ভারতকে হারানোর আগে মাথায় রাখতে হবে যে পাঁচ কৌশল
ফর্ম, ইতিহাস কোনো কিছুতেই দুই দলের তুলনা হয় না। র্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বর দল ভারত যখন সেমিতে এক পা দিয়েই রেখেছে, বাংলাদেশকে সেই সম্ভাবনা ধরে রাখতে তাদের হারাতেই হবে। তবে সে কাজটা কঠিন বললেও কম বলা হয়। তারপরও বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে লড়াই করেছে দারুণ, সর্বশেষ যেটি ছিল এশিয়া কাপ ফাইনালে। কয়েকটা ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে।
কুলদীপ-চাহালদের সমাধান লিটনে
ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ যে ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ, তাতে লিটন দাসের সেঞ্চুরিটা অনেকটা সময় ম্যাচে রেখেছিল বাংলাদেশকে। ফাইনালে তো বটেই, ভারতের বিপক্ষেও বাংলাদেশের কারও সেটি ছিল সেরা ইনিংস। লিটনকে আবার ওপেনিংয়ে নিয়ে আসার ভাবনা আসতেই পারে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের। তবে এটা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের দুই স্পিনারকে দুর্দান্ত সামলেছিলেন লিটন। চাহালের ১৭ বলে তুলেছিলেন ১৮ রান। আর কুলদীপের বলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্টাম্পড হওয়ার আগে ২৩ বলে করেছিলেন ২৪। এজবাস্টনে কাল রয়-বেইরস্টোরা শুরুতেই ভারতের দুই স্পিনারকে যেভাবে এলোমেলো করে দিয়েছেন, একই কাজটা করতে পারেন লিটন। স্কয়্যার বাউন্ডারি খুবই ছোট বলে এখানে বাড়তি সুবিধাও পাবেন। আর ওয়ানডেতে ভারতের এই দুই রিস্ট স্পিনার একবারই খেলেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। এখানেও লিটন তার অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকতে পারেন কিছুটা। তাকে ওপেনিংয়ে না নামিয়ে মিডল অর্ডারে নামানোর চিন্তাও করতে পারে দল।
কেদার-শামুকে সাবধান
বিজয় শংকর না থাকায় এখন পাঁচজন বোলার নিয়েই নামবে ভারত। সেক্ষেত্রে আগের অভিজ্ঞতা থেকে কেদার যাদবের অকেশনাল স্পিন কাজে লাগাতে চাইতে পারেন কোহলি। দুই বছর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তামিম-মুশফিকের জুটিটা যখন বাংলাদেশকে বড় কিছুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন কেদারই এসে ভাঙলেন জুটি। শুরুতে তামিমকে ফেরালেন, এরপর ফেরালেন মুশফিককে। এবারও একই রকম কিছু যাতে না হয়, নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশকে।
বুমরাকে দেখে খেল
জাসপ্রিত বুমরা এবারের বিশ্বকাপে যেরকম বল করছেন, তাতে তাকে খেলাটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে তিন ম্যাচ খেলেছেন, তাতে এখন পর্যন্ত একবারও ওভারে পাঁচের বেশি রান দেননি। ডেথ ওভারে বুমরার ওভারে উইকেট না দিয়ে অন্য ওভারে কীভাবে আক্রমণ করা যায়, ইংল্যান্ডকে দেখে সেই শিক্ষা নিতে পারে বাংলাদেশ।
রোহিতকে ফেরাও শুরুতেই
এখন পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপে যে চার বার পঞ্চাশ পেরিয়েছেন রোহিত শর্মা, তার মধ্যে তিন বারই করেছেন সেঞ্চুরি। আর দুই বার আউট হয়েছেন বিশের নিচে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার রেকর্ডও অনেকটা একই প্যাটার্ন অনুসরণ করছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে ১২ ম্যাচ খেলেছেন, তাতে দুইটি ফিফটির সঙ্গে আছে দুইটি সেঞ্চুরিও। অথচ বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের প্রথম পাঁচ ম্যাচে রোহিতের স্কোর ছিল ২৬। এজবাস্টনে সেজন্য মোস্তাফিজুর রহমানকে দরকার হতে পারে বাংলাদেশের। ২০১৫ সালে তিন বার মোস্তাফিজের বলে আউট হয়েছেন রোহিত, যদিও পরে রোহিতকে আর আউট করতে পারেননি বাংলাদেশি পেসার। সমস্যা হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপে মাত্র একবার নতুন বলে উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ। রোহিতকে দ্রুত ফেরাতে হলে নতুন বলের রেকর্ড আরও ভালো করতেই হবে।
স্পিন যেন বুমেরাং না হয়
এখন পর্যন্ত ভারতের মিডল অর্ডার, বিশেষ করে ধোনি স্পিনের বিপক্ষে একদমই সুবিধা করতে পারেনি। তবে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপে সব ডান হাতি ব্যাটসম্যান, বাঁহাতি শুধু ছিলেন ঋশভ পান্ট। মেহেদী হাসান মিরাজ এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে খারাপ করেননি, তবে কাল তাকে দিতে হবে বড় পরীক্ষা। সেই সঙ্গে মোসাদ্দেকের অফ স্পিনও কতটা কার্যকরী হবে, সেটা নিয়ে আছে প্রশ্ন। এজবাস্টনের স্কয়্যারে ছোট বাউন্ডারিতে দুজন অফ স্পিনার না রেখে বাড়তি পেসার খেলানোর একটা বিকল্প ভাবতে পারে বাংলাদেশ।
এবং ভাগ্যটা পক্ষে থাকুক
যদি এজবাস্টনে কালকের উইকেটেই খেলা হয়, তাহলে আগে ব্যাট করা দল বেশ কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাবে। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে শুধু ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচেই টসে জিতেছে বাংলাদেশ। কাল ভাগ্যটা খুব করেই নিজের পক্ষে চাইবেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।