনের বলে কোহলি আগেভাগেই শট খেলে ফেলে শর্ট মিডউইকেটে ধরা পড়েছেন, ৮২ বলে ৭২ রান করে। 

    ৪১তম ওভারে বোলিং শেষ হয়েছে হোল্ডারের, এর আগেই শেষ করে ফেলেছেন রোচ ও ফ্যাবিয়েন অ্যালেনও। তৃতীয় পাওয়ারপ্লেতে বৃত্তের বাইরে বাড়তি একজন ফিল্ডারের সুবিধা নিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ কাজ করেছে আগেও, এরপরই প্রথমবার বোলিংয়ে এসেছেন ব্রাথওয়েট। 

    হারদিক পান্ডিয়া ক্রিজের বেশ পেছনে থেকে ব্যাটিং করছিলেন, কটরেল অফস্টাম্পের বাইরে বোলিং করে তাকে শুরুতে সেভাবে হাত খুলে খেলতে দেননি। তবে ক্ষ্যাপাটে স্ট্রোকপ্লেতে পান্ডিয়া ঠিকই খেলেছেন ৩৮ বলে ৪৬ রানের ক্যামিও। 

    ধোনি শেষ পর্যন্ত তার ইনিংস মেরামত করেছেন শেষ ১০ বলে ২০ রান করে, প্রথম ৫১ বলে তিনি করেছিলেন মাত্র ৩৬ রান। ৪৯তম ওভারে পান্ডিয়ার পর মোহাম্মদ শামিকেও ফিরিয়েছিলেন কটরেল, তবে থমাসের শেষ ওভারে ধোনি তুলেছেন ১৬ রান। অবশ্য ধোনিকে শুরুতেই ফেরাতে পারতো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ফ্যাবিয়েন অ্যালেনের এক বলেই তিনবার তাকে আউটের সুযোগ মিস করেছিলেন শেই হোপ। ক্রিজ ছেড়ে অনেকদূর বেরিয়ে আসা ধোনিকে স্টাম্পিং করতে পারতেন হোপ, এমনকি প্রথমবার মিস করার পরও সুযোগ ছিল আরেকবার। সেটাও মিস করার পর তিনি হারিয়েছেন বাই চুরি করা ধোনিকে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রান-আউটের সুযোগও। 

    ধোনির ইনিংস শেষ পর্যন্ত ভারতের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে গুরুত্বপূর্ণ। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গেছে সে ইনিংসের গুরুত্ব বুঝে উঠার আগেই।